এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৫ মে : বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ধর্ম পরিচয় নিয়ে উড়িষ্যার পুরীর জগন্নাথ ধামের পান্ডারা সন্দিহান । সেকথা খোদ মমতাই মিডিয়ার ক্যামেরার সামনে কবুল করেছিলেন । তিনি বলেছিলেন,’আমায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি । কারন আমি নাকি মুসলিম । বোঝো কান্ড! কার কি ধর্ম পরিচয় সেটা ওরা ঠিক করে দেবে নাকি?’ সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই মূলত সরকারি অর্থে দিঘায় জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টার তৈরি করতে উদ্যোগী হন মমতা ব্যানার্জি । কিন্তু উদ্বোধনীর দিন তার একটা ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে । বিশেষ করে উড়িষ্যার চ্যানেলগুলিতে সেই ভিডিও সম্প্রচার করা হয় । ভিডিওতে মমতার কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেখা যায় পুরোহিত রামকৃষ্ণ দাস মহাপাত্রকে । প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সেই চন্দনের ফোঁটা রুমাল দিয়ে মুছে দেন তিনি । অবশ্য মমতা ক্যামেরার লেন্সের ফোকাস আড়াল করার চেষ্টাও করেন । কিন্তু ততক্ষণে চন্দনের ফোঁটা মুছে দেওয়ার দৃশ্য রেকর্ড হয়ে যায় । কিন্তু আজ মুর্শিদাবাদ সফরের প্রথম দিনেই সেই মমতার বাম হাতে লাল তাগা লক্ষ্য করা গেছে । যা সাধারণত নজরে পড়ে না বলে দাবি বিজেপির । একারনে মমতা ব্যানার্জির হিন্দুত্ব নিয়ে বিভ্রান্ত সাধারন মানুষ৷
এদিকে দিঘায় কপালের চন্দনের ফোঁটা মুছে দেওয়ার ভিডিওকে হাতিয়ার করে মমতাকে তুলোধুনো করছেন বিজেপির নেতানেত্রীরা । বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় ভিডিওটি এক্স-এ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘মন্দির বানিয়ে কি লাভ যখন সেই প্রভুর পায়ের চন্দন আপনি মাথায় নিতেই চান না , এই ছলনার কি ব্যাখ্যা দেবেন?’ একই ভিডিও শেয়ার করে বিজেপি নেতা ও অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ ফেসবুকে লিখেছেন,’হিন্দু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জগন্নাথদেবের পুজোর পবিত্র চন্দন দ্রুত মুছে ফেললেন কপাল থেকে। কি প্রমাণ দিলেন?এই আচরণ প্রিয় জগন্নাথদেব এবং হিন্দু ধর্মে আচারের পক্ষে কিসের ইঙ্গিত? কোন ধর্মকে অসম্মান আর কোন ধর্মকে খুশী করার জন্য এই অনাচার করলেন তিনি দীঘায়? কদিন আগেই বিধানসভায় বলেছিলেন ” মহাকুম্ভ মৃত্যুকুম্ভ”, পবিত্র ঈদের মঞ্চ থেকে হিন্দুধর্মকে ” গন্দা ধর্ম” বলেছিলেন। দলমত ঝান্ডা ভুলে সনাতনী হিন্দুরা ভাবুন!’
প্রসঙ্গত, দিঘায় মন্দির নির্মানের পর থেকেই একের পর এক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে । “ধাম” নামকরণ এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে নিমকাঠ চুরির অভিযোগ ঘিরে বাংলা ও উড়িষ্যায় তোলপাড় চলছে৷ আজ মুর্শিদাবাদ সফরে ওড়িশা প্রশাসনের উদ্দেশে মমতা এই সমস্ত বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন,’কালীঘাটে, দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক তৈরি করলে কেউ কিছু বলে না। আর জগন্নাথ ধামটা গায়ে লেগে গেল! বলা হচ্ছে নাকি নিমকাঠ চুরি করেছি। নিমকাঠ চুরি করব কেন? আমার বাড়িতেই তো চারটে নিমগাছ আছে। চুরি করব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অবস্থা এখনও হয়নি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জগন্নাথ মূর্তি তো কিনতেও পাওয়া যায় ।’
তিনি আরও বলেন,’শুনছি নাকি দিঘার মন্দিরে যেতে বারণ করা হচ্ছে। কেন? আমি তো পুরী যাই। এত হিংসা? আমি কিন্তু ওড়িশাকে ভালবাসি। ওদের আলুর অভাব হলে বাংলা যোগায়। সাইক্লোন হলে সাহায্য করে।’ দিঘার মন্দিরকে জগন্নাথধাম হিসেবে উল্লেখ করা নিয়েও আপত্তি আছে ওড়িশা সরকারের। সে রাজ্যের মন্ত্রী হরিচন্দ্রন পুরী মন্দির প্রশাসনকে এই বিষয়ে একটি চিঠি লিখেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ওই মন্দিরে পুরীর সেবায়েতদের অংশগ্রহণ এবং উদ্বৃত্ত পবিত্র কাঠ দিয়ে দিঘার বিগ্রহ তৈরি করা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও আজ দিঘায় “জগন্নাথ ধাম” সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।।