এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১১ জুন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী দিনে সাইপ্রাস এবং ক্রোয়েশিয়া সফর করবেন। কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের আগে এই সফর হবে। কানাডা যাওয়ার পথে তিনি এই দুটি দেশই সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সাইপ্রাস সফরকে তুরস্কের প্রতি ভারতের জবাব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
আগামী বছর (২০২৬) সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের সভাপতিও হতে চলেছে, যা এই সফরকে আরও বিশেষ করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সাইপ্রাস সফরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ অতীতে তুরস্ক প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর আগে কেবল অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং ইন্দিরা গান্ধী সাইপ্রাস সফর করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী কেন সাইপ্রাস যাচ্ছেন?
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাইপ্রাস সফরের অনেক কারণ রয়েছে। ভারত ইউরোপে তার পরিচয় এবং সম্পর্ক বাড়াতে চায়। সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য সাইপ্রাসের সাথে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে, ভারত তুরস্ককে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চায়। তুরস্ক আর সাইপ্রাসের সম্পর্ক খুবই তিক্ত ।
এছাড়াও, সাইপ্রাস সর্বদা কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ভারতকে সমর্থন করে এসেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী আসন, নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ (এনএসজি) এর সদস্যপদ এবং ১৯৯৮ সালের পারমাণবিক পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতেও সাইপ্রাস ভারতকে সমর্থন করেছে।
সাইপ্রাস সম্প্রতি পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে পাকিস্তান থেকে সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি উত্থাপনের ইঙ্গিত দিয়েছে । সাইপ্রাসকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুরস্ক সাইপ্রাসের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত
বহু দশক ধরে তুরস্ক এবং সাইপ্রাসের মধ্যে গভীর বিরোধ রয়েছে। ১৯৭৪ সালে তুরস্ক সাইপ্রাসের উত্তর অংশ আক্রমণ করে দখল করার সময় এই বিরোধ আরও তীব্র হয়। তুরস্ক এই অংশটিকে ‘তুর্কি প্রজাতন্ত্রের উত্তর সাইপ্রাস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে, অন্য কোনও দেশ এটি মেনে নেয়নি।
এছাড়া, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের অধিকার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ক্রমাগত উত্তেজনা রয়েছে। ভারত সর্বদা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রস্তাব অনুসারে সাইপ্রাস সমস্যার সমাধানকে সমর্থন করেছে।তারা পাকিস্তানকে ড্রোন সহ অনেক অস্ত্র দিয়েছে, যা ভারতের উপর প্রয়োগ করা হয়েছিল।
সাইপ্রাস তুরস্কের জন্য একটি বেদনাদায়ক স্থান, তাই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাইপ্রাস সফর তারা মোটেও পছন্দ করবে না। পহেলগাম আক্রমণ এবং অপারেশন সিন্দুরের সময় তুরস্ক প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল এবং তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ এরদোগান নিজেই এই সমর্থন প্রকাশ্যে প্রকাশ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত,সাইপ্রাস যে খুব কম অংশীদারদের উপর আস্থা রাখতে পারে, ভারত তার মধ্যে একটি। সাইপ্রাসও ভারতের মত বিদেশী হানাদারদের দ্বারা প্রভাবিত একটা দেশ । শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নৃশংস তুর্কি দখলদারিত্ব এবং ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশীদের আংশিক দখলদারিত্বের শিকার ।সাইপ্রাস ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে কিন্তু গ্রীক ও তুর্কি সাইপ্রিয়টদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হয় । ১৯৭৪ সালে তুর্কি সামরিক আক্রমণের ফলে উত্তর সাইপ্রাস তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। বর্তমানে ইসরায়েল থেকে সাইপ্রাস হয়ে গ্রীস ও ইতালিতে একটি “ভবিষ্যতের” তেল পাইপলাইনের বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে । কাগজে কলমে কাজ এগিয়েও গেছে । সৌদি আরবের তেল ও গ্যাসও এই পাইপলাইনে সরবরাহ হতে পারে । এই পাইপলাইনে অন্তর্ভুক্ত সকল দেশের সাথে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে ভারতের ।।

