এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩১ মে : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্ত্রীকে সিঁদূর পরানো নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ব্যক্তিগত আক্রমণের পালটা প্রতি আক্রমণ শুরু করেছে বিজেপি । বিজেপি নেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচি গত ২৯ মে প্রাক্তন স্বর্গীয় আইএএস দীপক কুমার ঘোষের একটা চিঠি এক্স-এ পোস্ট করেছেন । ৩০.০৪.২০১২ তারিখের ওই চিঠিটি লেখা হয়েছিল তৎকালীন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় চেয়ারপার্সন মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে । যেখানে মমতা ব্যানার্জির বৈবাহিক জীবন নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলা হয়েছিল । ওই পোস্টে কৌস্তভ লিখেছেন,’প্রত্যেকটি কাজেরই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে” আমি এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর লেখা একটি বই “দ্য গডেস দ্যাট ফেইলড” -এর ৭ম অধ্যায় থেকে একটি অংশ পোস্ট করছি। এটি তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত দীপক কুমার ঘোষের লেখা। উত্তরগুলি কেবল তিনিই জানেন। “প্রত্যেকটি কাজেরই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে” আমি এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর লেখা একটি বই “দ্য গডেস দ্যাট ফেইলড” -এর ৭ম অধ্যায় থেকে একটি অংশ পোস্ট করছি। এটি তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত দীপক কুমার ঘোষের লেখা। উত্তরগুলি কেবল তিনিই জানেন।’ এছাড়া তিনি অন্য পোস্টে দীপক কুমার ঘোষের আরও চারটি বাংলা পুস্তকের মলাট শেয়ার করেছেন । যেগুলি হল : “মিথ্যাশ্রী”, ” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে যেমন দেখেছি”, “সাদা মমতা কালো মমতা” এবং “আপনার অনুপ্রেরণায় সঙ্কলিত এই পুস্তিকার প্রশ্নগুলির উত্তর দেবেন কি ?” ।
কৌস্তুভ বাগচির এই পোস্টের পর তার বিরুদ্ধে কলকাতার কালিঘাট থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে । তাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে চলেছেন, তারও নিন্দা করা হয় ৷ এফআইআরের কপিটি এক্স-এ শেয়ার করেছেন বিজেপির আর এক আইনজীবী নেতা তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । টালিগঞ্জের ৪ নম্বর হুমে রোডের বাসিন্দা মিতা শ (মিতা নামে Shaw) এক মহিলার দ্বারা গত ৩০ মে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে কৌস্তভ বাগচির বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা(বিএনএস)-এর ৩৫৩(২) ধারায় মামলা (এফ আই আর নম্বর :১৩৫) রজু করেছে পুলিশ । এফ আই আরের বিষয়বস্তুতে পুলিশ কুৎসিত ও নোংরা গুজব ছড়ানো, সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘৃণা ও শত্রুতা ছড়ানোর কথা লিখেছে । যদিও ওই দিনেই টালিগঞ্জ থানায় নিজের জবাব পাঠিয়ে দিয়েছেন কৌস্তুভ বাগচি ।
তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন,’একটা পুরনো কথা আছে যেটা পুলিশ মনে হয় ভুলে গেছে, “DON’T TEACH A FATHER, HOW TO MAKE BABIES”, কৌস্তব একজন আইনজীবী এবং সে জানে যে কোনটা করা যায় এবং কোনটা করা যায় না এবং আইনকে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়।
আবারও কলকাতা পুলিশ তাদের আইনের ন্যূনতম জ্ঞানহীনতা প্রমাণ করে ফেলেছে। একটি হাস্যকর ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে, যেখানে শুধুমাত্র প্রয়াত দীপক ঘোষের একটি বই থেকে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে কলকাতা পুলিশ বিশেষ মামলা রুজু করে ফেলেছে অ্যাডভোকেট কৌস্তভ বাগচীর বিরুদ্ধে। ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন ধারার ৩৫৩(২) ধারা, যা ধর্ম বা জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো সংক্রান্ত, সেটি একেবারেই এখানে প্রযোজ্য নয়। কৌস্তভ বাগচী শুধুমাত্র একটি বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যে বই নিষিদ্ধ নয়, আর যার লেখক স্বয়ং এক প্রাক্তন আইএএস ও তৃণমূল বিধায়ক।
তিনি আরও লিখেছেন,’অভিযোগকারী চাইছেন ফৌজদারি মানহানির মামলা, অথচ পুলিশ জানে না (বা জানলেও মানে না) যে মানহানির ক্ষেত্রে পুলিশ নিজে কোনো এফআইআর করতে পারে না। আইন অনুযায়ী ভুক্তভোগীকে নিজে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ জানাতে হয়। কিন্তু কলকাতা পুলিশ যেন আইনের বই পড়ে না, বরং শুধু নেত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদের কাছে BNSS বা BNS একটা বই নয়, সেটা মমতা ব্যানার্জীর পায়ের তলার পাতার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এখন মমতার ব্যক্তিগত বাবুর্চির ভূমিকায় নেমে এসেছে। খিচুড়ি রান্না করে কালীপুজোয় যোগ দেওয়া যে পুলিশ অফিসারদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়, তারা আর আইনের পাঠ পড়বে কেন? আদালত না, এখন বই থেকে উদ্ধৃতি দিলেও মামলা হবে — যদি সেটা তৃণমূলের চুলকানি বাড়ায়। আইন-শৃঙ্খলার রক্ষক যখন অজ্ঞতা আর চামচামির দাসে পরিণত হয়, তখন গণতন্ত্রের হত্যা অবশ্যম্ভাবী।’
তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত দীপক কুমার ঘোষের লেখা পুস্তকে ঠিক কি লেখা আছে ?
