এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ মে : বর্তমানে এরাজ্যে শাকদলের দুই নেতা-নেত্রীকে নিয়ে তোলপাড় চলছে । প্রথমজন হলেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি । যিনি গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বিজেপির পালটা ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন । আর দ্বিতীয়জন হলেন বীরভূম তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল । যিনি বোলপুর থানার আইসিকে ফোনে মা-বউ তুলে অশ্লীল প্রস্তাব ও গালিগালাজ দিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে । আইসির সঙ্গে কথোপকথনের সেই অডিও ক্লিপ ব্যাপক ভাইরাল হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । আর অনুব্রতের এই প্রকার মন্তব্যে নিন্দায় সরব হচ্ছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ । যদিও অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি এইদিন । এদিকে বিজেপি নেতা কৌস্তুভ বাগচি ওই অডিও ক্লিপ এক্স-এ শেয়ার করে “রাজ্যে পুলিশ বিদ্রোহ দেখতে চাই” বলে মন্তব্য করেছেন ।
কৌস্তুভ বাগচি লিখেছেন,’সাধারণ মানুষ,বিরোধীদের উপর যাদের জন্য অত্যাচার করছেন তারাই আপনাদের মা বউয়ের সাথে যৌনতায় লিপ্ত হতে চাইছেন! ইংরেজ আমলে সেপাই বিদ্রোহের কথা ইতিহাসের বইতে পড়েছি। তৃণমূল আমলে এই অনাচারের প্রতিবাদে পুলিশ বিদ্রোহ দেখতে চাই।তবে কি জানেন,এই কালে শিরদাঁড়ার বড় অভাব!’
ওই অডিওতে হুমকি দিয়ে বলা হয়,’পরশু ডেপুটেশন দিয়ে তোর বাংলো পর্যন্ত যাব । তোর বউ দারুন দেখতে,আমার কাছে নিয়ে এসেছিলি না ? তোকে বার করে নিয়ে আসব….বল বল বল বল বল৷’ অন্য প্রান্ত থেকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কে বলছেন ?’
উত্তরে বলা হয়, ‘আমি অনুব্রত মণ্ডল বলছি । তোর বউ দারুন দেখতে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলি না !’ এই সমস্ত কথাবার্তার মাঝে অনেক অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে । যদিও কৌস্তুভ বাগচির শেয়ার করা অডিওতে সেই অশ্লীল শব্দগুলোতে বিপ সাউন্ড করে দেওয়া হয় । এরপর হুমকি দেওয়া ওই ব্যক্তি বলেন,’পরশু যখন ডেপুটেশন দেওয়া হবেনা তখন তোকে মারতে মারতে কোয়ার্টার থেকে বের করে নিয়ে আসবো ।’ অন্যপ্রান্তে জিজ্ঞেস করা হয়,’কি হয়েছে, ঘটনাটা কি ?’ উত্তরে অস্রাব্য ভাষা প্রয়োগ করে বলা হয়,’জানিস না কি হয়েছে ? পরশু ডেপুটেশনের ডেট কর । ১৩ হাজার বোলপুরে লোক হয়েছে না ? ১২০০০ লোক হয়েছিল বোলপুরে ?’ উত্তরে বলা হয়, ‘প্রচুর লোক হয়েছিল ।’ এরপরে মা-বউ তুলে অশ্লীল ভাষায় হুমকি দেওয়া হয় অন্য প্রান্ত থেকে । সমগ্র অডিও ক্লিপে একাধিকবার অশ্রাব্য ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে ।
এই প্রকার অশ্লীল মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল । সুকান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,’এই ভাইরাল হওয়া ফোনালাপটি শুনলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, রাজ্যের দুর্দমনীয় এবং দোর্দণ্ডপ্রতাপ মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহের চাদরের তলায় কিভাবে ভয়াবহ সমাজবিরোধী ত্রাস’রা সযত্নে সুরক্ষিত রয়েছে! বীরভূমের ছাল ছাড়ানো বাঘ, যার কিনা মাঝে মধ্যেই ব্রেইনে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয় — তিনি একজন পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে ঠিক কি ভাষায় কথা বলছেন! আর এই কথপোকথন প্রকাশ্যে আসার পর প্রশাসনে কি প্রভাব পড়বে? বড় জোর ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই হয় ওই আধিকারিককে ক্লোজ করা হবে, নাহলে সুন্দরবনে বদলি! আমি চাই, পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও রাজ্যের ডিজি সাহেব রাজীব কুমার দ্রুত এই বিষয়ে তদন্ত করে রাজ্যবাসীর কাছে জবাবদিহি করুন। তৃণমূলের নেতাদের কাছে পুলিশ সুরক্ষিত না হলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা!’
অগ্নিমিত্রা পাল লিখেছেন,’যেমন নেত্রী। ঠিক তেমন তাঁর দলের নেতারা। দুষ্কৃতীদের তুলে এনে নেতা বানানো হয়েছে। পুলিশ নিজেদের কোথায় নামিয়েছে। এই কথা শোনার পরেও গ্রেপ্তার করার দম নেই।
চটি চাটার এই ফল অনিবার্য। যে সমস্ত পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে এখন মেরুদন্ড আছে প্রতিবাদ করুন অন্যায়ের। অনুব্রত আপনাদের পরিবারের ইজ্জত ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আর পুলিশমন্ত্রী নীরব থেকে ওর বীরত্ব দেখছে।’
জানা গেছে, বোলপুর থানার বর্তমান আইসির দায়িত্ব সামলাছেন লিটন হালদার । তারই মা-বউ তুলে অনুব্রত মণ্ডল অশ্লীল প্রস্তাব ও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করেছেন বলে অভিযোগ । এদিকে অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর বোলপুর থানার আইসির বিরুদ্ধে পালটা অভিযোগ তুলেছেন অনুব্রত । তিনি দাবি করেছেন,এফআইআর করতে গেলে ৫ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন আইসি । ২ মাস আগেই তিনি নাকি এসপিকে জানিয়েছিলেন ।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ মে তৃণমূলের মিছিলে জনসংখ্যার হিসেব নিয়েই মূলত সংঘাত অনুব্রত এবং বোলপুরের আইসির মধ্যে । অনুব্রত দাবি করেন, অন্তত ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ যোগ দিয়েছিলেন ওই মিছিলে। যদিও পুলিশের হিসাব অনুযায়ী,১২ হাজার জনসমাগম হয়েছিল । যাতে চরম ক্ষুব্ধ হন অনুব্রত মণ্ডল । ভাইরাল অডিও ক্লিপে তার গলার স্বর শুনে অনেকে মনে করছেন যে অনুব্রত সেই সময় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।।

