প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৮ এপ্রিল : নিজের বাড়িতে নৃশংস ভাবে খুন হলেন এক বৃদ্ধা। জখম হয়েও বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন বৃদ্ধার পঁচাত্তর উর্ধ্ব স্বামী। এই ঘটনা জানাজানি হতেই বৃহস্পতিবার সকালে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার আবুজহাটী-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কায়স্থ পাড়ায়। খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মীরা সরকারের রক্তাত মৃতদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ বৃদ্ধার জখম স্বামী নীলাদ্রি সরকার (৭৬)কে উদ্ধার করে। তিনি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন চিকিৎসাধীন রয়েছন । এদিন রাতের মধ্যেই পুলিশ খুনের ঘটনায় জড়িত দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের দাবি দুই ধৃতই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা জেরায় স্বীকার করেছে।শুক্রবার তাদের পেশ করা হবে বর্ধমান আদালতে ।
পুলিশ জানিয়েছে,খুনের ঘটনার সামনে আসার পরেই এদিধ খুনিকে ধরতে জোরদার তদন্তে নামে পুলিশ।বৃদ্ধার স্বামী নীলাদ্রি সরকারের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে রুজু হয় খুনের মামলা।তার পরেই এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) অভিষেক মণ্ডলের নেতৃত্বে তদন্তকারী পুলিশ দল খুনিদের ধরতে অভিযানে নামে । টেকনিক্যাল ইনপুট ও স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বীরভূমের মল্লারপুর থানা এলাকায় রওনা দেয় । ।সেখান থেকে পুলিশ অমিত বাগদি নামে এক অভিযুক্তকে পাকড়াও করে। একই সময়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জামালপুর থানার মল্লারপুর এলাকারই অপর বাসিন্দা কুবির গরাই ওরফে রবি নামে আর এক অভিযুক্তকে ।
পুলিশ জানিয়েছে,অমিত কিছুদিন আগে পর্যন্ত বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতো । তাঁকে ঘর ভাড়া দেখে দিয়েছিল অপর ধৃত কুবির । পুলিশের দাবি ধৃত এই দু’জনেই বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। খুনের মোটিভ জানতে পুলিশ দুই ধৃতকেই শুক্রবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে পুলিশ হেফআজতে নেবে বলে, জানা গিয়েছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,আবুজহাটীর
কায়স্থ পাড়া এলাকাটি ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে অবস্থিত। কায়স্থ পাড়ায় একতলা পাকা বাড়িতে বসবাস করতেন বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁরা নিঃসন্তান। বৃদ্ধ নীলাদ্রি সরকারের বাকি চার ভাইয়ের পরিবারের কেউ এখন আর কায়স্থ পাড়ায় বসবাস করেন না । তাঁরা সবাই অন্যত্র বসবাস করেন। এলাকাবাসীর কথা অনুযায়ী,চাষের জমি জমা যা ছিল তা নীলাদ্রি বাবু বিক্রি করে দিয়েছেন।নিজের থাকার ঘরের লাগোয়া জায়গায় ইটের দেওয়াল আর টালির চালার দুটি
ঘর রয়েছে নীলাদ্র বাবুর। সেগুলি তিনি ভাড়া দিতেন ।কোনও ভাড়াটিয়া না থাকায় এখন ওই ঘরগুলি ফাঁকা রয়েছে ।মধ্যবিত্ত পরিবারের এই দম্পতি একান্তই সাদামাটা ভাবে দিন গুজরান করতেন।পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্কই রয়েছে।
নিহত বৃদ্ধার ভাই স্বপন দত্ত বলেন,’অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালে আমার বোনের বাড়িতে কাজ করতে যায় পরিচারিকা।তিনি বাড়িতে গিয়ে অনেক ডাকাডাকি করেও কারুর সাড়া শব্দ পান না।তার পর পরিচারিকা ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। তখন পরিচারিকা দেখে ঘরের বিছানার উপর রক্তাত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বৃদ্ধ দম্পতি।এমনটা দেখেই পরিচারিকা ছুটে গিয়ে প্রতিবেশীদের তা জানায় । প্রতিবেশীরা ততক্ষণাত খবর দেয় জামালপুর থানায় ।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মীরা সরকারের রক্তাত মৃতদেহ উদ্ধার করে। জখম অবস্থায় একই ঘরে অচৈতন্য হয়ে পড়ে ছিলেন বৃদ্ধ নীলাদ্রি সরকার।
বৃদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় বর্ধমান হাসপাতাল পুলিশ মর্গে ।বৃদ্ধকেও উদ্ধার করে পুলিশ নিয়ে যায় জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে । শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় নীলাদ্রি সরকারকে এদিনই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
পুলিশ ও প্রতিবেশীদের কথায় জানা গিয়েছে,
দম্পতির শোয়ার ঘরের বিছানায় থাকা মশারির এক পাশ খোলা ছিল । বিছানাতেই পড়েছিল
মীরাদেবীর নিথর দেহ। তাঁর গোটা মুখমণ্ডল ও কপালের অংশ ক্ষত বিক্ষত ছিল। মাথার পিছনের অংশে ও ডান কানের উপরিভাগে আঘাতের খত নিয়ে একই ঘরে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে ছিলেন মীরাদেবীর স্বামী । ওই ঘরে দরজার কাছে রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল । মৃতদেহ উদ্ধার হওয়া ঘর থেকে মুগুর জাতীয় ভারী একটি বস্তু পায় পুলিশ। তাতে রক্তের দাগ লেগে থাকায় পুলিশ সেটি বাজেয়াপ্ত করেছে।পুলিশের প্রাথমিক অনুমান,আততায়ী মুগুর জাতীয় ভারী বস্তু নিয়ে নৃশংশ ভাবে হামলা চালিয়ে বৃদ্ধাকে খুন করেছে। আততায়ীর আক্রমণে বৃদ্ধ জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় তিনি মারা গেছেন মনে করেই হয়তো আততায়ী পালিয়ে যায়। বৃদ্ধ দম্পতির উপর এত নিষ্ঠুর
হামলা আক্রমণের ঘটনা চাক্ষুষ করে এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ কর্তারাও শিউরে উঠেছেন।তদন্তে নেমে পুলিশ এই রহস্যের কুল কিনারা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে । নিহত মীরা সরকারের ভাই স্বপন দত্ত এবং আত্মীয় প্রসূন দত্ত খুনিদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেছেন ।।