একদিকে মুর্শিদাবাদ যখন সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুনে জ্বলছে,তখন অন্যদিকে বাংলা নতুন বছরের আগমনে কালীঘাটে আদিবাসী নৃত্য করতে দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে । তার দলেরই রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এই হিংসার মাঝে মধ্যাহ্ন ভোজনের থালার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন । এই রকমই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কবলিত এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ইরফান পাঠানের বড় দাদা ইউসুফ পাঠান । আইপিএল ইভেন্টে গ্রিন টি পান করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন তিনি । নিজের নির্বাচনী এলাকায় যখন সংখ্যাগুরু মুসলিমদের অত্যাচারে শত শত সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার ভিটেমাটি ছেড়ে পার্শ্ববর্তী জেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে, তখন সাংসদ হয়েও কি করে তিনি এতটা নির্বিকার থাকতে পারেন ? এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে৷
কেউ কেউ দাঙ্গা-বিধ্বস্ত মুর্শিদাবাদের সাংসদ ইউসুফ পাঠানের এই মানসিকতাকে হিন্দু-মুসলমান দৃষ্টিকোন দিয়ে দেখছেন । সাংবাদিক প্রফেসর সুধাংশু টিপিএস (@ProfSudhaanshu) তো ইউসুফের এই মানসিকতাকে তার ‘আসল রূপ’ বলে অবিহিত করেছেন । তিনি ইউসুফ পাঠানকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন । প্রফেসর সুধাংশু এক্স-এ লিখেছেন,তিনি একবারের জন্যও শান্তির আবেদনও করেনি; হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট পুড়িও না; হিন্দুদের বোন ও মেয়েদের টেনে নিয়ে যেও না; হিন্দুদের হত্যা করো না; হিন্দুদের দেশান্তরিত হতে বাধ্য করো না ।’ তিনি আরও লিখেছেন,আমি এটাকে তার দোষ মনে করি না। তিনি তার কর্তব্যের পথে চলছে। একজন মুসলিম হিসেবে সে তার কর্তব্য পালন করছে। এটি নিজস্ব এজেন্ডা, নিজস্ব মহৎ নকশা নিয়ে কাজ করছে। জনসংখ্যার বিবেচনায় গুজরাটের একজন বাসিন্দা মুর্শিদাবাদে পৌঁছান। কেউ দিল্লি থেকে ওয়ানাড় যাচ্ছে। অর্জুনের মতো তাদের চোখও মাছের চোখের উপর স্থির। সহিংসতা এবং অগ্নিসংযোগের চেয়েও আমি সেই ছবিগুলো দেখে বেশি বিরক্ত যেখানে পাকিস্তান বাংলাদেশকে ছেড়ে দেওয়ার পর, এমনকি বাকি ভারতেও, হিন্দুরা ভয়ে তাদের গ্রাম ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। যদি বাংলার অসহায় হিন্দুরা এই কথা বলে, তাহলে তারা কাকে বলবে? তারা কাতার, বাহরাইন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও চিঠি লিখতে পারেন না । সব মিলিয়ে, জন্মাষ্টমীতে আমরা একটি ট্যাবলো এবং শোভাযাত্রা বের করতে পারব এমন একমাত্র ছোট টুকরো স্বাধীনতা এখন অবশিষ্ট আছে। এই সুযোগও ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসছে। ধর্মনিরপেক্ষতা দেশের জন্য খুব ব্যয়বহুল প্রমাণিত হতে পারে।’
পশ্চিমবঙ্গে ভোটব্যাংকের জন্য মেকি ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি কেন হিন্দুদের জন্য বিপজ্জনক তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন প্রফেসর সুধাংশু । তিনি লিখেছেন,
