ইসলামের নবি সম্পর্কে নাকি আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন হরিয়ানার গুরুগ্রামের ১৯ বছরের তরুনী সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার শর্মিষ্ঠা পানোলি । দাবি করা হচ্ছে যে পাকিস্তানের করাচি ভিত্তিক ‘স্কাই ফাউন্ডেশন’ নামে একটা সংগঠনের তরফে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে শর্মিষ্ঠাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । কলকাতার গার্ডেন রিচ থানায় পুলিশ গত ১৫ মে দায়ের করা ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশ ১৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গুরুগ্রাম থেকে তাকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করে । রাতারাতি বিমানে তাকে কলকাতায় আনা হয় । শনিবার আলিপুর আদালতে হাজির করা হয় ওই ছোট্ট মেয়েটিকে । কিন্তু মেয়েটির সঙ্গে পুলিশের যে প্রকার আচরণ মিডিয়ার ক্যামেয় ধরা পড়েছে তাতে অনেকে বাকরুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ । ছোট্ট শর্মিষ্ঠার সঙ্গে কার্যত “সন্ত্রাসী” র মত আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন অনেকে । ফলে এমনিতেই “বদনাম” পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ গোটা দেশের কাছে এরাজ্যের মাথা হেঁট করে দিয়েছে ! বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন পুলিশকে । শর্মিষ্ঠা পানোলিকে গ্রেপ্তারির মামলায় নিচে মিস্টার সুধাংশু নামে এক বুদ্ধিজীবীর প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হল :
শর্মিষ্ঠাকে প্রিজন ভ্যানে তোলার মুহুর্তের ছবি পোস্ট করে এক্স-এবমিস্টার সুধাংশু লিখেছেন,এই ছবিটা সারা জীবন মনে থাকবে। “শর্মিষ্ঠাকে আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যেন সে একজন সন্ত্রাসী… আর যে মৌলানা দেশকে গালি দেয় তাকে ‘বুদ্ধিজীবী’ বলা হয়?” বাংলার পুলিশ এখন মমতা দিদির নির্দেশে কাজ করে, আইনের নয় – এবং দেশপ্রেম সেখানে সবচেয়ে বড় অপরাধ।
পুলিশ যখনই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে শর্মিষ্ঠা পানৌলিকে কলকাতার আলিপুর আদালতে হাজির করে, তখনই দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিক হতবাক হয়ে যায়। যে দৃশ্য দেখা গেল তা একজন ভয়ঙ্কর অপরাধীর জন্যও অত্যধিক ছিল – চারদিকে পুলিশ, মিডিয়া থেকে দূরত্ব, এবং একটি মেয়ে যে কেবল বলে, “আমি আমার দেশের অপমান সহ্য করতে পারি না।”
এবার ভাবুন, দেশপ্রেম কি অপরাধ হয়ে উঠেছে?শর্মিষ্ঠার একমাত্র অপরাধ ছিল যে তিনি পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়েছিলেন। একজন পাকিস্তানি অভিনেত্রী ভারতকে উপহাস করেছিলেন, ভাড়া বাড়ি নিয়ে ভারতকে কটূক্তি করেছিলেন, এবং শর্মিষ্ঠা তার জবাব দিয়ে ভারতের সম্মান রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু মমতা সরকার এটি পছন্দ করেনি, কারণ তাদের রাজনীতি ‘মুসলিম তোষণ’-এর চারপাশে আবর্তিত হয়।
এটি সেই একই বাংলা যেখানে মুর্শিদাবাদে দাঙ্গা শুরু হলে পুলিশ চুড়ি পরে লুকিয়ে ছিল। ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল – পুলিশরা তাদের বাড়িতে লুকিয়ে ছিল, হিজাব পরেছিল, দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে তাদের জীবন বাঁচাচ্ছিল। আর আজ, সেই পুলিশ হঠাৎ এত সাহস পেয়েছে যে তারা একটি জাতীয়তাবাদী মেয়েকে আদালতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে যেন তারা লস্কর-ই-তৈয়বার একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে ধরেছে? আমরা শুনেছিলাম “যাকো রাখে সায়াঁ, মার সাকে না কোই” কিন্তু মমতার শাসনামলে সেই কথাটি বদলে গেল – “জো দেশ কে লিয়ে বোলে, ও জেল মে খোলে।”
এখন একটু পিছনে ফিরে যাই – ব্যাপারটা কী?
