আপনারা কি কখনও শুনেছেন যে একদিনে গোটা একটা শহর কবরস্থানে পরিণত হয়েছে ? হ্যাঁ এমনই ঘটনা ঘটেছিল এই ভারতে । আর সেই দিনটা হল ১৯৪৭ সালের ২৫ নভেম্বর । স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে যে তারিখটি সবচেয়ে ভয়াবহ এবং লজ্জাজনক। এই দিনে পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের মিরপুর জেলায় আক্রমণ করে এবং সেখানে ২০,০০০ নিরস্ত্র হিন্দু ও শিখকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় । এক দিনে খুন হয় ২০,০০০ মানুষ । তখন কংগ্রেসের সরকার কি “অপারেশন সিন্দুর” এর অধীনে কোন পদক্ষেপ নিয়েছিল ? নেয়নি ।
সেই সময় মাত্র ২৫০০ জন কোনওভাবে বেঁচে থাকতে পেরেছিলেন এবং বেশ কয়েকদিন ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পায়ে হেঁটে জম্মুতে পৌঁছেছিলেন। বাকিদের হয় কবর দেওয়া হয়েছিল, নয়তো পাকিস্তানে নিয়ে গিয়েছিল এবং নিখোঁজ করে দেওয়া হয়েছিল। এই গণহত্যার পিছনে কেবল পাকিস্তানের বর্বরতাই নয়, আরও একটি বড় নাম রয়েছে – ভারতের ঘোষিত প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ।
কারণ মিরপুরের হিন্দু-শিখরা তাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর আগমনের জন্য অপেক্ষা করেছিল । সেনাবাহিনী এসে তাদের রক্ষা করবে, এই আশায় ছিল তারা । কিন্তু নেহেরু ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও সাহায্য পাঠাননি, যদিও কাছের ঝাঙ্গরে সেনাবাহিনী উপস্থিত ছিল। ফলাফল অমুসলিমদের নরসংহার ।
মিরপুরের মাটিতে ২০,০০০ মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এবং হাজার হাজার মেয়ে, বোন এবং মায়েদের সম্ভ্রম নষ্ট করা হয়েছিল,পাকিস্তানি পশুর দল তাদের উপর মানবতার সমস্ত সীমা অতক্রম করে বর্বোরতা চালিয়েছিল । কারোর স্তন ছুরি দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছিল। কারোর গোপনাঙ্গে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি করা হয়েছিল ।
আসলে মিরপুরের মানুষ আত্মসমর্পণ করতে চায়নি। পাকিস্তানিরা বলেছিল, যদি তোমরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে চাও, তাহলে তোমাদের বাড়িতে সাদা পতাকা লাগাও। কিন্তু মিরপুরের হিন্দু ও শিখরা “গেরুয়া” পতাকা উত্তোলন করেছিল – এই বলে যে আমরা আত্মসমর্পণ করব না, আমরা মাতৃভূমির জন্য আমাদের জীবন দেব। এই গেরুয়া পতাকা ছিল শহীদের ঘোষণা।
মিরপুর আক্রমণের আগে পাকিস্তান “জয়েন ও জার” নামে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এর অর্থ হল মিরপুরের জমি ও সম্পত্তি পাকিস্তানের হবে এবং সেখানকার মহিলারা মুসলমানদের ‘মালিক’ হয়ে যাবেন । একবার ভাবুন তো, এই ধার্মিক লোকেরা কেমন মানুষ,যারা নারীকে পুরষ্কার হিসেবে মনে করে….! সবচেয়ে লজ্জাজনক বিষয় ছিল যে মিরপুরের মুসলমানরা, যারা কয়েক মাস আগে পর্যন্ত হিন্দু-শিখদের প্রতিবেশী ছিল, তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ তথ্য দিয়েছিল – কোন রাস্তাটি কোথায় যায়, কোন বাড়িতে কতজন থাকে। এই অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতাই মিরপুর ধ্বংসের সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সেই দৃশ্যের কথা ভাবলেই আজও আত্মা কেঁপে ওঠে –
মেয়েদের তাদের মায়ের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছিল, ভাইদের তাদের বোনদের সামনে শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল, তারপর সবাইকে ট্রাকে করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেক মহিলা কূপে ঝাঁপ দিয়ে তাদের সম্ভ্রম রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু নেহেরু সরকার মুখও খোলেনি। তারা কোন সেনাবাহিনী পাঠায়নি এবং কোন উত্তরও দেয়নি। মিরপুরকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছিল ।
আজ পরিস্থিতি এমন যে মিরপুর এখনও পাকিস্তানের দখলে এবং এমনকি সেখানে হিন্দু ও শিখদের চিহ্নও পর্যন্ত মুছে ফেলা হয়েছে। কোন বইয়ে, কোন স্কুলের পাঠ্যক্রমে এই গণহত্যার কোন উল্লেখ নেই। কোনও নেতা ক্ষমা চাননি, কাউকে দোষী সাব্যস্তও করা হয়নি।
আর এই সব ভারত সরকার ঘটতে দিয়েছে এবং কোনও প্রতিশোধ নেয়নি। কিন্তু মিডিয়া নীরব। যদি সেই সময়ে নেহরুর জায়গায় নরেমদ্র মোদীর মতো শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী থাকতেন, তাহলে কি তিনি চুপ থাকতেন?
কিন্তু নেহেরু সেই সময় চুপ ছিলেন…আর কংগ্রেস নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল । আজ অপারেশন সিঁদূর নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাকিস্তানের সুবিধা করে দিচ্ছেন
রাহুল গান্ধী । কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর সময়ে ২০ হাজার ভারতীয় নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তিনি নীরব ।
আজ চাটুকাররা বলছে কেন পহেলগামের বিনিময়ে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (POK) দখল করা হয়নি। ৯টি সন্ত্রাসী শিবির এবং ১১টি সেনা ঘাঁটি ধ্বংস করার পর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা নরেন্দ্র মোদীকে তারা কাপুরুষ এবং ভীতু বলে অভিহিত করছে। যদি এমন প্রতিশোধ নেওয়া মোদী কাপুরুষ এবং ভীতু হন, তাহলে ২০,০০০ খুনের ব্যাপারে নীরব থাকা নেহেরুর জন্য কী শব্দ ব্যবহার করা উচিত ?
এখনও সময় আছে-দেশের প্রকৃত ইতিহাস সকলের সামনে তুলে ধরার । মিরপুর নিছক একটি এলাকা ছিল না, এটি ছিল ভারতীয় মাটি যা প্রতারণার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আর যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল,তারা বাইরে থেকে নয়, বরঞ্চ ভেতরেই ছিল, আজও তারা সেই বিশ্বাসঘাতকতা করে আসছে । এই বিশ্বাসঘাতকরাই কয়েক দিন আগে “অপারেশন সিঁদূর”-এ পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়া ভারতীয় সেনার কনভয় ফিরে আসার সময় পাথরবাজি করেছিল ।।

