এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ মে : “অপারেশন সিঁদূর”-এর পর পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ১৮ জন ব্যক্তি । ধৃতরা হল : জ্যোতি মালহোত্রা,দেবেন্দ্র সিং ঢিল্লোঁ, পলক শের মাসীহ, সূর্য মাসীহ, জাফর হুসেন, মোহাম্মদ আরমান, নওমান ইলাহি,মোহাম্মদ জুবাইর, মোহাম্মদ ইয়াসমিন, গজালা খাতুন,নসরিনা বানো, মোহাম্মদ রকিব,আরিফ খান, আকীক খান, আরশাদ খান, মোফিজুল ইসলাম,সাজিদ খান এবং সাদিক । তাদের মধ্যে ১৪ জন মুসলিম, ২ জন খ্রিস্টান, ১ জন শিখ এবং ১ জন হিন্দু। আর সেই হিন্দু হলেন হরিয়ানার হিসারের ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা । কিন্তু বাকি সকলকে ছেড়ে দিয়ে শুধু জ্যোতি এখন সংবাদের শিরোনামে । এদেশের বামপন্থী ও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ বাস্তুতন্ত্র জ্যোতি মালহোত্রাকে সামনে রেখে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশানা করতে শুরু করে দিয়েছে । কিন্তু শুধু জ্যোতিকে নিয়ে এত আগ্রহ কেন বামপন্থী ও কথিত সেকুলারদের ? এটা কি তাদের তোষামোদের প্রতিফলন নাকি হিন্দু বিদ্বেষী মানসিকতা ?
পশ্চিমবঙ্গের সিপিএমের নেত্রী দীপ্সিতা ধর মহাদেবের ছবি আঁকা গেরুয়া পতাকা হাতে জ্যোতি মালহোত্রার একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাগ করে লিখেছিলেন,’ইনি পাকিস্তানের গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। দেশদ্রোহী রা এইরকমই হয়। ভক্তি দেখাতে দেখাতে কখন যে দেশ বেচে দেবেন ধরতে পারবেন না। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। তাই বিড়াল তপস্বীদের চিনুন, সাবধান থাকুন।’
সিপিএমের ওই নেত্রীর সেই পোস্টের স্ক্রীন শর্ট শেয়ার করে বিজেপির তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন,’হিন্দু পতাকা মানে দেশদ্রোহিতা? দীপ্সিতা ধর বলতে কি চাইলেন ? হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্র পাক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার — সন্দেহ নেই, ওর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা হোক। কিন্তু এক বামপন্থী নেত্রী দীপ্সিতা ধর যেটা করলেন, সেটা নিয়ে এবার প্রশ্ন উঠতেই হবে। তিনি একটি ছবি পোস্ট করেছেন — যেখানে এই দেশদ্রোহির হাতে হিন্দু পতাকা, এবং পাশে লিখেছেন : “দেশদ্রোহীরা এইরকমই হয়।” বিস্ময় !’
তিনি লিখেছেন,’ছবিটি আসলে পাকিস্তানের এক হিন্দু মন্দিরের — যেখানে সেই ব্যক্তি পাকিস্তানিদের কথা মত ওখানে বোঝাতে গিয়েছিল যে পাকিস্তানে হিন্দুরা ভালো আছে। টাকা পেয়ে পাকিস্তানের হয়ে ন্যারেটিভ তৈরি করছিল এই মহিলা। তাহলে দীপ্সিতা ঠিক কী বলতে চাইলেন?– হিন্দু পতাকা ধরলেই আপনি দেশদ্রোহী? হিন্দু পরিচয় মানেই সন্দেহভাজন?
–মুসলিম চরদের নিয়ে তো একটাও পোস্ট নেই, অথচ হিন্দু ধর্মীয় চিহ্ন টার্গেট? ভারতের মধ্যে যে ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনগুলো আছে যারা ভারতের বিরুদ্ধে কাজ করে তাদেরকে নিয়ে এই মহিলা কথা বলে না তো, তখন তাদের ছবি প্রকাশ করে বলে না তো যে দেশদ্রোহীরা এইরকম দেখতে হয়। গোঁফ ছাড়া দাড়ির প্রতি বিশেষ প্রেম আছে নাকি, any special fantasy?’
