প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৭ মে : ‘ফেক ক্রেডেনশিয়াল’ দিয়ে সরকারী কাজের টেন্ডারে অংশ নেওয়া আটকাতে গিয়ে ভয়ংকর পরিণতির শিকার হলেন খোদ সরকারী ইঞ্জিনিয়াররা । নির্মম মারধর থেকে শুরু করে গালিগালাজ,সবই আছড়ে পড়ে ইঞ্জিনিয়ারদের উপরে। প্রশাসনিক মহলেকে আতঙ্কে ফেলে দেওয়া এই ঘটনাটি বৃহস্পতিবার ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির অফিস চেম্বারের মধ্যে ।ঘটনার পর থেকে গোটা একটা দিন পেরিয়ে যাবার পরেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন অধরা রয়ে থাকায় ক্ষোভের পারদ চড়েছে রাজ্য সরকারী কর্মচারী মহলে। এমন অবস্থায় মন্তেশ্বর ব্লকের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সহ কর্মচারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে জেলাশাসকে চিঠি দিয়েছে কো-অর্ডিনেশন কমিটি।
ইঞ্জিনিয়ারদের মারধর করার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারী কর্মচারী সমিতি সমূহের রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির পূর্ব বর্ধমান জেলা শাখার সম্পাদক বিদ্যুত দাস। তিনি শুক্রবার জেলাশাসক সহ কালনার মহকুমা শাসক এবং মন্তেশ্বরের বিডিওকে চিঠি পাঠান । চিঠিতে জেলাশাসক এবং ওই প্রশাসনিক কর্তাদের বিদ্যুতবাবু জানিয়েছেন,’১৫ মে মন্তেশ্বর ব্লকের বিডিও অফিসে একটি টেন্ডার ওপেন করার সময় দেখা যায় ’ফেক ক্রেডেনশিয়াল’ দিয়ে কয়েকজন টেন্ডারে পার্টিসিপেট করেছে । তখন ইঞ্জিনিয়াররা অনলাইনে আপলোড করা ক্রেডেনশিয়ালের অরিজিনাল কপি যাচাই করে দেখতে চান। সেই কথা টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী এজেন্সিরা কাউকে ফোন করে জানায়। এরপরেই এক প্রভাবশালী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সৌভিক কুমার ঘোষকে ফেনে করে গালিগালাজ এবং হুমকি দেওয়া শুরু করেন। এর খানিক পরেই প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির অফিসে চেম্বারে ডেকে পাঠানো হয়।
বিদ্যুত দাসের অভিযোগ অনুযায়ী,সভাপতির অফিসের চেম্বারে ইঞ্জিনিয়াররা প্রবেশ করার সাথে সাথে বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই ঘরের দরজা।তার পর সভাপতির চেম্বারেই গুন্ডাবাহিনীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ইঞ্জিনিয়ারদের উপর। প্রচণ্ড মারধর থেকে শুরু করে গালিগালাজও করা শুরু হয় ইঞ্জিনিয়ারদের। এমনটা দেখে অন্য কর্মচারীর তাদের বাঁচাতে গিয়ে তারাও প্রহৃত হন। মারধরে সৌভিক ঘোষের চোখে এবং হাতের একটি আঙুলে গুরুতর আঘাত লাগে। প্রাণে বাঁচতে ইঞ্জিনিয়াররা হামলাকারীদের হাতে পায়ে ধরেন । তারপর ওই বন্ধ ঘর থেকে মুক্তি পান ইঞ্জিনিয়াররা
। বিদ্যুত বাবু তাঁর চিঠিতে এও লিখেছেন,প্রহৃত ইঞ্জিনিয়াররা এই গোটা ঘটনা সবিস্তার ব্লকের বিডিও কে জানান । কিন্তু কোন লাভ হয় না। বিডিও পরিস্কার ভাবে আক্রান্ত ইঞ্জিনিয়ারদের বলে দেন,’আমি কোন FIR করতে পারবো না।’ আক্রান্ত ইঞ্জিনিয়ারদের অতিরিক জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে বিডিও দায় সারেন । এমন ঘটনার বিহিত চেয়ে বিদ্যুত দাস জেলাাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার কথা মন্তেশ্বরের ইঞ্জিনিয়াররা স্বীকার করে নিলেও ভয়ে আতঙ্কে তাঁরা বিশেষ কিছু আর বলতে চাননি। যদিও জেলাশাসক আয়েশা রাণী এ জানিয়েছেন,’লিখিত অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেল তদন্ত করে দেখা হবে।’ অনেক চেষ্টা করেও তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমেদ হোসেন শেখের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন,’ঘটনার বিষয়ে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’ জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,’তৃণমূলের রাজত্বে চুরি-দুর্নীতি করাটা অপরাধ নয়।আপরাধ চুরি ধরাটা। তারই মাশুল গুনতে হয়েছে মন্তেশ্বরের ইঞ্জিনিয়ারদের ।’
এদিকে মন্তেশ্বরের ঘটনা নিয়ে প্রশাসনের কর্তারা কড়া পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁষছেন জেলার ইঞ্জিনিয়াররা।জেলার ইঞ্জিনিয়ার সংগঠন দাবি করেছে,’সরকারী ইঞ্জিনিয়ারদের উপর হামলার ঘটনা মন্তেশ্বর ব্লকে এই প্রথম ঘটলো এমনটা নয় । এর আগে একাধিক বার এমন ঘটনা ঘটেছে।মন্তেশ্বর বাদে পূর্ব বর্ধমান জেলার আর কোন ব্লকে ইঞ্জিনিয়ারদের এমন হামলা আক্রমণের মুখে পড়তে হয় না। যে ভাবে বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ারদের মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির অফিসের চেম্বারে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়েছে ,তা সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।ঘটনার প্রতিবাদে আগামী সোমবার জেলার সকল ইঞ্জিনাররা “পেন ডাউন“ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্থ নিয়েছেন ।পাশাপাশি তারা মুখ্যমন্ত্রীকেও ঘটনার সবিস্তারে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।।

