এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৮ এপ্রিল : মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, সামসেরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হয়েছে সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দুরা । বহু পরিবার এখনো ঘরছাড়া । তারা এখন কার্যত উদ্বাস্তুর মত জীবন যাপন করছেন পার্শ্ববর্তী মালদা জেলার গ্রামে । তবে মুর্শিদাবাদের এই ঘটনাকে ‘সাম্প্রদায়িক হিংসা’র ঘটনা বলে মনে করছেন না রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি এটাকে ‘ধর্মযুদ্ধ’ হিসেবে দেখছেন৷ পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদ জেলার যে ৫০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দুদের হাতে সরকারি অনুমোদিত আগ্নেয় অস্ত্র তুলে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ওখানে এটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়, এটা ধর্মযুদ্ধ । এরা কাশ্মীরের মতো হিন্দুদের সরাতে চায় ।’ এই পরিস্থিতির সমাধান সূত্রও দিয়েছেন তিনি । তিনি বলেন, ‘এর সমাধান আমি ২ ভাবে বলতে পারি। প্রথমত, এনআইএ-কে দিয়ে ওখানে রুটটা একেবারে নষ্ট করে দেওয়া।এনআইএ তদন্ত এবং চার্জশিট দেওয়া পর্যন্ত ওখানে প্যারা মিলিটারি ফোর্স মোতায়েন রাখা । দ্বিতীয় বিষয় হল বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ৫০ কিলোমিটার এলাকায় যেখানে হিন্দু জনবসতি সংখ্যালঘু, তাদেরকে কাশ্মীরের পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকার মতো বৈধ লাইসেন্স যুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া উচিত । আত্মরক্ষার অধিকার প্রত্যেকের আছে । কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী বহু গ্রামে এই ব্যবস্থা আছে । স্পেশাল এক্টের আওতায় আছে । কাশ্মীরের মতো মডেল যদি মুর্শিদাবাদে না করতে পারেন তাহলে ওখানে যে ১০-১৫ শতাংশ হিন্দু আছে এরপর আর হিন্দু থাকবে না । এটাই বাস্তব ।’
রাজ্য পুলিশের কোন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে অস্বীকার করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি স্থানীয় এলাকার পুলিশকে নিশানা করে বলেন,’১১ এবং ১২ তারিখে যাদের যা ডিউটি ছিল তারা তা করেনি । কে করেছে কেন করেছে কিভাবে করেছে মানুষ জানে । কলকাতা হাইকোর্ট কে ধন্যবাদ, ছুটির দিন খুলে যা করার করেছে । ১১ তারিখে পুলিশ যখন ব্যর্থ হয়েছে তখন বিএসএফের ৩০০ জন জওয়ান মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়েছে । সমস্ত কৃতিত্ব ১১ তারিখে বিএসএফ এবং ১২ তারিখে কলকাতা হাইকোর্টের৷’
তিনি বলেন,’যেহেতু আমি পিটিশনার, গতকাল থেকে আমি অন্তত ১০০-১৫০ মেসেজ পেয়েছি । নরমাল মেসেজ, যেহেতু ইন্টারনেট বন্ধ আছে । স্থানীয় বাসিন্দাদের আত্মীয়রা পাঠিয়েছে, যেখানে নেট আছে । তাদের একটাই বক্তব্য ছিল যে আগামীকাল শুক্রবার, এবং আমরা আতঙ্কে আছি । আপনি দয়া করে কলকাতা হাইকোর্টে আপনার আইনজীবির মাধ্যমে অনুরোধ করুন যাতে প্যারা মিলিটারি ফোর্স আরো কিছুদিন এখানে থাকে যাতে এনআইএ তদন্ত হয়ে প্রকৃত দোষীরা গ্রেপ্তার হয় । কারণ এখনো পর্যন্ত যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা প্রকৃত দোষী অধিকাংশই নয় । সংখ্যা দেখানোর জন্য তৃণমূল কংগ্রেস পুলিশের হাতে কিছু কিছু লোককে তুলে দিয়েছে । প্রকৃত দোষীরা গ্রেপ্তার হয়নি । সেই সাথে কোথা থেকে বোমা,গুলি, বন্দুক এলো পুলিশের ভূমিকা কি ছিল এগুলোর কোনটাই তদন্ত হয়নি ।’
রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও শুভেন্দুর মধ্যে চাপা অসন্তোষ দেখা যায় । যদিও ‘বিতর্কের সৃষ্টি হবে’ বলে তিনি এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি । তিনি বলেন ‘রাজ্যপাল সম্পর্কে আমার ধারণা আমার মধ্যেই চাপা আছে এবং থাকবে’ । পাশাপাশি এরাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে বিধানসভার ভোট করার দাবি তুললেন শুভেন্দু অধিকারী । এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গোটা পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া ভোট করাতে পারবেনা নির্বাচন কমিশন। যেখানে ৫০ শতাংশের নিচে হিন্দু আছে এমন বহু জায়গায় ২১ এবং ২৪-এ ভোট দিতে দেয়নি । এবারে আরো বৃহত্তর আকারে ভোট দিতে দেবেনা । তার মধ্যে শুধু মুর্শিদাবাদ বা মালদার একটা অংশ পড়বে না । পাশাপাশি কোচবিহারের দিনহাটা থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, বাসন্তী ও গোসাবা অব্দি পড়বে ৷’।