পাকিস্তান এবং মৌলবাদী চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে ক্রমাগত সোচ্চার থাকা সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী শর্মিষ্ঠা পানাউলি পাকিস্তানি অভিনেত্রী বুশরা আনসারির একটি বক্তব্যের উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন। বুশরা বলেছিলেন, “ভারতীয় মুসলিমরা মুম্বাইতে বাড়ি পায় না, তারা গরীব।” শর্মিষ্ঠা স্পষ্টভাবে বলেছিলেন – “এটা ভারত, এখানে সন্ত্রাসীরা আশ্রয় পায় না, তারা শিক্ষা পায়।” এই লাইনটি কিছু ইসলামিক সংগঠন এবং টিএমসি নেতাকে আঘাত করেছিল। এবং সঙ্গে সঙ্গেই বাংলায় তার বিরুদ্ধে এফআইআর, গ্রেপ্তার এবং আদালতে হাজিরার নাটক শুরু হয়।
এবার বলুন তো, কাশ্মীরে যখন শহীদদের নিয়ে ঠাট্টা করা হয়, তখন সেনাবাহিনীকে ধর্ষক বলা হয়, কোনও এফআইআর দায়ের করা হয় না। কিন্তু যখন কোনও মেয়ে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।এটি ‘গণতন্ত্রের মমতা মডেল’ – যেখানে প্রকৃত সন্ত্রাসীরা মৌলানা আজাদের নামে ঘুরে বেড়ায় এবং দেশপ্রেমিকরা জেলে যায়।
বাংলায় এটি প্রথমবার নয়। ২০২৩ সালেও, যখন একজন স্কুল ছাত্রী ‘জয় শ্রী রাম’ বলেছিল, তখন ধর্মনিরপেক্ষ দলটি তার উপর থুতু ফেলেছিল। যখন একজন হিন্দু শিক্ষক ‘সাভারকর জয়ন্তী’ উদযাপন করেছিলেন, তখন তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এই সবই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে প্রোথিত একই মানসিকতার ফলাফল – “যদি একজন হিন্দু কথা বলে, তাহলে তা অপরাধ; যদি একজন মুসলিম কথা বলে, তাহলে তা অধিকার।”
এখন প্রশ্ন উঠছে – শর্মিষ্ঠা কি কোনও অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছিলেন? কোনও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন? না। তিনি কেবল পাকিস্তান এবং তার মানসিকতার উপর আক্রমণ করেছিলেন। তাহলে কি পাকিস্তানকে গালি দেওয়া এখন ভারতে অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে?
একবার ভাবুন, যদি একই বক্তব্য কোনও ওয়াইসির সমর্থক দিতেন, তিনি যদি বলতেন “আরএসএস কো মিটা দেঙ্গে”, তাহলে কি বাংলা পুলিশ তাকে এভাবেই গ্রেপ্তার করত? না। মমতা সরকার নিজেই বলেছিলেন যে “বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের ভাই।” মৌলবাদীদের প্রতিটি নাটকে একই মমতা সরকার নীরব থাকে, কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক মহিলাকে খলনায়ক করে তোলে।
আজ শর্মিষ্ঠার কথা শুনে আমার একটা পুরনো কথা মনে পড়ে গেল – “সত্যের ক্ষতি করা যায় না?” কিন্তু এখন সরকার নিজেই সেই ক্ষতি করতে শুরু করেছে। মিথ্যার ব্যবসায়ীরা, ভোট ব্যাংকের দোকান চালানো রাজনীতিবিদরা এখন যারা সত্য বলে তাদের ‘হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে। মিডিয়ার অবস্থাও দেখুন। নাসিরুদ্দিন শাহের কান্নার উপর প্রাইমটাইম চালানো চ্যানেলগুলিই শর্মিষ্ঠার খবরকে ‘ঘৃণা-প্রবণ’ হিসেবে দেখাচ্ছে। কারণ টিআরপির বাজারে সত্য বিক্রির জন্য নয়, বরং এজেন্ডা বিক্রির জন্য।
আর শর্মিষ্ঠার মামলা কেবল একটি মামলা নয়, এটি একটি সংকেত – এখন দেশপ্রেমকে অপরাধ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ যদি আমরা চুপ থাকি, কাল যদি কোনও শিশু তেরঙ্গা উত্তোলন করে, তার বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে।বাংলায় আইনের শাসন নেই, কেবল “দিদির ভয়” বিরাজ করছে। পুলিশ তৃণমূল কংগ্রেসের এজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করে। ‘আল্লাহ হো আকবর’ বললে মালা পাওয়া যাবে; ‘ভারত মাতা কি জয়’ বললে লাঠি পেটা হবে। বাংলার মুসলমানদের বুঝতে হবে যে মমতা তাদের কেবল ভোটের জন্য ব্যবহার করছেন। আর হিন্দুদের বুঝতে হবে যে যদি তারা এখন কথা না বলে, তাহলে আগামী প্রজন্ম ‘বন্দে মাতরম’ বলতেও ভয় পাবে।
আজ, শর্মিষ্ঠা একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে – সেই কণ্ঠস্বরের যে বলে “ভারত কোনও ধর্মশালা নয় যে পাকিস্তানের অপমান সহ্য করবে ।” আর যারা তাকে চুপ করাতে চায়, তারা আসলে ভারতকে চুপ করাতে চায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে রাখতে হবে যে যারা দেশপ্রেমকে বাধা দেয়, তারাই ইতিহাসে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে অভিহিত । সে মির্জা রাজা যিনি ব্রিটিশদের সমর্থন করেছিলেন অথবা আজকের যে কোনও তৃণমূল নেতাই হোন।
এখন সময় এসেছে আওয়াজ তোলার। আজ যদি শর্মিষ্ঠাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আগামীকাল প্রতিটি জাতীয়তাবাদীর ঘাড়ে ক্ষমতার বুট চাপানো হবে। বাংলার জনগণকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কি পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলা লোকদের পাশে দাঁড়াবে, নাকি সেই কন্যার পাশে দাঁড়াবে যে তার দেশের মর্যাদার জন্য আওয়াজ তুলেছিল।
আর সবশেষে একটা কথা —“যখন বিভীষণ রাবণের দরবারে একা ছিলেন, তখন তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলা হয়েছিল…কিন্তু যখন রামের সেনাবাহিনী আক্রমণ করে, তখন সেই বিভীষণই রক্ষাকর্তা হয়ে ওঠেন।” আজ শর্মিষ্ঠাকে নির্যাতন করা হচ্ছে, মামলা চলছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন — যখন এই শক্তির পরিবর্তন হবে, তখন সেই একই শর্মিষ্ঠাকে ভারতের ‘সোনার কণ্ঠস্বর’ বলা হবে। ভারত মাতা কি জয়।’।

