এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১১ মে : জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর চাপে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস । সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে । বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া দলটিকে এখন জুলাই আন্দোলন দমনে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সেজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা শেষে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামী লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর কথিত ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।এখন বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল শেখ হাসিনার সরকার পতনের তিন দিন পর অনৈতিক ভাবে ক্ষমতায় আসা মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। উপদেষ্টা পরিষদের সভার এই সিদ্ধান্ত টেলিভিশনের লাইভে প্রচারিত হওয়া মাত্র শাহবাগ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারী জঙ্গিগোষ্ঠীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ।
অনেকেই স্লোগান ধরেন, ‘এ মুহূর্তে খবর এল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হল’। আর এক ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী জামায়াতে ইসলামী মধ্যরাতে রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তায় শোকরানা সমাবেশের আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল বের করেন বিভিন্ন হলের আবাসিক মৌলবাদী শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নামে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির হামলার কারনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দলটির নেতা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে আসেন । এর তিন দিনের মাথায় মৌলবাদী মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের সময় হতাহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ডজন ডজন মামলা হতে থাকে।
আওয়ামী লীগের সময়ে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল, সেই একই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থান দমাতে গিয়ে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা কথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। তবে ওই দাবিতে জোরালো আন্দোলন শুরু হয় তিন দিন আগে।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেয় একদল বিক্ষোভকারী। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার জুমার পর তারা মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখে মঞ্চ বানিয়ে সেখানে সমাবেশ করেন। সেখান থেকে হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা করে । সেদিন বিকাল থেকেই তারা টানা অবস্থান করছিলেন শাহবাগে। শনিবার বিকালে সেখানে গণজমায়েত করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবি তারা তুলে ধরে । পুরোটাই ছিল মহম্মদ ইউনূস ও জামাত ইসলামি,বিএনপি, হিযবুত সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর সাজানো চিত্রনাট্য ।।