তরুনজ্যোতির কথায়,’বামপন্থীরা বারবার প্রমাণ করেছে — ওরা হিন্দুদের অপমানেই খুশি। এদের আদর্শ লেনিন, দেশ নয়। যত বড় দেশদ্রোহী হোক না কেন, যদি সে মসজিদে বসে থাকে, তাতে ওদের কিছু বলার থাকে না। কিন্তু একজন হিন্দু পতাকা হাতে নিলেই – “দেশদ্রোহী”? প্রশ্ন থাকবেই : এই দীপ্সিতা জামাত-লস্করের PR করছেন না তো? কে ওকে ব্রিফ করছে? ওদের ফান্ডিং কোথা থেকে আসছে? কচি বয়স থেকে বেশি লেনিন বুঝিয়েছে একে এর দলের নেতারা তারপরেই মনে হয় এইরকম অবস্থা হয়েছে।এটা হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর নতুন উদাহরণ।এই নোংরা রাজনীতি বরদাস্ত করা হবে না।’
যদিও হরিয়ানার জ্যোতি মালহোত্রা নামে যে ইউটিউবারকে নিতে বামপন্থীরা এত প্রচার করছেন, হিন্দু ধর্ম ও সম্প্রদায়কে কলুষিত করছেন, আসলে সেই ইউটিউবার ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন । দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রাক্তন কর্মচারী এহসান -উর-রহিম ওরফে দানিশের সাথে তার প্রেমের ও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । দানিশের স্ত্রী জ্যোতিকে ইসলাম গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। আর পাকিস্তানি হাইকমিশনেই একজন মৌলবি দানিশ এবং জ্যোতির নিকাহ সম্পন্ন করে । নিকাহের পর দানিশ এবং জ্যোতি দুজনেই তাদের মধুচন্দ্রিমার জন্য ইন্দোনেশিয়ায় যায় । কিন্তু দানিশের কথামত জ্যোতি তার ইসলামিক নাম ব্যবহার করত না, সে নিজেকে জ্যোতি মালহোত্রা বলেই পরিচয় দেয় । কিন্তু ভন্ড বামপন্থীরা হরিয়ানার হিসারের ওই ইউটিউবারের এই কাহিনীকে কখনো প্রকাশ্যে আনছে না ।
সিপিএম ও কথিত সেকুলারদের এই প্রকার নির্লজ্জ ভন্ডামির অসংখ্য নজির আছে । সিপিএমের হিন্দু বিদ্বেষের কিছু নজির নিচে তুলে ধরা হল :
গত বছর সেপ্টেম্বরে কেরালার পাঠানমথিত্তার সিপিএমের জেলা সম্পাদক কেপি উদয়ভানু হিন্দু পূজার ঐতিহ্যের প্রতি অবমাননাকর বলে মন্তব্য করেছিলেন । কোন্নির একটি সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে উদয়ভানু সাপ ও বানরের পূজা করার হিন্দু রীতিকে উপহাস করেন, একই সাথে হিন্দু বিশ্বাস এবং জীবনধারা সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন।বক্তৃতায় উদয়ভানু বলেছিলেন,’চীনারা সাপ এবং বানর খায়, কিন্তু ভারতে মানুষ তাদের পূজা করে, যা ইঙ্গিত করে যে ভারতের সাংস্কৃতিক রীতিনীতিগুলি পুরানো এবং চীনের মতো অন্যান্য জাতির তুলনায় নিকৃষ্ট।’ তিনি হিন্দু বিশ্বাসকে আরও উপহাস করে বলেন যে,’বিজেপির লোকেরা বিশ্বাস করে যে শূকর মহাবিষ্ণুর অবতার ।’
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক হিংসায় জাফরাবাদে হরগোবিন্দ দাস এবং তার ছেলে চন্দনের নৃশংস হত্যার ঘটনাতেও সিপিএমের ভন্ডামি নজরে পড়েছিল। বিজেপি বলছে যে তারা হিন্দু হওয়ার কারনেই খুন হয়েছেন । আর কলকাতা হাইকোর্ট দ্বারা গঠিত ৩ সদস্যের তদন্তকারী দলের রিপোর্টেও ওই হিংসায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুসলিম নেতাদের দিকে দাঙ্গা ছড়ানোর জন্য দায়ি করা হয়েছে । অথচ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম গত ১৪ এপ্রিল নিহতদের পরিবারের সাথে দেখা করেতে গিয়ে খুনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের(মুসলিম) দিকে আঙুল তোলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান ।
এছাড়া, ২১শে জুলাই ২০২৩ তারিখে, কেরালা বিধানসভার স্পিকার এএন শমসের শিক্ষাক্ষেত্রে ‘পৌরাণিক কাহিনী’র পরিবর্তে ‘বৈজ্ঞানিক মেজাজ’ প্রচারের উপর জোর দেন। তিনি স্কুলের শিশুদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় ‘বৈজ্ঞানিক মেজাজ’ প্রচারের আড়ালে শ্রী গণেশ এবং হিন্দু ইতিহাস সম্পর্কে অবমাননাকর কথা বলেন। এরপর সিপিআই(এম)-এর এক বর্ষীয়ান নেতা পি জয়রাজন ভগবান পরশুরামকে একইভাবে অপমান করেন । ২০১৯ সালের মে মাসে তৎকালীন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন যে রামায়ণ এবং মহাভারতের মতো হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী প্রমাণ করে যে “হিন্দুরাও হিংস্র হতে পারে”।
এরকম অসংখ্য নজির আছে যেখানে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মকে নিশানা করেছে সিপিএম। কিন্তু মুসলিম বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতি তারা আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব । বাংলাদেশে ঘটে চলা হিন্দু নির্যাতন নিয়েও তারা সচারাচর মুখ খোলে না । এমনকি শুধুমাত্র হিন্দু পরিচয়ের কারনে পহেলহামে পর্যটকদের নরসংহারকেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখতে আগ্রহী নয় ভারতের বামপন্থী ও তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ বাস্তুতন্ত্র ।।

