প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান, এপ্রিল : বিদেশের মাটিতে আবারও ভারতের তেরঙ্গা জয় ধ্বজা উড়ালেন বাংলার জলকন্যা সায়নী দাস । তেনজিং নোরগে ন্যাশানাল অ্যাভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড পাওয়া সায়নী এবার জয় করলেন সপ্ত সিন্ধুর ষষ্ঠ সিন্ধু।তিনি এশিয়া মহাদেশের প্রথম মহিলা সাঁতারু যিনি স্পেনে গিয়ে ৩ ঘন্টা ৫১ মিনিটে জিব্রালটার প্রণালীতে ১৫.২ কিলোমিটার সাঁতারে ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের রেকর্ড গড়লেন। ভারতীর সময় অনুযায়ী শুক্রবার বিকাল পৌনে পাঁচটায় সায়নী ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের অভিযানে নামেন।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের লক্ষে পৌছে যান। বাকি রইলো আর একটি মাত্র চ্যানেল। জাপানের সুগারু চ্যানেল জয় করতে পারলেই ওশেন সেভেন অর্থাৎ সপ্তসিন্ধু জয়ের মুকুট উঠবে সায়নী দাসের মাথায়।
রটনেষ্ট,ক্যাটালিনা,ইংলিশ চ্যানেল, মালোকাই চ্যানেল ,কুক স্ট্রেইট চ্যানেল ও পঞ্চম সিন্ধু জয় ইতিপূর্বেই সম্পন্ন করেছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনা পৌর এলাকার বারুইপাড়ার মেয়ে সায়নী দাস। এবার তিনি সপ্ত সিন্ধুর ষষ্ঠ সিন্ধুও জয় করে ফেললেন। একের পর এক এই জয়ের কৃতিত্বে বাংলার মেয়ে সায়নী আজ ’বিশ্ববন্দিতা’ ।তাই তাঁর এই সাফল্যে খুশি গোটা বাংলা।একই ভাবে উল্লশিত সায়নীর বাবা- মা এবং শুভানুধ্যায়ীরা।
সায়নী দাসের বাবা রাধেশ্যাম দাস অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। মা রুপালীদেবী সাধারণ গৃহবধূ। বাবা রাধেশ্যাম দাসের হাত ধরে সায়নীর সাঁতারে হাতেখড়ি হয় । তার পরথেকে কঠিন অনুশীলনের মধ্যদিয়ে সায়নী নিজেকে কার্যত ’জলকন্যা’ বানিয়ে ফেলেন। হাওয়ার গতীবেগ ,জলের স্রোত এবং দীর্ঘ সময় সাঁতার কেটে এগিয়ে চলার যোগ্য হিসাবে নিজেকে তিনি তৈরি করেন সায়নী । সেই যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গতনয়া সায়নী রটনেষ্ট ও ক্যাটলিনা চ্যানেল জয়ের পর ২০১৭ ইংলিশ চ্যানেল জয়ের করেন।এরপর ২০২২ সালে তিনি মার্কিন মুলুকের মালোকাই চ্যানেল জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।শুধু ভারত নয়,এশিয়া মহাদেশের মহিলা সাঁতারু হিসাবেও সায়নী প্রথম মালোকাই চ্যানেল জয়ের নজির সৃষ্টি করন।এরপর একে একে সায়নী সপ্তসিন্ধুর এক সিন্ধু নিউজিল্যাণ্ডের কুক স্ট্রেইট চ্যানেল ও পরে নর্থ চ্যানেল জয় করে ফেললেন।বাকি থাকে জিব্রালটার ও সুগারু জয়। শুক্রবার জিব্রালটার প্রণালীতে সাঁতরে সায়নী ষষ্ঠসিন্ধু জয় সম্পূর্ণ করে ফেললেন। সায়নীর আগামী লক্ষ ওশেন সেভেন জয় । সেই জয় ছিনিয়ে আনতে পারলেই ইতিহাস সৃষ্টি করবেন বঙ্গ তনয়া সায়নী ।
সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাস জানিয়েছেন,“ তাঁর মেয়ে ওশেন সেভেন জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের লক্ষে সায়নীকে গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন দ্রৌণাচার্য পুরস্কার প্রাপ্ত প্রশিক্ষক তপন কুমার পানিগ্রাহী।রাধেশ্যাম বাবুর কথায়,এবার ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের অভিযানে তিনি ছাড়াও সায়নীর সঙ্গী হয়েছিলেন তপন পানিগ্রাহী। রাধেশ্যাম বাবু এদিন বলেন ,সায়নীর ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের লক্ষে পৌছাতে খুবই কাজে লেগেছে জাতীয় কোচ তপন কুমার পানিগ্রাহীর গুরুত্বপূর্ণ টিপস । সায়নী জানান,’ষষ্ঠ সিন্ধু জয় সম্পূর্ণ করতে পেরে আমি খুশি । আমার দেশ ভারতের তেরঙ্গা জাতীর পতাকা বিশ্বের মঞ্চে তুলে ধরতে পেরে আমি গর্বিত বোধ করছি।’
সায়নী বাড়ি ফিরলে তাকে নিয়ে জয় সেলিব্রেট করার প্রতুতি শনিবার থেকেই শুরু করে দিয়েছেন কালনার ক্রীড়া প্রেমীরা।তাঁরা জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগেই ’খেলশ্রী’ সন্মানে ভূষিত করেছে সায়নীকে।এছাড়াও “মাদার টেরিজা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড“ সায়নী পেয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নিজে তেনজিং নোরগে ন্যাশানাল অ্যাভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড তুলে দিয়েছেন সায়নীর হাতে । কালনার মেয়ে সায়নী আজ শুধু বাংলার গর্ব নয় ,গোটা দেশের গর্ব । সায়নী আজ বিশ্ববন্দিতা । তাই সায়নী কালনার বাড়িতে ফিরলেই তাঁকে নিয়ে ষষ্ঠ সিন্ধু জয়ের সেলিব্রেশনে মাতার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন কালনাবাসী ।।