ভারতের রাজনীতিতে বহু চর্চিত ও বিতর্কিত পরিবার হল গান্ধী-নেহেরু পরিবার । জহরলালের বাবা মতিলাল নেহেরু জন্মসূত্রে কোন ধর্মসম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, তা নিয়েও বিস্তর চর্চা চলে । প্রায় ৬ দশক ক্ষমতার অলিন্দে বিচরণের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে জহরলাল ও তার পরিবার সেই সমস্ত বিতর্কিত ইতিহাস ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন । পাশাপাশি নেহেরু পরিবার একটা সুবিধাবাদী তাঁবেদার শ্রেণীর জন্ম দেয় । যারা আজও বংশপরম্পরায় ‘প্রভুর’ হয়ে গলা ফাটিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার আসার পর ওই পরিবারের অনেক কেচ্ছাকাহিনী প্রকাশ্যে আসছে ।
ওই পরিবার সম্পর্কে বেশ কিছু কেচ্ছা প্রকাশ্যে এনেছিলেন প্রবীণ গুজরাটি লেখক রজনী কুমার পান্ড্যে । তাঁর লেখা ‘আপ কি পরচাইয়ান‘ বইটি এক অর্থে ঐতিহাসিক দলিল । কংগ্রেসের জমানায় বইটি সেভাবে প্রচার পায়নি । এখন প্রকাশ্যে এসেছে । ওই পুস্তকে তিনি জানিয়েছেন যে জওহরলাল নেহেরু ছিলেন অভিনেত্রী নার্গিসের মামা। তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রজনী কুমার পান্ড্যে । তিনি জানান,
নার্গিসের ঠাকুমা দিলীপা ছিলেন মঙ্গল পান্ডের মামাতো ভাই রাজেন্দ্র পান্ডের মেয়ে। ১৮৮০ সালে বালিয়ায় তার বিয়ে হয় কিন্তু বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই তার স্বামী মারা যান। তখন দিলীপার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। সেই সময়ে, বিধবাদের জীবন ছিল দুঃখ-কষ্টে ভরা। জীবন থেকে হতাশ হয়ে, দিলীপা একদিন আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে গঙ্গার দিকে রওনা দেয়, কিন্তু রাতে পথ হারিয়ে ফেলে এবং মিয়াঁ জান নামে এক সারঙ্গী বাদকের কুঁড়েঘরে গিয়ে পৌঁছায়, যে পতিতালয়ে সারঙ্গী বাজাতো ।
মিয়াঁ জানের পরিবারে ছিল তার স্ত্রী এবং এক মেয়ে মালিকা । তিনি মালিকাকেও একজন গণিকা বানাতে চেয়েছিলেন । মিয়াঁজান দিলীপাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দেয় । আর তারপর মালিকার সাথে, দিলীপাও ধীরে ধীরে গণিকাদের সমস্ত আচার-আচরণ শিখে ফেলে । আর একদিন সে চিলবিলার বিখ্যাত গণিকা রোশন জানের পতিতালয়ে এসে বসে ।
তৎকালীন বিখ্যাত আইনজীবী মতিলাল নেহেরু রোশন জানের পতিতালয়ে যেতেন । যার স্ত্রী তাদের প্রথম সন্তানের জন্মের সময় মারা গিয়েছিলেন । দিলীপার মতিলাল নেহরুর সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে । মতিলালের পরিবার যখন এই কথা জানতে পারে, তখন তারা লাহোরের স্বরূপ রানীর সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে ঠিক করে, যার বয়স তখন ১৫ বছর । তা সত্ত্বেও, মতিলাল দিলীপার সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন । এখানে দিলীপার একটি ছেলে ছিল যার নাম ছিল মনজুর আলী ।
এদিকে, কয়েকদিন পরে, ১৮৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর, স্বরূপ রানী জওহরলাল নেহেরুর জন্ম দেন । ১৯০০ সালে, স্বরূপ রানী বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের জন্ম দেন । আর ১৯০১ সালে দিলীপার ঘরে “জদ্দনবাই” জন্মগ্রহণ করেন । “অভিনেত্রী নার্গিস” ছিলেন এই জদ্দনবাইয়ের মেয়ে ।
মনজুর আলী পরবর্তীতে মনজুর আলী সোখাত নামে একজন ‘মহান’ শ্রমিক নেতা হয়ে ওঠেন এবং ১৯২৪ সালে, তিনি এই বলে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন যে আমি মতিলাল নেহরুর ছেলে এবং জওহরলাল নেহরুর বড় দাদা । অন্যদিকে, একদিন, লখনউয়ের নবাবের আমন্ত্রণে, জদ্দনবাই লখনউতে মুজরা করতে গিয়েছিলেন । দিলীপাও তার সাথে ছিলেন । জওহরলাল নেহেরু সেদিন কংগ্রেসের কোনও কাজে লখনউতে ছিলেন । যখন তিনি জানতে পারেন, তখন তিনি তাদের দুজনের সাথে দেখা করতে আসেন । দিলীপা জওহরলাল নেহেরুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন এবং মতিলাল নেহেরু’র সুস্থতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন । মুজরা শেষ হলে, জদ্দনবাই জওহরলাল নেহেরুর হাতে রাখি বাঁধেন । ১৯৩১ সালে, যখন মতিলাল নেহেরু মারা যান, দিলীপা তার চুড়ি ভেঙে ফেলেন । আর তারপর থেকে তিনি বিধবার মতো জীবনযাপন শুরু করেন ।।