পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর কর্মকর্তাদের কাছে ভারতীয় সামরিক কার্যকলাপ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া হরিয়ানার হিসারের ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রাকে নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ । জ্যোতি মালহোত্রার, ”ট্র্যাভেল উইথ জেও” নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান। দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মচারী এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । হরিয়ানা পুলিশের তদন্তে জ্যোতি মালহোত্রা সম্পর্কে এখন একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক তথ্য সামনে এসেছে । জ্যোতিকে তার প্রেমের ফাঁদে ফেলার জন্য দানিশ তার স্ত্রীকেও ব্যবহার করেছিল এবং তার স্ত্রী তাকে মগজ ধোলাই করেছিল যে ইসলামে চারটি বিয়ে বৈধ, যদি তুমি আমার স্বামীকে বিয়ে করতে চাও তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই এবং দানিশের স্ত্রী নিজেই জ্যোতিকে ইসলাম গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। আর পাকিস্তানি হাইকমিশনেই একজন মৌলবি দানিশ এবং জ্যোতির নিকাহ সম্পন্ন করেন, এরপর দানিশ এবং জ্যোতি দুজনেই তাদের মধুচন্দ্রিমার জন্য ইন্দোনেশিয়ায় যান। কিন্তু দানিশ এতটাই চালাক ছিল যে সে বলত যে তোমার ইসলামিক নাম কেবল নিকাহ্র কাগজেই থাকবে, তুমি নিজেকে জ্যোতি মালহোত্রা বলেই পরিচয় দেবে । জ্যোতি মালহোত্রার পাশাপাশি ওড়িশার পুরীর ইউটিউবার প্রিয়াঙ্কা সেনাপতির যোগসূত্র নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
এরই মাঝে পশ্চিমবঙ্গের একজন হিন্দু তরুনী ইউটিউবারের সঙ্গে বাংলাদেশ জামাত ইসলামি পরিবারের একজন যুবকের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে ”ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দাস” (@VHindus71) নামে একজন এক্স ব্যবহারকারী । ওই তরুন-তরুনীর একটা স্টিল ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘মেয়েটির নাম চন্দ্রাণী ব্যানার্জি(Chandrani Banerjee), এবং তিনি একজন ইউটিউবার। ছেলেটি বাংলাদেশী, নাম মহম্মদ ফয়েজ ( Muhammad Faiz)। তার পরিবার জামায়াতের সাথে রাজনীতিতে জড়িত, এবং তিনি প্রায়শই কলকাতায় যাতায়াত করেন । যদিও মেয়েটি পশ্চিমবঙ্গের, তবুও তাকে প্রায়শই বাংলাদেশে বেড়াতে দেখা যায়।’ আরও লেখা হয়েছে, ‘অনেকেই আমার কথা বুঝতে পারেনি। আমি লোকটিকে অনুসরণ করি, আর সেই কারণেই আমার সন্দেহ হওয়ায় আমি এই টুইটটি করলাম । ফয়েজের ভিডিও দেখুন, সে প্রায়ই পাকিস্তানে যায়, এমনকি সে আফগানিস্তানের তালইবান-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলিতেও গেছে, যেখানে বেশিরভাগ লোকের যাওয়ার অনুমতি নেই। মেয়েটি আইসিসের সাথে যুক্ত হতে খুব বেশি সময় নেবে না। একজন বাঙালি হিসেবে, আমি এটি শেয়ার করেছি কারণ আমি চাই না যে ভারতীয় মেয়েটি ভুল পথে চলে যাক ।’
এদিকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন তার এই পোস্টে । তারক দাস লিখেছেন,’ মেয়েটির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় । আমি মোঃ ফয়েজের ইউটিউব চ্যানেলে মন্তব্য করে তাকে সতর্ক করেছিলাম।’ দীপক দেবনাথ বলেছেন,’আমি এদের ভিডিও দেখেছি । মেয়েটা বাংলাদেশ গিয়ে ছেলেটার বাড়িতে থেকেছে।’ অভিজিত রায়ের দাবি,’এনআইএ এবং আইবি-র উচিত সেই সকল ব্যক্তির তদন্ত করা যারা ঘন ঘন পাকিস্তান/বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন এবং বাংলাদেশের জামাতের মতো ভারত-বিরোধী সংগঠনের সাথে তাদের যোগাযোগ আছে বলে জানা যায়।’
চন্দ্রাণী ব্যানার্জির ইউটিউব চ্যানেলে ৬৭.৩ কে ফলোয়ার্স আছে এবং তিনি মাত্র ২০৫ টি ভিডিও পোস্ট করেছেন । গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে তার একটি ভিডিওতে(২৭ এপ্রিল) তাকে বলতে শোনা গেছে,’যারা নরসংহার করেছে তাদের কোন ধর্ম নেই। কোন ধর্মতে শেখানো হয় না মানুষকে হত্যা করা ৷ আজ গোটা দেশজুড়ে শুধু হিন্দু আর মুসলিম নিয়ে চর্চা চলছে৷ ভেদাভেদ চলছে৷ কে এগুলো সৃষ্টি করেছে ? কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থের জন্য, রাজনৈতিক কৌশলের জন্য, মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করার জন্য আজ এগুলো হচ্ছে ।’ ওই তরুণী ইউটিউবার আরো বলেছেন,আজ ধর্ম নিয়ে চারিপাশে যা হচ্ছে তা অনেকটা অসংবেদনশীল৷’ তিনি কাশ্মীর বয়কট করারও পক্ষপাতি নন । তার কথায়,’আজ কাশ্মীরে হয়েছে বলে যাবেন না কাশ্মীর৷ কিন্তু যদি কলকাতায় হতো তাহলে কি কলকাতা যেতেন না ? বাড়ির পাশে হলে বাড়ি থেকে বেরোতেন না ?’
এদিকে হরিয়ানার হিসারের এসপি শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান জ্যোতি মালহোত্রার সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন, যাকে সংবেদনশীল তথ্য ভাগ করে নেওয়ার এবং একজন পাকিস্তানি নাগরিকের সাথে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । এসপি বলেছেন,’পাকিস্তান তাকে (জ্যোতি মালহোত্রা) একজন সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলছিল। সে অন্যান্য ইউটিউব প্রভাবশালীদের সাথে যোগাযোগ রাখত, এবং তারা পিআইওদের সাথেও যোগাযোগ রাখত… সে পাকিস্তানে যেত স্পন্সরড ভ্রমণে… পহেলগাম হামলার আগে সে পাকিস্তানে ছিল, এবং যদি কোনও যোগসূত্র থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য তদন্ত চলছে। আমরাও তদন্ত করছি, কারণ আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যে তার সাথে আরও কিছু লোক জড়িত ছিল ।’।

