এইদিন ওয়েবডেস্ক,পূর্ব মেদিনীপুর,০৬ মে : দিঘায় “জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টার” উদ্বোধনের পর থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধছে । দিঘার ওই ‘কালচারাল সেন্টার’কে “জগন্নাথ ধাম” তকমা দেওয়া এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে পবিত্র ‘নিম কাঠ চুরি’ করার অভিযোগ ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয় । হিন্দুদের প্রতিবাদের জেরে দিঘায় “জগন্নাথ ধাম” লেখা সাইনবোর্ড খুলে নেওয়া হয়েছে বলে সোমবার জানান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়,কিছু নির্দিষ্ট স্থান থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার শ্রী দীঘা জগন্নাথ ধামের বিভিন্ন সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলেছে।’
আজ মঙ্গলবার শুভেন্দু জানিয়েছেন যে দিঘাতে ফের “জগন্নাথ ধাম” লেখা হচ্ছে । মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স-এ তিনি একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন । ভিডিও রেকর্ড করা এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গেছে, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে নাকি জগন্নাথ ধাম লেখাটি তুলে নেওয়া হয়েছে । কিন্তু আবার নতুন করে লাগানো হচ্ছে দিঘার জগন্নাথ ধাম । অনেক বিতর্ক হচ্ছিল জগন্নাথ ধাম নিয়ে । কিন্তু আবারো নতুন করে লাগানো হচ্ছে জগন্নাথ ধাম ।’
ভিডিওর পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশ মমতা সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রাথমিক কর্তব্যের চেয়ে রাজনৈতিক ক্ষতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তা দেখে খুবই মজা লাগছে। এই পোস্টটি মূলত একটি সাংস্কৃতিক বিরোধে আপনার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ করে । আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির শাসক দলের জনসংযোগ পরিচালনার কাজে জড়িত থাকা উচিত নয়। এই বিতর্কে “তথ্য-পরীক্ষক” এর ভূমিকা গ্রহণ করে, আপনারা প্রকাশ্যে তৃণমূলের প্রচারণার সাথে নিজেকে যুক্ত করেছেন। জয় জগন্নাথ।’
প্রসঙ্গত,মন্দিরের পাশে লেখা ‘দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে কেন ‘ধাম’ বলা হচ্ছে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিতর্ক চলছে। মন্দিরের ডান দিকে জাতীয় সড়কের উপর ইংরেজি হরফে ‘জগন্নাথ ধাম’ লেখা নীল রঙের সেই বড় কাঠামো নজরও কেড়েছিল অনেকের। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের দিনও তা ছিল। কিন্তু রবিবার সেই কাঠামো উধাও হয়ে যায় ! যা নিয়ে ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয় রাজ্য জুড়ে । প্রশ্ন উঠছে যে জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে এত উন্মাদনা, সেই মন্দিরের পাশ থেকে কেন এ রকম ‘সুদৃশ্য’ কাঠামো সরিয়ে নেওয়া হল ? যদিও ফের সেই সাইনবোর্ড লাগানো হয় তাহলে কেন লাগানো হচ্ছে ?
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে ‘ধাম’ তকমা দেওয়া নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিতর্ক চলছে। অনেকেরই মতে, নানা অভিধান অনুসারে, ধামের অর্থ হল তীর্থস্থান বা আবাস। আবাস সাধারণ মানুষেরও হতে পারে। যেমন, মাতৃধাম। আবার দেবতার নামেও হতে পারে। যেমন, গোলোকধাম। কিন্তু তীর্থস্থান হতে গেলে দেবতা বা মহাপুরুষের লীলা বা অধিষ্ঠানক্ষেত্র হতে হবে। ধাম কথার অর্থ তেজ, জ্যোতিও হয়। “জয়তি কনকঃ ধামা কৃষ্ণ চৈতন্য নামে” । অনেকের ব্যাখ্যা, তেজোদ্দীপ্ত কেউ জন্মগ্রহণ করলে কিংবা প্রতিষ্ঠা করলে সেটা ধাম হতে পারে। নবদ্বীপে চৈতন্যদেবের জন্ম। তাই সেটি ধাম। ফলে এই সংজ্ঞায় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে ধাম বলা যায় না। যা ক্ষমতার বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি করতে চাইছেন । বাংলা ও উড়িষ্যার হিন্দুরা বিষয়টি ধর্ম অবমাননা হিসাবেই দেখছেন ।
বিষয়টি নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই ‘জগন্নাথ ধাম’ লেখা কাঠামো মন্দিরের পাশ থেকে সরতেই এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন শুভেন্দু। তার ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি।
যদিও স্থানীয় প্রশাসনের সাফাই, বিতর্কের কারণে ওই কাঠামো সরানো হয়নি। সেটি অস্থায়ী কাঠামো ছিল। উদ্বোধনের পর দিনই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রামনগরের (দিঘায় রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রেরই অন্তর্গত) বিধায়ক অখিল গিরি বলেন,মন্দির উদ্বোধনের সময়েই ওই অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। উদ্বোধনের পর দিনই তা সরিয়ে ফেলা হয়। এর পিছনে আর অন্য কোনও কারণ নেই। পাশে চৈতন্যদ্বারের নির্মাণকাজ চলছে। তা শেষ হলে আবার ওই রকম কাঠামো বসানো হবে।’ কিন্তু চৈতন্যদ্বারের নির্মাণকাজ এখন চলছে৷ তার মাঝেই থার্মোকল দিয়ে কেন ফের “জগন্নাথ ধাম” লেখা হচ্ছে ? এই প্রশ্ন উঠছে এলাকায় । এর আগে পুরীর মন্দির থেকে “নিম কাঠ চুরি” বিতর্কে দিঘার মন্দিরের পুজারি রাজেশ দয়িতাপতিকে শো কজ করে উড়িষ্যা কর্তৃপক্ষ ।।