এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ এপ্রিল : গত বুধবার দিঘার জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টারের উদ্বোধনে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ সস্ত্রীক হাজির হয়ে বিজেপির মধ্যে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন।। সদ্য মুর্শিদাবাদের হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনার আবহে দিঘাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দিলীপ ঘোষের হাসি মুখের ছবি কেউ মেনে নিতে পারছেন না । দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদাররা প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন, দিলীপের আচরণ বিজেপি অনুমোদন করছেন না। দিলীপ ঘোষের নাম উচ্চারণ না করলেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যে তাঁর পদক্ষেপকে ভালো চোখে নেননি, সেকথা আকারে- ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিজেপির বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা যেমন দিলীপের সমালোচনা করছেন, দিলীপও তেমনি কড়া ভাষায় পালটা জবাব দিচ্ছেন। ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং-এর কথায়, ‘উনি দলের ক্ষতি করে দিচ্ছেন’ । যদিও আজ শনিবারেও দিলীপ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে দিঘায় গিয়ে তিনি কিছু ভুল করেননি । তিনি বলেছেন, “দিঘায় গেছি বেশ করেছি” ।
বিজেপি নেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কৌস্তুভ বাগজী বলেছিলেন যে দিলীপ ঘোষের মধ্যে “আমিত্ব ভাবটা” বেশি । তার দাবিটা যে নিছক মিথ্যা নয়, আজও বিজেপির এই বর্ষীয়ান নেতার কথায় সেটা স্পষ্ট । দিলীপ ঘোষ বলেন,’বিতর্ক হোক না , আমাকে নিয়ে বিতর্ক হয়ই । আমাকে নিয়ে বিতর্ক করে অনেকের টিআরপি পাওয়ার চেষ্টা করে । যাদের কোনদিন ছবি দেখা যায় না তাদের দেখা যাচ্ছে ।’
দিঘা ইস্যুতে দিলীপ ঘোষকে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করতে দেখা গেছে বারবার । পাশাপাশি নব্য পুরনো ইস্যুকেও সামনে আনছেন তিনি । আজও এই ইস্যুতে তিনি বলেছেন,’জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মুখ্য সচিব। আমি সপরিবারে গেছিলাম। তারপর সেখানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর গেস্ট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। তাই সৌজন্য দেখিয়ে আমি গেছিলাম। আমরা ছোটলোক নই যে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখলেই চলে যাব।এ কারণে অনেকের পেট ব্যাথা হচ্ছে । কাদের হচ্ছে ? যারা একসময় মমতা ব্যানার্জির আঁচলের তলায় বসেছেন, তার হাতে দুধ খেয়ে বড় হয়েছেন, কয়লা -গরু-বালি থেকে তোলা টাকার ভাগ নিয়েছেন । শেষ দিন পর্যন্ত ওরা যখন দেখলেন সুবিধা হচ্ছেনা তখন তারা এদিকে চলে এলেন । কাজেই আমার বিরুদ্ধে যারা যা বলছে সেগুলো দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একটা অভিযানের অংশমাত্র। এরা বিরোধী দলে থেকে আমার কিছু করতে পারেনি, তারা দল পরিবর্তন করে আমার দলে এসে আমার কি ক্ষতি করবে?’
তৃণমূলে যোগদানের বিষয়ে যে জল্পনা হচ্ছে তা নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন,’এখন একটা ছাপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে যে দিলীপ ঘোষ নাকি টিএমসিতে যাবে । মমতা ব্যানার্জিও জানে যে দিলীপ ঘোষ টিএমসিতে যাবে না । যারা বলছেন তারা কিন্তু ফিরে যাবেন । তারা এক রাত কাটায় টিএমসির বাড়িতে, এক রাত কাটায় বিজেপির বাড়িতে । সে দিলীপ ঘোষের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিচ্ছে । অর্জুন সিংকে নিশানা করে দিলীপ ঘোষ বলেন, আমি বিধায়ক থাকার সব বিধায়কের সঙ্গে কথা হতো। অর্জুন সিং এর সঙ্গেও কথা হয়েছে । কিন্তু ক্যামেরা দেখলে পালিয়ে যেত । কারণ ছবি তুললে ওর চাকরি চলে যাবে । সতি সেজো না ।’ তিনি বলেন, ‘যেকোনো সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আমাকে লোক ডাকে । আমি যাইও । আর ওখানে (দিঘা) গেছি আমি ঠিক করেছি ।’
উল্লেখ্য, একের পর তোপ দাগার কারণে ২০২৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনের আগে নিজের দলকেই বিপাকে ফেলে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ । তার এই বিতর্কের কারণে মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ইস্যুটি ধামাচাপা পড়ে গেছে৷ এ নিয়ে তৃণমূলের ষড়যন্ত্র দেখছে বিজেপির নেতারা । কিন্তু দিলীপ ঘোষও নিজেকে ব্যবহারের জন্য তৃণমূলকে সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে । এ কারণে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং বিজেপি যৌথভাবে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে । তার নিরাপত্তা রক্ষী তুলে না হলেও দলীয় কর্মসূচিতে দিলীপ ঘোষকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে । যেটা জানা যাচ্ছে যে দলীয় কোন কর্মসূচিতে দিলীপ ঘোষ তার ডাকা হবে না এবং দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত কর্মসূচিতেও দলের কোন নেতা উপস্থিত থাকবে না । যদিও এই নিষেধাজ্ঞার পরেও ‘ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখা যাচ্ছে দিলীপ ঘোষের মধ্যে ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব দেখা যাচ্ছে দিলীপ ঘোষের মধ্যে । যাতে রাজ্য বিজেপিকে অনেকটা ব্যাক ফুটে এনে দিয়েছে।।