শ্যামসুন্দর ঘোষ,কলকাতা,০১ মে : বুধবার দিঘায় জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্ত্রীক উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা দিলীপ ঘোষ । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাকে খোশ মেজাজে কথাও বলতে দেখা গেছে । মুখ্যমন্ত্রী নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে সেই ভিডিও পোস্ট করেছেন । তারপর থেকে দলের রাজ্য নেতা থেকে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের নিশানায় রয়েছেন দিলীপবাবু । গত মাসে মুর্শিদাবাদে ঘটে যাওয়া হিন্দুদের উপর হামলার পর দিলীপ ঘোষের এহেন আচরণকে হিন্দুদের সঙ্গে “বিশ্বাসঘাতকতা” হিসাবে দেখছেন তারা । দিলীপ সমালোচকদের তালিকায় এবারে নবতম সংযোজন হলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় ।
তিনি আজ বৃহস্পতিবার মমতা ও সস্ত্রীক দিলীপের পাশাপাশি বসে থাকার ছবি এক্স-এ পোস্ট করে লিখেছেন,’বিজেপি থেকে তৃণমূল পলায়ন আরম্ভ হয়েছিল পরশ দত্ত, কর্নেল বাগচী থেকে। আজ তাঁরা কোথায় ? কংগ্রেস থেকে বিজেপি, সেখান থেকে তৃণমূল। পরিব্রাজক জয়প্রকাশ মজুমদার আজ লাথি খেয়ে কচুবনে। সেখানেই কি বাকি জীবনটা কাটবে ? রাজনীতি-গায়ক বাবুল সুপ্রিয় প্রথম একাদশে খেলতে চেয়েছিলেন।হায়, আজ ডি-টিমেও জায়গা পাচ্ছেন না!এবার নববিবাহিত, আহ্লাদে বিগলিত দিলীপ ঘোs ! ভাগ্য (এবং দিদিমা) তাঁকে কোথায় নিয়ে যাবে, কে জানে? (দীর্ঘনিঃশ্বাস)।’
এদিকে দলের ভিতরে প্রবল সমালোচনার মুখে পরে পালটা আক্রমণ করেন দিলীপ ঘোষ । তিনি আজ বলেছেন, বড় বড় কথা কারা বলছে ? যারা মমতা ব্যানার্জি আঁচলের তলায় থেকে রাজনেতা হয়েছে । যারা কালীঘাটের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন কাটিয়েছে তারা আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলছে৷ আজকে তারাই বিজেপির উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে আছে । তারাই দিলীপ ঘোষ কে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিচ্ছে । কি ত্যাগ করেছেন? চার পয়সা ত্যাগ নেই । বিজেপিতে কামাতে এসেছেন ।’
দিলীপ ঘোষের সাফাই হল,’আমার পাড়ায় বিয়ে হচ্ছে তৃণমূলের নেতার বাড়িতে সে টিএমসি করে বলে আমি তার বিয়ের অনুষ্ঠানে যাব না, এই ধরনের জঘন্য, নিম্নরুচির রাজনীতি দিলীপ ঘোষ করে না এবং করবেও না৷ এটা আমি ঘৃণা করি । আমার জামাই যদি অন্য পার্টি করে তাহলে আমার মেয়ের বাড়ি আমি যাব না ? এই রাজনীতি দিলীপ ঘোষ করে না করবেও না । যারা এটা করতে চাইছে এবং বিজেপির মধ্যে এই অপসংস্কৃতি আনতে চাইছে তারা আসলে বিজেপি কি জানেনা । তারা দিলীপ ঘোষ কে চেনো না । এর পেছনে কত ত্যাগ তপস্যা আছে জানেনা । যারা ২০,২১ সালে বিজেপিতে এসেছে তারা বিজেপিকে বুঝতে পারবে না । কেউ কেউ আরএসএস দেখাচ্ছে, কেউ হিন্দুত্ব বোঝাচ্ছে, দিলীপ ঘোষ কে হিন্দুত্ব বোঝাবেন না। আমার শরীর কাটলে হিন্দু রক্ত বেরুবে, বিজেপির রক্ত বেরোবে । বাকিদের গায়ে কি রক্ত আছে আমি জানিনা । কারণ বহু জায়গায় ঘুরে এসেছেন তারা ।
