এইদিন ওয়েবডেস্ক,গুয়াহাটি,১৩ জুন : আসামে নববৈষ্ণব ধর্ম সম্প্রদায়ের ১৫,২৮৮.৫২ বিঘারও বেশি জমি জবরদখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করলে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা । তিনি আজ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন । পোস্টার আকারে লেখা ওই পরিসংখ্যানের শিরোনাম দিয়েছেন “অবিশ্বাস্য, কিন্তু সত্য” । তাতে বলা হয়েছে,বাজালি,কামরূপ,নগাঁও, ব্যাঙ্গালোর,লখিমপুর,মাজুলি,ডিব্রুগড়,ধুবুর,বারপেটা ও কামরূপ জেলা মিলে নববৈষ্ণব ধর্মের ১৫,২৮৮.৫২ বিঘারও বেশি জমি জবরদখল হয়ে গেছে ।
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন,’আসামে নববৈষ্ণব ধর্মের প্রসারের জন্য মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব এবং শ্রী শ্রীমাধবদে কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সত্র একটি চির-উজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান। আসামের সত্রগুলি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপের কেন্দ্র; এখানে বিভিন্ন ধরণের নৃত্য রয়েছে যেমন বর্গিত, সত্রিয় নৃত্য, চালি নৃত্য, ঝুমুরা নৃত্য, দশাবতার নৃত্য ইত্যাদি, পাশাপাশি পুরাতন বই এবং ঐতিহাসিক সম্পদের ভাণ্ডারও রয়েছে। সত্রগুলি কেবল মঠ নয়, ঐতিহ্যবাহী শিল্পের কেন্দ্রও। কিন্তু এখন আমাদের গর্ব এই সাতরাগুলি এক বিরাট সংকটের মুখোমুখি।’
তিনি আরও লিখেছেন,’আসাম সাতরা ভূমি সমস্যা পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত কমিশন (ASLS) জানিয়েছে যে আসামে সাতরাদের ১৫,২৮৮.৫২ বিঘারও বেশি জমি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে। শুধুমাত্র বরপেটা জেলাতেই ৭,১৩৭ বিঘা জমি রয়েছে। বাজালি, নগাঁও, লক্ষ্মীপুর, ডিব্রুগড়, কামরূপ, বঙ্গগাঁও, মাজুলি এবং ধুবড়ি জেলায় জমি দখলের হার বেশি। এটাই সত্য, এটাই ভয়াবহ বাস্তবতা। আমরা আমাদের মর্যাদা, আমাদের সংস্কৃতি রক্ষায় সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা প্রতিটি সাতরা পুনরুদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ চালিয়ে যাব, আমাদের কেবল আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
নববৈষ্ণব ধর্ম কি?
নববৈষ্ণব ধর্ম হল ১৫-১৬ শতকে শ্রীমন্ত শঙ্করদেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বৈষ্ণব ধর্মের একটি রূপ। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ছিলেন একজন ধর্মীয় সংস্কারক, যিনি আসামে বৈষ্ণব ধর্মের পুনরুজ্জীবন ঘটান । এই ধর্ম প্রচারের জন্য শঙ্করদেব বিভিন্ন কাব্য, নাটক, গদ্য রচনা করেন, যা অসমীয়া সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে । এটি একসরণ ধর্ম নামে পরিচিত, যেখানে ভক্তি এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়, অন্যান্য বৈদিক আচার-অনুষ্ঠান কম গুরুত্ব পায় । এই ধর্মে শুধুমাত্র বিষ্ণুর প্রতি ভক্তি ও উপাসনার উপর জোর দেওয়া হয়। ভক্তি প্রকাশের মূল মাধ্যম হল কীর্তন (গান) ও শ্রাবণ অর্থাৎ শোনা । এই ধর্ম অসমীয়া সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন বরগীত, সত্রীয়া নৃত্য ইত্যাদি । নববৈষ্ণব আন্দোলন আসামে একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব সৃষ্টি করে, যা জাতি, ধর্ম ও লিঙ্গ নির্বিশেষে মানুষকে একত্রিত করে।
সত্র কি ?
আসামের নববৈষ্ণব ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য “সত্র” নামে প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছিল । সত্রগুলি শুধু ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, সেগুলি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে, যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্য পালন করা হয় । নববৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব আসামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গভীর, যা আজও বিদ্যমান ।।