আসলে, কলকাতা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে যেমন দেখেছি” নামের ওই পুস্তকের ৮৪ পৃষ্ঠায় সপ্তম অধ্যায়ে “সকলের দিদি মমতা বন্দ্যোপাধায় হয়তো অবিবাহিতা না-ও হতে পারেন” শীর্ষক প্রতিবেদন লেখা আছে । যেখানে লেখা হয়েছে :
“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবাহিত না অবিবাহিত এ প্রশ্ন অবান্তর। এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আমার উৎকণ্ঠা এই কারণেই যে, তিনি ‘সততার প্রতীক’ এর আড়ালে অবলীলায় মিথ্যা কথা চালিয়ে যান। তাঁর মুখোশ খুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের। তা না হলে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমরা জবাব দিতে পারব না। উপরন্তু Honesty ইংরাজি শব্দের বাংলা প্রতিরূপ ‘সততা’ শব্দটি পাল্টে ফেলতে হবে অচিরেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের আগে কখনও কখনও শব্দটি লিখতে দেখা যায়, আবার শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও লেখা হয়। আসল মমতার প্রতিবেশীরা এবং তাঁর অত্যন্ত কাছের মানুষজন অনেকেই মনে করেন তিনি বিবাহিত। তাঁর স্বামীর নাম রঞ্জিত ঘোষ।
কয়েক বছর আগে এ ব্যাপারে কিছু খবর পেয়ে আমি অনুসন্ধান করতে শুরু করি। তথ্যের অধিকার আইনে বিচার বিভাগে প্রশ্ন পাঠিয়ে এবং ৩০.০৪.২০১২ তারিখে (১) তৃণমূল ভবন ও (২) ৩০ বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে দিদির দুই ঠিকানাতেই চিঠি পাঠিয়ে কোনো উত্তর আসেনি।
গত ২০ শে মে তিনি মমতা ব্যানার্জির মুখ্যমন্ত্রীত্বে শপথ গ্রহণের সময় রাজভবনে এবং পরে নতুন মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে তাঁর চেম্বারে ঢোকার আগেই সেখানে গিয়ে বসেছিলেন।
শ্রী রঞ্জিত ঘোষ কয়েক মাস আগে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। মমতা তাঁকে মধ্য কলকাতার ব্যয়বহুল নার্সিং হোম বেলভিউ ক্লিনিকে ভর্তি করান। রাতে তাঁকে গোপনে দেখতে যেতেন এবং প্রায় পাঁচ লাখ টাকার হসপিটালের খরচও মেটান।
২০০৫ সালের ভোটার তালিকা অনুযায়ী আলিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তখনকার ১৪৮-এর পার্ট নং ৪৯-এর ২৮২ নম্বর-এ শ্রী ঘোষের নাম আছে এবং ঠিকানা -৫৮/৬, কালীঘাট রোড, কলকাতা ৭০০০২৬।
বিবাহিতা মাতা একবার গর্ভবতী হয়ে পড়েন। গর্ভপাত করান গড়িয়াহাটের এক নার্সিংহোমে, সেখানে তাঁর পরিচিত এক ডাক্তার দম্পতি ছিলেন। সেসময় মমতা পরিচিতাদের বলেছিলেন, “আমার একটা সামান্য স্ত্রীরোগের চিকিৎসা করাতেই দিন সাতেক নার্সিংহোমে ছিলাম।” আর তার এই প্রতিবেদন নিয়েই নতুন করে এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে । ইতিমধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে মমতা ব্যানার্জি যদিও ফের নরেন্দ্র মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন তাহলে বিজেপি ওই বই ছাপিয়ে বিতরণ করবে ।।

