এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোচবিহার,২২ এপ্রিল : শাসকদলে যোগ দেওয়া দলবদলুদের মধ্যে একটা সাধারণ মন্তব্য শোনা যায় । আর সেটা হল, “মমতা ব্যানার্জির উন্নয়নে অনুপ্রাণিত হয়ে উন্নয়ন কাজে অংশীদার হওয়ার জন্যই আমি তৃণমূলে যোগদান করলাম” । যদিও সেসব ক্ষেত্রে “উন্নয়নে অনুপ্রাণিত” হওয়ার চেয়ে “করেকম্মে খাওয়ার” গোপন অভিসন্ধি বেশি কাজ করে বলে অভিযোগ । কিন্তু কোচবিহারের নাটাবাড়ী বিধানসভার বিজেপির ৫ নম্বর মহিলা মোর্চার মণ্ডল সভানেত্রী জবা দেবনাথ সোমবার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার যে কারন উল্লেখ করেছে তা চমকে দেওয়ার মত । জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দেব ভৌমিকের পাশে বসে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে দ্ব্যর্থ্যহীন ভাষায় তিনি তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি করার জন্য আমার বাড়িতে একাধিকবার তৃণমূলের লোকেরা হামলা করেছে । আমার মেয়েদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। তাই আমি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের যোগ দিলাম। এবার আমি দেখব এবার কোন তৃণমূল এসে তার ওপর হামলা চালায় ।’ রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনাকে এটাই এরাজ্যের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অবক্ষয়কে স্পষ্ট চিত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন ।
প্রাক্তন দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন,’এই ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অবক্ষয়কে স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে। নাটাবাড়ি বিজেপি মহিলা মোর্চার মণ্ডল ৫-এর সভানেত্রী জবা দেবনাথ সম্প্রতি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রেস কনফারেন্স চলাকালীন, তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে এক কঠিন বাস্তবতা প্রকাশ করে ফেলেন — তাঁকে বাধ্য হয়ে পক্ষ পরিবর্তন করতে হয়েছে, কারণ তাঁর বাড়ি ও সম্পত্তি ধ্বংস করা হচ্ছিল।’
তিনি আরও লিখেছেন,’ভালো করে লক্ষ্য করুন, কীভাবে তাঁর মুখের হাসি মিলিয়ে যায়, যখন তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি একটি অস্বস্তিকর সত্য বলে ফেলেছেন। সমগ্র বাংলাজুড়ে বহু মানুষকে প্রাণনাশ, যৌন নির্যাতন এবং তাঁদের জীবন, জীবিকা ও সম্পত্তি ধ্বংসের হুমকি দিয়ে জোর করে তৃণমূলে যোগদান করানো হচ্ছে। যদি একটি অবাধ ও ন্যায়সঙ্গত নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়, এবং মানুষকে সত্যিকার অর্থে তাঁদের মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়, তবে নিঃসন্দেহে বাংলার মানুষ বিজেপিকেই বেছে নেবে।’
প্রসঙ্গত,রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির উপর শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্বৃত্তবাহিনীর হামলার অভিযোগ অনেক দিন ধরেই উঠছে । বিগত বছরগুলিতে রাজ্যের কয়েকটি জেলায় বিজেপি কর্মীকে খুনের ঘটনাও ঘটেছিল । সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক হিংসায় দুই হিন্দু খুন হওয়া ও হিন্দুদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগেও তৃণমূলের স্থানীয় মুসলিম নেতাদের বিরুদ্ধে নাম ধরে ধরে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসার পর নাটাবাড়ীর বিজেপি নেত্রীর ‘তৃণমূলের হামলা থেকে বাঁচতে’ দলবদলের ঘটনায় প্রাতিষ্ঠানিক সন্ত্রাসের চিত্রকে ফের একবার প্রকাশ্যে এনে দিল বলে মনে করা হচ্ছে । যেকারণে চাপে পড়ে গেছে রাজ্যের শাসকদল । যদিও জবা দেবনাথের মন্তব্য প্রসঙ্গে অভিজিৎ দেবের সাফাই, ‘যেগুলো বলেছেন সব আগের কথা ।’ তবে জবাদেবীর কথা শুনে তার বাম পাশে বসে থাকা তৃণমূলের এক নেত্রীকে মুচকি হাসতে দেখা গেছে ।।