এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৬ জুন : রথযাত্রার আগেই দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে প্রসাদ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । সেই প্রসাদে থাকবে নির্দিষ্ট মাপের একটা করে গজা ও একটা করে প্যাড়া । সেই প্রসাদের নামে “হিন্দু” রেশন ডিলাদের মাধ্যমে তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার দোকান থেকে ওই মিষ্টান্ন কিনে “হিন্দু” পরিবার পিছু ২০ টাকা মূল্যের একটা করে ছোট প্যাকেট বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে হিন্দু ভোট টানতে গিয়ে হিন্দুদের আস্থায় আঘাত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা । পাশাপাশি তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘ক্ষমতা থাকলে জমজমের পানির নাম দিয়ে ভাইপোর ‘লিপস এন্ড বাউন্সের জলের ফ্যাক্টরি থেকে জলের প্যাকেট বিতরণ করে দেখান’ ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘার মন্দিরের দ্বারোদঘাটন করে জানিয়েছিলেন, মন্দিরের প্রসাদ বাংলার প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে।
সেই মতোই প্রস্তুতি চলছিল। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির সঙ্গে নবান্নে বৈঠক করেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। সেই বৈঠকে কীভাবে প্রসাদ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। নবান্ন সূত্রে খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আগামী ২৭ জুন রথযাত্রার আগে প্রসাদ বিতরণের কাজ শেষ করে ফেলতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যদি কাজ শেষ না হয়, তবে উল্টোরথের আগে, ৪ জুলাইয়ের মধ্যে তা শেষ করতেই হবে।
এদিকে সরকারের তরফে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে আদপে কি প্রসাদ বিলি হতে চলেছে তার “পর্দাফাঁস” করতে আজ শুক্রবার দুপুরে কলকাতায় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে করেন শুভেন্দু অধিকারী । প্রসাদ বিলি নিয়ে রাজ্য সরকার সার্কুলার ও প্রসাদের সম্ভাব্য প্যাকেটের ছবিও সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তিনি । শুভেন্দু অধিকারী বলেন, সম্প্রতি বহুল চর্চিত খাতায়-কলমে শ্রী জগন্নাথ কালচারাল সেন্টার, কখনো ভাষণে জগন্নাথ মন্দির আবার ঠেলায় পড়ে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং মন্দিরকে সরিয়ে রেখে শ্রী জগন্নাথ ধাম উদ্বোধন এই নানা রঙ্গ আমরা দেখেছি মহাপ্রভু জগন্নাথ কে কেন্দ্র করে ।
আজকে আমার সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে যে আবার তিনি পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের আস্থায় আঘাত করার জন্য একটা প্যাকেট তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন । এই প্যাকেটটা তৈরি হচ্ছে । এই প্যাকেটটার দাম কুড়ি টাকা৷ একটা গজা ও একটা প্যাড়া৷ প্যাড়া বা গজা খাওয়ানোতে আমার আপত্তি নাই৷ কুড়ি টাকা বরাদ্দেতেও আমার আপত্তি নাই কারণ ওনার কোষাকার তো শুন্য । সাত লক্ষ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন৷ আমার আপত্তিটা হল শ্রী জগন্নাথ দেবের প্রাসাদ বলে ওনার হাসিমুখের ছবি ও সরকারি টাকায় দীঘাতে তৈরি ভাস্কর্যের ছবি ছাপা মিষ্টির প্যাকেট বিতরণ নিয়ে ।’
সরকারি সার্কুলার দেখিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এই সার্কুলারটা জেলাশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে । জেলাশাসক সেগুলো এসডিও, বিডিওদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি । এসডিও, বিডিওরা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে । তাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জগন্নাথ ধাম কালচারাল কমপ্লেক্সের উদ্বোধনের জন্য প্রতিটি ঘরে ঘরে মিষ্টির প্যাকেট বিতরণ করতে হবে । উত্তর ২৪পরগনা জেলার দশ লাখ পরিবার,
