এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৭ মে : গত শনিবার সন্ধ্যায় মালবাজার শহরে (Malbazar) ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে অগুনতি বালিবোঝাই ডাম্পার আটকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় উত্তরবঙ্গের সাংবাদিকদের । স্থানীয় এক কুখ্যাত বালি মাফিয়ার নেতৃত্বে আচমকা সেই হামলায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। পরে সাংবাদিকরা এনিয়ে মাল থানায় অভিযোগ দায়ের করলে ওই বালি মাফিয়া ও তার গুন্ডাবাহিনীর আগাম জামিন খোদ শাসকদলের “দলদাস” পুলিশই করে দিয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
যার নেতৃত্বে ওইদিন সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছিল তাকে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা মহঃ রাসেল সরকার বলে চিহ্নিত করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তার বেশ কয়েকটা ছবি এক্স-এ ভাগ করে নিয়ে তিনি লিখেছেন,’দুদিন আগেই উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার থানার পোষ্ট অফিস মোড় সংলগ্ন এলাকায় বালি বোঝাই ওভারলোডিং ডাম্পার আটকে স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ দেখান। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মালবাজার থানার পুলিশ বাহিনী। সেই ঘটনার ছবি ভিডিও করতে গেলে মহঃ রাসেল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের হাতে আক্রান্ত হন উত্তরবঙ্গের সাংবাদিকরা। ছ’জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছিলেন, নিতেশ উপাধ্যায়, সন্তু চৌধুরী, সুশান্ত ঘোষ, অভিষেক ঘোষ, সম্পা ভট্টাচার্য এবং অনিল ছেত্রী যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। ওনারা এখনো চিকিৎসাধীন।’
তিনি লিখেছেন,’পরবর্তীকালে সাংবাদিকরা মহঃ রাসেল সরকারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। জানা যাচ্ছে যে পুলিশ নাকি আগে থেকেই তার জামিনের বন্দোবস্ত করিয়ে নিয়েছে। মহঃ রাসেল ওদলাবাড়ি অঞ্চলের প্রভাবশালী তৃণমূলের নেতা। মমতা ব্যনার্জীর উত্তরবঙ্গে সভার পর পরই পুলিশ তার জামিন করিয়ে নেয়।’ শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’পশ্চিমবঙ্গে এখন গণতন্ত্র বিপন্ন। এখানে শাসকের আইন চলে, আইনের শাসন চলে না। পুলিশ পুরোপুরি ভাবে দলদাসে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোনো হিংসার ঘটনা ঘটলে পুলিশকে সেখানে খুঁজে পাবেন না। অথচ কোনো তৃণমূলের নেতা বা তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী দের বাঁচাতে পুলিশ সদা তৎপর।’
প্রসঙ্গত,সেতু সংস্কারের কারণে বর্তমানে গজলডোবা দিয়ে যানবাহনের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ সফরে এসে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ডাম্পার চলাচলের বিষয়ে ক্ষোভ জানালে ক্রান্তির গ্রামীণ রাস্তা দিয়েও বালিবোঝাই ডাম্পার চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় । এ কারণেই শনিবার সন্ধ্যায় শয়ে-শয়ে বালিবোঝাই ডাম্পার মালবাজার শহরের রাস্তায় নেমে পড়ে । সাধারণ বাসিন্দারা প্রতিবাদ জানিয়ে ডাম্পারগুলিকে আটকে দেন। ফলে একটা সময়ে গোটা মাল বাজার চত্বরজুড়ে কয়েকশো ডাম্পারের লাইন পড়ে যায় । সেই খবর সংগ্রহ করতে গেলে ওই কুখ্যাত বালি মাফিয়ার নেতৃত্বে হঠাৎ তাণ্ডব শুরু হয়। খবর সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের বেদম মারধর করা হয়। উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রতিনিধি সুশান্ত ঘোষের মুখে আঘাত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । এই পত্রিকার আর এক প্রতিনিধি অভিষেক ঘোষকে বালি মাফিয়ারা হুমকি দেয়। সেই সময় পুলিশকে কাছেপিঠে দেখা যায়নি। যোগাযোগ করা হলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিতে চায়নি। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমীর আহমেদ উত্তরবঙ্গ সংবাদকে দায়সারা জবাব দিয়ে বলেছিলেন, ‘কী কারণে এই সমস্যা হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এদিকে পরিস্থিতির গুরুত্ব আঁচ করে ওই ডাম্পারগুলির একাংশ অন্য রাস্তা দিয়ে সরে পড়ে ।।
ছবি : শুভেন্দু অধিকারীর এক্স হ্যান্ডেল থেকে নেওয়া।

