এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৭ এপ্রিল : সাম্প্রদায়িক হিংসা কবলিত মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয় । যেভাবে বেছে বেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ও তাদের ঘরবাড়ি,দোকানপাট, মন্দিরকে নিশানা করেছে এবং দাঙ্গার শুরুর দিকে পুলিশের যে ন্যাক্কারজনক ভুমিকা ছিল তাতে বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছে না বাস্তুচ্যুত শত শত হিন্দু পরিবারগুলি । এলাকায় স্থায়ীভাবে বিএসএফ ক্যাম্পের জন্য দাবি তুলছেন তারা ৷ এদিকে ধুলিয়ানের হিংসার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে । মামলাগুলিতে রাজ্য পুলিশের ব্যর্থতা, বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন লাগু, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের সময়সীমা বাড়ানো, এনআইএ-কে দিয়ে তদন্ত প্রভৃতি দাবি জানানো হয়েছে । আজ বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল । শুনানি হয় বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর বেঞ্চে।
বেঞ্চ জানিয়েছে,ধুলিয়ানে আপাতত থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি । কমিটিতে থাকবে জাতীয় মানবাধিকার ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের দুই প্রতিনিধি এবং রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির এক সদস্য। তারা ধুলিয়ানে ঘরছাড়াদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে । এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য রাজ্যকে এখনই স্কিম তৈরির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মৃতদের পরিবারকে শুধু টাকা দেওয়া নয়, প্রয়োজনে চাকরি দেওয়ার বিষয়েও চিন্তাভাবনার পরামর্শ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে নয়া ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভের নামে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে । বেছে বেছে হিন্দুদের উপর আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ । বেতবোনা, জাফনাবাদের হিন্দু এলাকাগুলি হিংসার আগুনে কার্যত ছাড়খার হয়ে গেছে । হিন্দু পিতাপুত্রকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে । বিএসএফের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে একজন বিক্ষোভকারীরও । হিংসায় চার শতাধিক বাস্তুচ্যুত পরিবার পার্শ্ববর্তী মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের একটা স্কুলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন ।
হিংসার ঘটনার সময় প্রাপ্ত সমস্ত ছবি ও ভিডিয়ো হাইকোর্টে জমা পড়েছে। কেন্দ্রের তরফে রিপোর্টও জমা দেওয়া হয়েছে আদালতে । সেই রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । আইনজীবী অনিন্দ্য সুন্দর দাস জানিয়েছেন,তদন্তে কেন্দ্রীয় এজেন্সি জানতে পেরেছে যে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ধুলিয়ানে হামলা চালিয়েছে । হিংসা ছড়াতে টাকা এসেছে তুরস্ক থেকে। ওয়াকফ ইস্যুতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ও হিংসা ছড়ানোর জন্য ইমামদের হুমকির কথোপকথনের প্রমান এজেন্সির হাতে আছে বলেও তিনি জানান । পাশাপাশি এনআইএ-এর হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার জন্য দাবি করেন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী ।
অন্যদিকে রাজ্যের আইনজীবী যথারীতি রাজনৈতিক নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যকে এই হিংসার জন্য দায়ি করেছেন । তিনি জানিয়েছেন যে ইমামদের সঙ্গে বৈঠক করে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানানো হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং আপাতত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন ।।