প্যাকেটে থাকবে মন্দিরের ছবি এবং দুটো করে মিষ্টি । সব জেলাতেই একই প্যাকেট বিতরণ করা হবে৷ আর এই মিষ্টি দুয়ারে রেশনের মাধ্যমে দিতে বলেছে । লোকাল মিষ্টির দোকানে অর্ডার দিতে বলা হয়েছে । দীঘা থেকে প্যাকেট আসছে না ।’
মিষ্টির সরকারি মাপ ও ওজন
বিরোধী দলনেতার কথা অনুযায়ী, সার্কুলারে প্যাড়া ও গজার মাপ ও ওজনও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে । তিনি জানান, প্যাড়া হবে ধুধ ও খোয়া ক্ষির দিয়ে তৈরি এবং হলুদ রঙের হতে হবে । ২০ গ্রাম ওজনের প্রতি প্যাড়া হবে ৪.৮ সেন্টিমিটারের লম্বা এবং ১.১ সেন্টিমিটার পুরু । প্রতিটি ৬০ গ্রাম গজার দৈর্ঘ্য ৩.২ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ৩.১ সেন্টিমিটার মাপের করতে হবে । এভাবে মিষ্টি করে স্থানীয় মিষ্টির দোকানগুলি থেকে কুড়ি টাকার মধ্যে প্যাকেট করতে বলেছে বলে তিনি জানান।
দুয়ারে রেশনের মাধ্যমে হিন্দু ডিলারদের দিয়ে হিন্দু পরিবারগুলিকে প্রসাদ বিতরণের নির্দেশ
শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন যে দুয়ারে রেশনের মাধ্যমে হিন্দু ডিলারদের দিয়ে হিন্দু পরিবারের মধ্যে ওই প্রসাদ বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার । এই বিষয়ে তিনি বলেন,’নবান্ন থেকে জেলাশাসকদের কাছে যে গাইড লাইন গেছে তাতে বলা হয়েছে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ হিসেবে বিডিও এবং মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যানরা গজা এবং প্যারা লোকাল রেপুটেড মিষ্টির দোকান থেকে দুটো প্লাস্টিক জিপ প্যাকেটে ভরে দুয়ারে রেশন প্রকল্পে যেভাবে রেশন বিলি হয়, সেইভাবে এই মিষ্টিগুলো তারা দীঘা কালচারাল ইনস্টিটিউটের ছবিকে জগন্নাথ মন্দির নাম দিয়ে প্যাকেট করে হিন্দু ডিলারদের মাধ্যমে সকল হিন্দুদের বাড়িতে ১৭ই জুন থেকে ২৭ শে জুনের উর্ধে ৪ জুলাই উল্টো রথের মধ্যেই বিতরণ করতে হবে ।’ তিনি জানান, এই বিষয়ে ৪/৬/২০২৫ তারিখে একটা
আর্জেন্ট মিটিং হবে ৷ পরে ৯/৬/২০২৫ তারিখে আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির মিটিং হলে সমস্ত রেশন ডিলারদের নিয়ে মিটিং হবে ।
তিনি বলেন,’কুড়ি টাকার প্রসাদ, তার মধ্যে একটা প্যারা এবং একটা গজা । এটাকে নাম দেওয়া হচ্ছে প্রসাদ । কত বড় আস্থায় আঘাত । যদি প্রকৃত হিন্দু হয়ে থাকেন এটা মমতা ব্যানার্জির প্যারা এবং গজা হিসেবে নেবেন, প্রসাদ হিসেবে কেউ নেবেন না । ঘরে ঘরে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ ১৭ই জুন থেকে ৪ঠা জুলাই দুয়ারে রেশন প্রকল্পের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে । দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের ছবি সহ প্যাকেট পৌঁছে যাবে । এটা হিন্দুদের আস্থা আঘাত নয় ?’
শুভেন্দু অধিকারীর চ্যালেঞ্জ
শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন,’মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আপনার দুটো চোখ যদি খোলা থাকে তাহলে জমজমের পানি আপনার ভাইপোর লিপস এন্ড বাউন্সের জলের ফ্যাক্টরি থেকে প্যাকেট বানিয়ে পাঠাতে পারবেন ? এখনতো পবিত্র হজ চলছে । জমজমের পানি বলে জল ঢুকিয়ে পাঠাতে পারবেন ? এটা কোন সাম্প্রদায়িক বক্তব্য নয় । বক্তব্যটা হচ্ছে হিন্দুদের অস্থায় আঘাত করা । প্রসাদের নামে স্থানীয় দোকান থেকে প্যারা এবং গজা ঢুকিয়ে রেশন ডিলারদের বাধ্য করিয়ে হিন্দুদের ভোটকে বিভাজিত করার জন্য তিনি কেবলমাত্র হিন্দু ধর্মের উপরে বারে বারে এই ধরনের আঘাত করেন । যার আমরা বিরোধিতা করি ।’
সবশেষে বিরোধী দলনেতা বলেন,’আমরা এটার পর্দাফাঁস করলাম । মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যাচার, হিন্দুদের আস্থায় আঘাত ৷ চরম মিথ্যাচার । এই সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী হিন্দু বিরোধী । হিন্দুদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য, হিন্দুদের আস্থা আঘাত আনার জন্য তিনি এই মিথ্যাচারের ছক কষেছেন । আপনারা বাংলার মানুষ গজা প্যারা নিতে পারেন, তবে যদি পচে না যায় । কিন্তু প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করবেন না ।’।

