শেখ মিলন,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৩ আগস্ট : শাশুড়িকে খুনের অভিযোগে ধৃত জামাইকে নিয়ে ঘটনার পুনঃনির্মান করল পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার পুলিশ । শুক্রবার ধৃত প্রসেনজিৎ দলুইকে (২৭) সঙ্গে নিয়ে ভাতার থানার মাহাতা গ্রামে ঘটনাস্থলে যান মামলার তদন্তকারী আধিকারিক দিগ্বিজয় নন্দী সহ পুলিশকর্মীরা । প্রসেনজিৎ ওই দিন তার শাশুড়ি লীলা আগরওয়ালকে কিভাবে রুমাল দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল তা সকলের সামনে অভিনয় করে দেখায় । মহিলাকে খুনে ব্যবহৃত রুমালটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার ভাতার থানার মাহাতা গ্রামে ভাড়া বাড়িতে রহস্যজনকভাবে মারা যান লীলা আগরওয়াল(৪৪) নামে ওই গৃহবধু । ঘটনাটি আত্মহত্যা নাকি খুন, এনিয়ে প্রথম দিকে ধন্দের সৃষ্টি হয়েছিল । তবে খুন বলেই প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল পুলিশের । একই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন মৃতার ছেলে আকাশও । পুলিশ মৃতার প্রথম পক্ষের স্বামী বোলপুর শহরের মিশন কম্পাউন্ড এলাকার বাসিন্দা রাজু আগরওয়াল,ছেলে আকাশ,বীরভূম জেলার সিউড়ি থানার বাতরা গ্রামের বাসিন্দা মেয়ে-জামাই প্রীতি ও প্রসেনজিতের পাশাপাশি মহিলার দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে । সকলের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করে পুলিশ । কিন্তু অন্যান্যদের কললিস্ট থেকে তেমন কিছু সন্দেহজনক বিষয় না দেখা গেলেও প্রসেনজিতের কললিস্ট থেকে পুলিশ জানতে পারে ঘটনার দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার মোবাইল ফোনের সুইচ অফ ছিল। তাছাড়া তার মোবাইল ফোনের লোকেশনে ধরা পড়ে ওদিন দুপুর নাগাদ গুসকরা শহর এলাকায় ছিল সে । এই দেখে পুলিশের সন্দেহ প্রসেনজিতের উপরে গিয়েই পড়ে ৷ শুরু হয় ম্যারাথন জেরা । শেষে পুলিশের জেরার মুখে শাশুড়িকে খুনের কথা কবুল করে গুনধর জামাই ।
প্রসেনজিৎ পুলিশের কাছে জানায়, তার স্ত্রীর সঙ্গে ইদানিং বনিবনা হচ্ছিল না । তাতে ইন্ধন দিচ্ছিলেন শাশুড়ি লীলাদেবী । এমনকি লীলাদেবী হুমকি দিয়েছিলেন তার মেয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ করিয়ে প্রীতির অন্যত্র বিয়ে দেবেন । আর সেই রাগেই পরিকল্পনামাফিক মাহাতা গ্রামে এসে প্রসেনজিৎ তার শাশুড়িকে খুন করে বলে পুলিশের জেরায় জানায় । এদিন ওই খুনের ঘটনার পুনঃনির্মান করে পুলিশ ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ কর্মীদের সামনে প্রসেনজিৎ অভিনয় করে দেখায় খুনের দিন সে কিভাবে বাড়িতে পাঁচিল টপকে ঢোকে । তারপর শাশুড়ির সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় । প্রসেনজিতের শাশুড়ি লীলা আগরওয়াল তখন রান্না করছিলেন । সেই সময় একটি রুমাল দিয়ে পেছন থেকে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে গায়ের জোরে চেপে ধরে থাকে প্রসেনজিৎ । লীলাদেবীর শরীরের স্পন্দন থেমে গেলে সে ছেড়ে দেয় । এরপর মৃতদেহটি বারান্দায় ফেলে রেখে ফের সে পাচিল টপকে পালিয়ে যায় । উল্লেখ্য, নিহত মহিলা লীলা আগরওয়ালের বোনের বাড়ি মাহাতা গ্রামেই । এদিন নিহতের আত্মীয়রা খুনি জামাইয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন