গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা ২৮ জন হিন্দু পর্যটকের নরসংহারের পর সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি বাতিল করা ছাড়া এখনো পর্যন্ত কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার । ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ চাইছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভয়ংকর প্রতিশোধ । তাই তারা পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার দীর্ঘ ৯ দিন পরেও মোদী সরকার কোনো কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় মোদী সরকারের উপর চরম ক্ষুব্ধ । আসলে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান না চালালেও মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ক্রমশ দুর্বল করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ।
পাকিস্তানি বংশভূত মার্কিন নাগরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডঃ আমজাদ আয়ূব মির্জা দাবি করেছেন, পাকিস্তান ও ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্তে প্রাগওয়াল সেক্টরে (Pragwal sector) পাকিস্তানি সেনারা তাদের পিস্তল ত্যাগ করে পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে চলে গেছে বলে জানা গেছে। তিনি একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ভারত এবং পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমান্তে জম্মুর প্রাগওয়াল সেক্টরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিজেদের ফ্রন্ট ছেড়ে পালিয়ে গেছে । যাওয়ার সময় তাদের দেশের জাতীয় পতাকাও খুলে নিয়ে চলে গেছে । ওরা এতটাই ভয় পেয়েছে । আন্তর্জাতিক সীমান্তে ওরা নিজেদের পোস্টকে একবারে খালি করে দিয়েছে এবং ওখান থেকে চলে গেছে । আমার মনে হল যে এই খবর আপনাদের দেওয়া দরকার । এরপর কোন আপডেট পেলে আপনাদের সামনে তুলে ধরব ।’
তিনি আরো বলেন, খাইবার পাখতুনখোয়া থেকে কিছু ভিডিও সামনে এসেছে । যেখানে মানুষকে বলতে শোনা গেছে আমরা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না । তারা পাঞ্জাবের কে নিয়ে হাসছে। তারা বলছে যে এবার পাঞ্জাব নিজেরাই লড়ুক । বেলুচিস্তানের লোকেরা বলছে যে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গ দেবো না। সিন্ধু প্রদেশ এখন বর্তমানে বন্ধ কারণ সিন্ধু নদীতে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে তারা অসন্তুষ্ট । তার জায়গায় বিগত ১৪ দিন ধরে সিন্ধু প্রদেশ বন্ধ রয়েছে । এখন দেখার বিষয় কি হয় । কিন্তু পাকিস্তানের প্রথম উইকেট পড়ে গেছে… প্রাগওয়াল সেক্টরে (Pragwal sector) পাকিস্তানি সেনারা তাদের পোস্ট ছেড়ে পালিয়েছে ।’
প্রাক্তন মেজর জেনারেল জিডি বক্সির কথায়, প্রধানমন্ত্রী মোদী তিন সেনাপ্রধানকে স্বাধীনতা দেওয়াটা মিসেস গান্ধীর এফডি মিসেল স্যাম মানেকশকে স্বাধীনতা দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের এখন পাকিস্তানের উপর কঠোর শাস্তি আরোপ করতে হবে। আমাদেরকে এর জন্য মূল্য এবং পরিণতি আরোপ করতে হবে। এর ফলে সীমিত যুদ্ধ হতে পারে যেখানে তিন সেনাই একযোগে কাজ করবে। এই সীমিত যুদ্ধ পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ডুবিয়ে দেবে। ১৯৯০ সালে সোভিয়েত অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৫টি রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। অর্থনীতি ভেঙে পড়লে পাকিস্তান ৫টি রাজ্যে বিভক্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেছেন,গতিশীল সামরিক প্রতিক্রিয়ার বিকল্পগুলির ম্যাট্রিক্স। এমনকি একটি সীমিত যুদ্ধও পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেবে। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে লক্ষ্য রাখি এবং করাচিতে আংশিক বা সম্পূর্ণ নৌ অবরোধ আরোপ করি এবং মূলধন সামরিক সরঞ্জামেরও গুরুতর ক্ষতি করি – পাকি সেনাবাহিনী যুদ্ধের পরে তাৎক্ষণিক প্রতিস্থাপন দাবি করবে এবং পাকি অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে!’
প্রাক্তন মেজর জেনারেল জিডি বক্সি মনে করছেন, জেনারেল আসিফ মুনির শীঘ্রই অবসর নিতে চলেছেন। সমস্ত পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের মতো, তিনিও মেয়াদ বাড়াতে চান। তাই ৬ দিন আগে তিনি বিদেশী পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে এক অদ্ভুত ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি “হিন্দু” ভারতের বিরুদ্ধে সভ্যতা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এর পরেই পহেলগামে হামলা হয় যেখানে এলইটি-র সহযোগী সংগঠনের ছয় পাকিস্তানি সন্ত্রাসী ২৬ জন নিরীহ ভারতীয়কে গুলি করে হত্যা করে এবং ১৭ জনকে আহত করে। গুলি করার আগে তারা তাদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে। হিন্দুদের ঠান্ডা মাথায় গুলি করা হয়েছিল। এটি ছিল একটি ভয়াবহ উস্কানি। ভারত এখন পর্যন্ত সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করেছে এবং ছোটখাটো কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। তবে আরও অনেক কিছু করার আছে। পাকিস্তানকে এই ধরণের ব্যাপক হতাহতের সন্ত্রাস থেকে বিরত রাখতে হলে গতিশীল সামরিক পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্টভাবে এই হুমকি দিয়েছেন। এটি কেবল আরেকটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা বালকোট স্টাইলের বিমান হামলা হতে পারে না। এগুলো ছিল বার্তা – পুরো আঘাত। আমাদের এখন টেকসই এবং উল্লেখযোগ্য হামলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে, যেখানে আমরা কমপক্ষে ২-৩ ধাপ উপরে উঠতে প্রস্তুত, যাতে এটি বিশ্বাসযোগ্য হয়। পাকিস্তানের উপর এর মূল্য এবং পরিণতি চাপিয়ে আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে। টিভিতে আমাদের দরিদ্র মেয়েদের, যারা তাদের স্বামী এবং অনাথ শিশুদের হারিয়েছে, তাদের কাঁদতে দেখা হৃদয় বিদারক।’।