এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১৭ মে : বাংলাদেশের মৌলবাদীদের চুড়ান্ত নৈরাজ্যের শিকার হিন্দুরা । দেড় শতাধিক বর্ষ প্রাচীন শ্মশান ভরাট করে গরুর বাজার বসানো হচ্ছে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায় । ইউএনও এরশাদুল আহমেদের নির্দেশেই শ্মশান ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ।
এই ঘটনায় ইউএনওর যথাযথ বিচার ও অপসারণ দাবিতে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন। রবিবার দুপুরে ঘণ্টাখানেক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে দু’পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় । তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউএনওর অপসারণ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শ্রীশ্রী করুণাময়ী কালীবাড়ি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অলক ঘোষ ছোটন, রাজিপুর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জনি দে, ঈশ্বরগঞ্জ মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক পিন্টু চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব গৌড়, উচাখিলা ইউনিয়নের সার্বজনীন শ্মশান কালীমন্দির কমিটির সভাপতি পরেশ চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক রাজীব সাহা রাজু প্রমুখ।
তারা বলেন, দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের মানুষের শেষকৃত্য হয়ে আসছে। সেখানে তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের শেষকৃত্য হয়েছে। প্রতিবছর তাদের স্মরণে এখানে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। তাদের এই স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিতে ইউএনও যে পরিকল্পনা করেছেন, জীবন থাকতে তা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না । তারা বলেন– দফা এক দাবি এক, ইউএনওর পদত্যাগ। দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউএনওকে অপসারণ করা না হলে আরও বড় আকারে আন্দোলন হবে ।
প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে ঈশ্বরগঞ্জ এলাকার হিন্দুরা । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ওসি ওবায়দুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইন প্রমুখ ।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, শ্মশানের বিষয়টি নিয়ে শনিবার রাতেই ইউএনও শ্মশান-সংশ্লিষ্টসহ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে আসেন। ওই আলোচনায় রবিবার যারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ করছেন তারা ছিলেন না। সেটাই তাদের আক্ষেপ। কারণ তাদের ছাড়াই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের আশ্বস্ত করে বলেছি, আপনারা একটা তারিখ এবং তালিকা দিন । আপনাদের সঙ্গেও বসা হবে। এর পর আপনারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই মানা হবে।’
এর আগে শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, উচাখিলা ইউনিয়নের বাজারের পাশেই কাঁচামাটিয়া নদী। নদীপাড় ঘেঁষে রয়েছে শ্মশানটি । ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের ফেলা বালির নিচে চাপা পড়ে গেছে শ্মশানের নির্মাণাধীন কালীমন্দির। শ্মশানের দাহকার্য সম্পন্ন করার স্থানটির পাশের পিলারও ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এই শ্মশানে শেষবারের মতো একজনের দাহকার্য সম্পন্ন হয়। চুল্লির পাশে মাটির কলসে সেই চিহ্ন পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
জানা যায়, ১৬ শতক জমি প্রায় দেড়শ বছর আগে শ্মশানের নামে দান করেন একজন হিন্দু । এর পর ১৯৪৭ সালের সিএস এবং ১৯৬২ সালের আরওআর শ্মশানের নামেই হয়। তবে ১৯৮৪-৮৫ সালের বিআরএসে শ্মশানের নাম না এসে সেটি সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানে তুলে দেওয়া হয় । ওই অবস্থায়ও শ্মশানে দাহকার্য হত। পরবর্তী সময়ে চারপাশের বিভিন্ন অংশ দখল করে মুসলিমরা । গত বছরের নভেম্বরে প্রাক্তন ইউএনও সারমিনা সাত্তার এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইকবাল হোসাইনসহ সেটি উদ্ধার করে শ্মশান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন। এর পর শ্মশানের নিজস্ব অর্থায়নে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা চলমান রয়েছে । এ অবস্থায় দেড়শ বছরের পুরোনো শ্মশানে গরুর হাট বসানোর জন্য বালি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।
উচাখিলা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আবেদীন খান সেলিম বলেন, ‘শ্মশানটি পুরোনো। আমি চাই শ্মশানের জায়গায় শ্মশান থাকুক। সেটি উচ্ছেদ না হোক। গরুর হাটের জায়গায় গরুর হাট থাকুক। ইতিমধ্যে গরুর হাটের জন্য অনেকটা খাসজমি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও উদ্ধার করা হোক। তবুও শ্মশান স্থানান্তর যেন না হয় ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউএনও এরশাদুল আহমেদের সাফাই হল, শ্মশানের কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া হয়নি। এটা নিয়ে এক ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। উচাখিলা বাজারের গরুর হাটের ইজারা হচ্ছিল না। সরকারের রাজস্ব আয়ের স্বার্থে উদ্ধারকৃত (শ্মশানের পাশেই) সরকারি খাসজমি বালি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। বালি ভরাটের সময় নির্মাণাধীন মন্দিরের ৩টি পিলার ভেঙে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার রাতেই শ্মশান-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আপাতত কাজ বন্ধ রেখে আজ সোমবার পরিদর্শন করে শ্মশান, মন্দির, স্নানঘর অক্ষত রেখে একটি স্থায়ী উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরও একটি পক্ষ ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে বিক্ষোভ করেছে। তাদের সঙ্গেও আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হবে।।

