এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১৫ মে : রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সুপ্রিম কোর্টকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে সংসদ কর্তৃক পাস হওয়া বিলগুলি অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের সময় নির্ধারন করার এক্তিয়ার কি আদালতের আছে ? রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সুপ্রিম কোর্টকে সংবিধানের ২০০, ২০১, ৩৬১, ১৪৩, ১৪২, ১৪৫(৩) এবং ১৩১ ধারা সম্পর্কিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন । প্রকৃতপক্ষে, সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি বলেছে যে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিলটি অনুমোদন না করেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে বিলটি পাস হয়েছে। একে বলা হয় ‘ডিমড অ্যাসেন্ট’ অর্থাৎ ‘স্বয়ংক্রিয় অনুমোদন’।
এমন পরিস্থিতিতে, রাষ্ট্রপতি জিজ্ঞাসা করেছেন যে যখন কোনও বিল রাজ্যপালের কাছে আসে, তখন তার কাছে কী বিকল্প থাকে এবং রাজ্যপাল কি মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ অনুসরণ করতে বাধ্য ? রাষ্ট্রপতি বিশ্বাস করেন যে আদালতের এই সিদ্ধান্ত তার এবং রাজ্যপালের সাংবিধানিক ক্ষমতা হ্রাস করে। তাই, তারা এই বিষয়ে মতামতের জন্য ভারতের সংবিধানের ১৪৩(১) ধারার অধীনে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৪৩(১) রাষ্ট্রপতিকে আইনি বা জনগুরুত্বপূর্ণ যেকোনো প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার ক্ষমতা দেয়। একে রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সও বলা হয়।
রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টে মোট ১৪টি প্রশ্ন পাঠিয়েছেন। এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে হলে, সুপ্রিম কোর্টকে কমপক্ষে পাঁচজন বিচারকের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করতে হবে। এই প্রশ্নগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের অধিকার, তাদের ভূমিকা এবং আদালতের ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন যে সংবিধানের ২০০ এবং ২০১ অনুচ্ছেদে, যা বিলগুলিতে সম্মতির পদ্ধতি নির্ধারণ করে, কোনও বিলের সম্মতির জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে এমন কোনও নিয়ম নেই। সংবিধানে ‘সম্মতিক্রমে বিবেচিত’ বলে কিছু উল্লেখ নেই।
রাষ্ট্রপতি এই ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন
১)যখন বিলটি রাজ্যপালের কাছে আসে, তখন তার কাছে কী কী বিকল্প থাকে?
২)বিলের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কি রাজ্যপালকে মন্ত্রীদের পরামর্শ অনুসরণ করতে হবে? রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত কি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে?
৩)সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদে কি বলা আছে যে রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত আদালতে তোলা যাবে না?
৪) যখন সংবিধানে কোন সময়সীমা নেই, তখন আদালত কি রাজ্যপালকে কখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারে?
৫)রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত কি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে?
৬)আদালত কি রাষ্ট্রপতিকে বিলটি সম্পর্কে কখন এবং কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা বলতে পারে?
৭)রাজ্যপাল যদি রাষ্ট্রপতির কাছে বিল পাঠান, তাহলে কি রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে হবে?
৮)কোনও বিল আইনে পরিণত হওয়ার আগে কি আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে?
৯)১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্ট কি রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে?
১০)রাজ্যপালের অনুমোদন ছাড়া বিধানসভায় পাস হওয়া কোনও বিল কি আইনে পরিণত হতে পারে?
১১)সংবিধান কি বলে যে প্রধান আইনি প্রশ্নগুলি পাঁচ বিচারপতির একটি বেঞ্চে পাঠানো উচিত?
১৩)সুপ্রিম কোর্ট কি ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে এমন কোনও আদেশ দিতে পারে যা সংবিধান বা আইনের বিরুদ্ধে?
১৪)কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ কি কেবল ১৩১ অনুচ্ছেদের অধীনেই সমাধান করা যেতে পারে, নাকি আদালতের কাছে অন্য কোনও বিকল্প আছে?
এই প্রশ্নগুলি কেবল সময়সীমা নির্ধারণের বিষয় নয়। এগুলো রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের সাংবিধানিক ভূমিকা, তাদের ক্ষমতা এবং আদালতের ক্ষমতার পরিধির সাথে সম্পর্কিত। এখন সুপ্রিম কোর্টকে এই প্রশ্নগুলি গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে এবং একটি স্পষ্ট মতামত দিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত দেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থা এবং কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।।

