এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১৪ জুন : শ্বশুরবাড়ির প্রতিবেশী গাড়ি চালক মহম্মদ সাগর খানের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয় হিন্দু বধূ দীপা রানী পালের (২২) । ক্রমে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ৷ সাগর খানের মিথ্যে প্রেমের অভিনয়ে আকর্ষিত হয়ে, প্রেমিকের ডাকে সাড়া দিয়ে হাতের শাঁখা খুলে ও সিঁথির সিঁদুর মুছে বুধবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ৯টা দিকে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ওই বধূ । কিন্তু বধূ নিস্বার্থ প্রেমের বদলে পেয়েছিলেন চরম বিশ্বাসঘাতকতা । প্রেমিকসহ ৬ জন মিলে দীপা রানী পালকে রাতভর গনধর্ষণ করে । এরপর তাকে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ভোরে তিন যুবক শ্বশুরবাড়িতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় ।বধূর প্রেমিক শুধু গনধর্ষণের শিকার বানায়নি তাকে । খুলে নিয়ে তার সোনার কানের দুল,গলার হার ও হাতের সোনার বালা । এদিকে স্বামী,দুই শিশুসন্তান ও পরিবারের সাথে নিজের চরম বিশ্বাসঘাতকতায় আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকা ওই বধূ শ্বশুরবাড়ি আসার কয়েক ঘণ্টা পর ঘরের সিলিংয়ের হুকের সঙ্গে ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন । বধূর ৫ বছর বয়সী জমজ ছোট্ট দুুটি শিশুসন্তানকে সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারকে ।
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার মৈশালা (পালপাড়া) গ্রামের গৃহবধূ দীপা রানী পাল (২২)। দুই পুত্র সন্তানের জননী । পরিবার সূত্রে জানা যায়, মৈশালা (পালপাড়া) গ্রামের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী মিঠুন পালের সাথে ৬ বছর আগে দীপা রানী পালের দেখাশোনা করে বিয়ে হয়। তাদের পাঁচ বছর বয়সী যমজ দুইটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল। পরিবারে অর্থের অভাব ছিল না । একমাত্র শাশুড়ি সাধনা রানী পালের সাথে দীপার খুব ভালো সখ্যতাও ছিল।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন ধরে দীপা পাশের এলাকার গাড়ি চালক মহম্মদ সাগর খানের সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত বুধবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ৯টায় কাউকে কিছু না বলে সাগরের ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ির বাইরে বেড় হন তিনি। সাগর প্রলোভন দেখিয়ে দীপাকে বাড়ি থেকে কিছু দূরে নিয়ে যায়। দীপার স্বামী মিঠুন পাল ও শাশুড়ি সাধনা রানী বাড়ির বাইরে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। ঘণ্টা দুই পরে মহম্মদ সালাম, মহম্মদ মাসুদ ও মহম্মদ শাহাদাত নামের তিন যুবক মিঠুন পালের বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডাকতে থাকে। কিন্তু মিঠুন তখন স্ত্রী দীপাকে খুঁজতে বের হওয়ায় সেই সময় বাড়ি ছিলেন না। শাশুড়ি সাধনা রানী তাদের বলেন, মিঠুন বাড়ি নেই। এ সময় ওই তিন যুবক তার কাছে বৌমা কোথায় জানতে চাইলে তিনি (শাশুড়ি) জানালা বন্ধ করে দেন। মিঠুন বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রীকে (দীপা) না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। রাত ১টার দিকে একটা ফোন নম্বার থেকে মিঠুনকে ফোন করে টাকা দাবি করে ।
জানা গেছে, দীপার প্রেমিক সাগর খানের প্রলোভনে বাড়ি ছাড়ার কিছু সময় পরে ওই তিন যুবকরা (মহম্মদ সালাম, মহম্মদ মাসুদ ও মহম্মদ শাহাদাত) দীপাকে একটা জায়গায় আটকে রাখে । এ সময় শাহাদাতকে সাগর ও দীপার কাছে রেখে সালাম ও মাসুদ দীপার শ্বশুর বাড়ি চলে আসে। দীপার স্বামী মিঠুনের কাছ থেকে টাকা না পেয়ে তারা ফিরে যায়। পরে তারা মোটরসাইকেলে দীপাকে কালুখালী উপজেলার কোনো এক গোপন স্থানে নিয়ে গিয়ে গনধর্ষণ ধর্ষণ করে। তাদের সঙ্গে আরও দুই অজ্ঞাত ব্যক্তি যোগ দেয়। ৬ জনের পাশবিক নির্যাতনে দীপা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় তার কানের সোনার দুল,গলার হার, হাতের শাখা ও নগদ অর্থ নিয়ে নেয় তারা। সকাল হওয়ার আগেই দীপাকে তার শ্বশুরবাড়িতে ফেলে দিয়ে যায় ওই তিন যুবক। মনে করা হচ্ছে যে দীপা নিজের সম্ভ্রম হারিয়ে ও পরিবারের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতক করার জন্য আত্মগ্লানিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে৷
এদিকে পরেরদিন ভোরে দীপা রানী পালকে বাড়িতে রেখে যাওয়া তিন যুবকের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের অবস্থান জানতে চাইলে তার জানেন না বলে জানিয়েছে । তবে প্রেমিক সাগর খানের মা নতুন গল্প ফাঁদেন । তার দাবি, তাদের ছেলের কাছ থেকে মেয়েটাকে কেড়ে নিয়ে যায় ওই তিন যুবক। এমনকি তারা তাদের ছেলেকে মেরে টাকা-পয়সাও কেড়ে নিয়েছে। তাদের কারণেই ওই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এ ঘটনার দুইদিন পরে শুক্রবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় মৃত দীপা রানীর (নিহত) বাবা পাংশা মডেল থানার মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলে মহম্মদ সাগর খান, মহম্মদ সালাম, মহম্মদ মাসুদ ও মহম্মদ শাহাদাতের নাম উল্লেখসহ ২-৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা রজু করেছেন । পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, দীপার পিতা বাদী হয়ে মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২-৩ জনকে অজ্ঞাত করে এজাহার দায়ের করেছেন। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আসামিদের মধ্যে যেকোনো একজনকে গ্রেপ্তার করতে পারলে সত্য বেরিয়ে আসবে।।