গত লোকসভা নির্বাচনে, মোমো ইউসুফ পাঠান, গুজরাটের একজন বহিরাগত এবং একজন রাজনৈতিক নবাগত, কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে, মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের পাঁচবারের হিন্দু সাংসদকে পরাজিত করার জন্য প্রার্থী করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি । ইউসুফ পাঠান, যার বাংলার সাথে কোনও সম্পর্ক ছিল না, তিনি কেবল মুসলিম ভোটের জোরে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর আসন থেকে লোকসভার সাংসদ হয়েছিলেন। গত এক বছরে কি আপনি তাকে কখনও সংসদে দেখেছেন? মুর্শিদাবাদে তিনটি লোকসভা আসন রয়েছে। ২০১৪ সালে নির্বাচিত সাংসদরা হলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী, অভিজিৎ মুখার্জি এবং বদরুদ্দিন শাহ খান। ২০২৪ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা হলেন ইউসুফ পাঠান, খলিলুর রেহমান এবং আবু তাহির খান। জনসংখ্যা আসলেই নিয়তি ।’
তিনি লিখেছেন,আজ যখন মুসলিমরা মুর্শিদাবাদে সহিংস দাঙ্গা সৃষ্টি করছে এবং হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে, তখন ইউসুফ পাঠান আইপিএল ইভেন্টে গ্রিন টি পান করছেন। মুর্শিদাবাদের হিন্দুরা এখন বলছে যে অধীর যদি তার আগের অবতারে থাকতেন, তাহলে আমরা আইন-শৃঙ্খলার এত ভাঙন দেখতে পেতাম না। তারা জানত কিভাবে একটি জম্বি ব্যবহার করে অন্য জম্বিটিকে দমন করা যায়। কিন্তু এই কুৎসিত দেখতে নকল পাঠানটি নিরোর মতো তূরী বাজাচ্ছে যখন তার রোম (নির্বাচনী এলাকা) জ্বলছে। সম্ভবত ইউসুফ পাঠানের উদাসীনতা এই কারণেই উদ্ভূত যে তিনি একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ নন। দাঙ্গার শিকাররা মুসলিম নন। তাই যখন তার জাত ভাইয়েরা হিন্দুদের রক্ত পান করতে ব্যস্ত, তখন পাঠান নিজেকে ব্লু লেগুন পানীয় পান করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে তিনি পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার বিরুদ্ধে । এই বিষয়ে প্রফেসর সুধাংশু লিখেছেন, ‘বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন কি এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সমাধান ? না, একদমই না ।’ কেন নয়, তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি লিখেছেন,২০২১ সালের বাংলা বিধানসভা নির্বাচন এবং সম্প্রতি সমাপ্ত উপনির্বাচন থেকে স্পষ্ট যে, বাঙালি হিন্দুদের একটি বিরাট অংশ এখনও টিএমসিকে ভোট দেয়। বিজেপি রাজ্যে ধীরে ধীরে এবং অবিচলভাবে এগিয়ে চলেছে, কিন্তু এখনও তৃণমূলের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যদি মোদী রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেন, তাহলে তা হবে জনগণের জনমতের উপর চড় মারা এবং মোমোর প্রতি বিশাল সহানুভূতির ঢেউ তৈরি করবে। ছয় মাসের মধ্যে রাজ্যে নতুন নির্বাচন হবে এবং মোমোহ আরও বড় ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসবেন কারণ তার পক্ষে সহানুভূতির হাওয়া তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যে বিজেপি নিজের জন্য যে জায়গা তৈরি করেছে, তা হারিয়ে যাবে।
তিনি লিখেছেন,গণতন্ত্রে, পরিবর্তন অবশ্যই জনগণের কাছ থেকে আসতে হবে। কেন্দ্র কোনও নির্দিষ্ট রাজ্যের জনগণের উপর তার ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারে না কারণ এতে হিতে বিপরীত হবে। এখন দয়া করে কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির উদাহরণটা আমাকে দেবেন না, কারণ সেটা ছিল সম্পূর্ণ চরম পরিস্থিতি। কাশ্মীর জেলায় ৯৭% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু বাংলায় এখনও বিশাল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে; তাই দুটোর তুলনা করা যাবে না। কেন্দ্র এবং বঙ্গীয় বিজেপি ইউনিটের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প হল বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখোশ উন্মোচন করা এবং বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে এর ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা। বাংলার বিজেপির জেতা যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন বাংলার বিজেপির প্রভাব প্রতিষ্ঠা বলে মনে করছেন তিনি ।
