এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১৩ এপ্রিল : পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুরে ভাগীরথী নদীর ঘাটের কাছে ভরা বাজারে পুলিশের সামনেই কলেজ পড়ুয়াকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুনের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে । আক্রান্ত ওই পড়ুয়ার নাম তিলক মণ্ডল (২১) । কাটোয়া কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার বাড়ি কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরি গ্রামে । বর্তমানে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ওই যুবক । এদিকে এই ঘটনায় ফের কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে রাজ্য পুলিশকে । তবে ঠিক কি কারণে এবং কারা এভাবে ভরা বাজারে তিলকের উপর হামলা করল তানিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে পরিবারের লোকজন।
জানা গেছে,গাজন উৎসবে মহাদেবের স্নানযাত্রা ঘিরে শনিবার দিনভর কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুরে ভাগীরথী নদীর ঘাটে স্নানের জন্য পূণ্যার্থীদের প্রচুর ভিড় ছিল । গঙ্গাটিকুরি গ্রামের ধর্মরাজতলা পাড়ার বাসিন্দা তিলক মণ্ডল তিলক কয়েকজন বন্ধু মিলে গ্রামের গাজন সন্ন্যাসীদের সঙ্গে উদ্ধারণপুর ঘাটে স্নান যাত্রা দেখতে এসেছিলেন৷ ছিলেন তিলকের খুড়তুতো দাদা ছোট্টু মণ্ডল। ছোট্টুর বলে,’আমি তখন ঘাটের কাছে ছিলাম। ভাই ওর বন্ধুদের সঙ্গে কিছুটা দুরে ছিল। এরপর একজন ফোন করে বলে ভাইকে কেউ মারধর করছে । আমি ছুটে এসে দেখি পুলিশ তখন ভাইকে উদ্ধার করে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।’

জানা গেছে,শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুর বাজারে কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি তিলক মণ্ডলকে ঘিরে ধরে নৃশংসভাবে পেটায় ও কোপায়৷ জনতা ও পুলিশের সামনেই একজন তিলকের বুকের উপর বসে গলা চেপে ধরে । আরও কয়েকজন ক্রমাগত তাকে বাঁশ দিয়ে নির্মমভাবে পেটায় । একজন রামদার কোপ বসিয়ে দেয় তার মাথায় । সেই সময় ইউনিফর্ম পরা কেতুগ্রাম থানার পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল । তারা ভিড় ঠেলে উঁকি মেরে দেখে । একজন পুলিশ কর্মী এগিয়ে গিয়ে দায়সারাভাবে বলেন, ‘অ্যাই ,ছাড় ছাড়।’ পাশেই কোনো ব্যক্তি সমগ্র ঘটনা নিজের মোবাইল ক্যামেরায় রেকর্ড করে রাখে । পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পুলিশের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে । এমনিতেই আরজি করের তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ হত্যাকাণ্ডে প্রমান লোপাটের অভিযোগ, দিন কয়েক আগে কলকাতায় শিক্ষকের পেটে লাথি মারার ঘটনায় রাজ্য পুলিশের উপর রাজ্যবাসী কার্যত আস্থা হারিয়ে ফেলেছে । তার উপর কেতুগ্রামের কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুর বাজারে পুলিশের সামনেই এক কলেজ পড়ুয়াকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় রাজ্য পুলিশের মানসিকতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
জানা গেছে,প্রথম পুলিশ কর্মী ঘটনাস্থলের পাশে দাঁড়িয়েই কোথাও ফোন করতে থাকেন। এরপর একজন পুলিশকর্মী এসে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিন্তু তারা ব্যর্থ হলে ফের ফোন করে আরও কিছু পুলিশ কর্মীকে ডাকেন । এদিকে হামলাকারীরা ওই কলেজ পড়ুয়াকে রক্তাক্তবস্থায় ফেলে চলে যায় । পরে পড়ুয়াকে কেতুগ্রাম -২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখান থেকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । কিন্তু যুবকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় । তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে ।
জানা গেছে,তিলক মণ্ডলের বাড়িতে রয়েছেন বাবা স্বপন মণ্ডল ও মা শ্রাবনী দেবী । বাবা চাষাবাদ করেন৷এছাড়া বাড়িতে একটা মুদিখানা দোকান চালান৷ মা গৃহবধূ । বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তিলক । এই ঘটনার উপর উৎসবের মাঝে গোটা পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া ।।