যারা চারটে বিয়ে করে ১৪ টা গার্লফ্রেন্ড রাখে, রাতে জীবন এক রকম দিনের জীবন এক রকম, তারা আমাকে ত্যাগী ভোগী বলছে । আহাম্মক । রাস্তায় দাঁড়িয়ে বল । লোকে কি বলবে,দিলীপ ঘোষ কালকেও দাঁড়িয়েছিল আজকেও দাঁড়িয়ে আছে । মানুষ জানে দিলীপ ঘোষ কি করেছে দিলীপ ঘোষ কি । আমার মন আর মুখ এক । আমি পর্দার আড়ালে কথা বলি না । কোন নেতার সঙ্গে বন্ধ ঘরে মিশিনা আমি । আমি চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলি । ক্যামেরার সামনে কথা বলি । এটাই দিলীপ ঘোষ । তাতে যদি কারো কষ্ট হয় আমার কিছু করার নাই । দিলীপ ঘোষের মিশন ঠিক আছে । দিলীপ ঘোষ পাল্টাবেনা, তার নীতি পাল্টাবে না । দিলীপ ঘোষ বাংলাকে পাল্টাতে এসেছে । অর্ধেকটা হয়ে গেছে । যারা কোনদিন পার্টির জন্য কন্ট্রিবিউশন করেননি তারা দিলীপ ঘোষ কে বুঝতে পারবেন না । সেজন্য কষ্ট পাওয়ার কোন কারণ নেই । দিলীপ ঘোষ আছে, পার্টির প্রয়োজন হলে দিলীপ ঘোষ থাকবে ।’ তিনি বলেন, যে কর্মীরা আবেগে ভাসছেন, এটা আবেগে ভাসার সময় নয় । যদি সত্যি সংকট আসে তাহলে লড়াই করুন ।’
সবশেষে তিনি বলেছেন,’মন্দির সবাইকে মেলায় , মিলনের জায়গা মন্দির , ভারতবর্ষের সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হলো মন্দির …দীঘায় যে জগন্নাথ মন্দির হয়েছে সেটা জনগণের টাকায় তৈরী , সেটা কোনো পার্টির বা কোনো ব্যক্তিগত মন্দির নয় , তাই আমার আপনার সবার এখানে আসার অধিকার আছে৷ জয় জগন্নাথ ।’
যদিও দিলীপ ঘোষের এই সাফাইয়ের পরে তথাগত রায় ফের একটা পোস্ট করেছে এক্স হ্যান্ডেলে। সেখানে তিনি লিখেছেন,’এইচ-ডি হবার দরকার নেই, কিন্তু ন্যূনতম শিক্ষাদীক্ষাটুকু প্রয়োজন। তা ছিল না বলেই দিলীপ ঘোশহকে রাজ্য সভাপতির মত উচ্চপদে বসানো মারাত্মক ভুল হয়েছিল। মাথা ঘুরে গিয়েছিল, ধরাকে সরা ভাবতে শুরু করেছিল। এদিকে হীনমন্যতাও ছিল, তাই নির্বাচনী এফিডেভিটে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্বন্ধে মিথ্যাকথা লিখেছিল, যা দণ্ডনীয় অপরাধ। TV9 বাংলা চ্যানেলের অমৃতাংশুর কাছে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা দেশকে ‘পেচ্ছাব- পাইখানা’ (হ্যাঁ, এই ভাষাতে) ছাড়া কিছু দেয় নি।
২০১৯ সালে সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপির সাফল্য দেখে সবাই ধন্য ধন্য করতে লাগল, ভুলে গেল সেই বছরই তিনটে উপনির্বাচনে বিজেপি শূন্য পেল। এই সময় কামিনীকাঞ্চন-আসক্ত এক শিম্পাঞ্জির মত দেখতে বিজেপি নেতার কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ায় দিলীপের সুবিধা হল। The Week পত্রিকায় নিজেকে ভাবী মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দিল, দপ্তর বন্টনও করে দিল। তারপর হেরে যাবার পরে যখন বিজেপি কর্মীরা বেধড়ক মার খেতে লাগল তখন নিজে দশ জন রক্ষীবেষ্টিত হয়ে তাদের জ্ঞান দিত। বিদায় হয়েছে, ভাল হয়েছে। আমি বৃদ্ধ, অবসরভোগী, দিলীপ বাবাজীবনের সুখী সমৃদ্ধ বিবাহিত জীবন কামনা করি। টাকার তো অভাব নেই! কেবল আমরা যেন একই ভুল আর না করি।’।