তবে এটা অনস্বীকার্য যে স্বাধীনতার পর প্রথমে কংগ্রেস, মাঝে সিপিএমের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট এবং এখন মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ নামে ভোটব্যাংকের যে ঘৃণ্য রাজনীতি করে আসছে তা এরাজ্যের হিন্দুদের জন্য ঘাতক হয়ে উঠেছে । বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভোটারকার্ড করে দিয়ে তারা নিজের ভোটব্যাংক বাড়ি কিছু সময় ক্ষমতার আস্বাদ নিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মুর্শিদাবাদ,মালদা, দুই ২৪ পরগণা সহ বিভিন্ন জেলা,এমনকি খাস কলকাতায় জঘনবিন্যাসের যে আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে তা সেখানকার হিন্দুদের জন্য অশনি সঙ্কেত । মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসাকে বাবর, তৈমুর লং, বখতিয়ার খিলজী ভারত আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করেছেন রাজ্য বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ ।
তিনি এই বিষয়ে গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন,’আজ পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গ একটা বিষয়ে এক হয়ে গেছে – সেটা হচ্ছে হিন্দুদের উপর অত্যাচার, মঠ, মন্দির ধ্বংস, লুটপাট। ইতিহাস বলছে বাবর, তৈমুর লং, বখতিয়ার খিলজী ভারত আক্রমণে এসে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের পাশাপাশি মঠ, মন্দির ধ্বংস করেছে। কারণ তারা বুঝেছিল এটাই হিন্দু ধর্মের প্রাণ। তারা ভেবেছিল মঠ, মন্দির ধ্বংস করতে পারলে হিন্দুদের জব্দ করা যাবে। আর সেই লুঠ-পাট আজও চলছে ।’
দিলীপবাবুর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল শাসনেও একই জিনিষ চলছে। বেছে বেছে হিন্দু এলাকায় আক্রমণ করা হচ্ছে, যেখানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু সেখানে হিন্দুদের তাড়িয়ে জায়গা জমি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। হিন্দুরা পালিয়ে যাচ্ছে এক জেলা থেকে আর এক জেলায়। মুখ্যমন্ত্রী উগ্রপন্থীদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছেন। কলকাতাকে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। কলকাতার ৩০ কিমি পর্যন্ত এলাকায় জনবিন্যাস বদলে ফেলা হয়েছে । জায়গায় জায়গায় মিনি পাকিস্তান তৈরি করা হচ্ছে। আজ একটা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের মত পরিস্থিতি তৈরি হলে একটাও হিন্দু বাঙালি বাঁচবে না কলকাতায়। আর এদিকে ববি হাকিমের মত লোক বলছে দাওয়াতে ইসলাম, হয় ইসলাম গ্রহণ করো নয় মরো।’
পরিশেষে তিনি লিখেছেন,’ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় কতটা দূরদর্শী ছিলেন যে তিনি হিন্দু বাঙালির জন্য আলাদা একটি বাসস্থল হিন্দু হোমল্যান্ড পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করে গেছিলেন। তাই হিন্দু বাঙালির অস্তিত্ব যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে হিন্দু বাংলাই রাখতে হবে আর হিন্দুদের সংগঠিত হয়ে করাই করতে হবে। কারণ বিগত ৭৫ বছরে পশ্চিমবঙ্গে যে সব রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতায় এসেছিল তারা শুধু সেকুলারিজমের নামে মুসলিমদের উস্কানি দিয়েছে, কেউ হিন্দু বাঙালির কথা ভাবেনি।’।