মুম্বাইয়ের ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তাহাভুর রানা বর্তমানে ভারতের কব্জায় ৷ এনআইএ তাকে ম্যারাথন জেরা করছে । এই সন্ত্রাসী হামলার চিত্রনাট্য রচিত হয়েছিল পাকিস্তানে । বেশ কিছু ভারতীয়ও জড়িয়ে আছে এই ষড়যন্ত্রে । ধৃত তাহাভুর রানার মাধ্যমে এমন অনেক মুখোশধারী ভারতীয়ের নাম প্রকাশ্যে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
এদিকে তাহাভুর রানা ভারতে আসার পর থেকে একটা নীরবতা বিরাজ করছে; টিআরপি অর্জনের জন্য মিডিয়াও নতুন নতুন তথ্য প্রকাশ করছে না। বিশ্লেষকরাও তাদের মতামত দিচ্ছেন না । এটা আসন্ন ঝড়ের সঙ্কেত বলে মনে করা হচ্ছে । আসুন এই পুরো বিষয়টির গভীরে যাওয়া যাক…প্রশ্নটি কেবল পুলিশ বা অফিসারদের নিয়ে নয়— প্রশ্নটা সেই ব্যবস্থাকে নিয়ে, যারা ১৬৬ জনের মৃত্যুর পরেও এই মারাত্মক অপরাধ ও ষড়যন্ত্রকে ঢেকে রেখেছিল, কখনও সত্যের গভীরে পৌঁছনোর চেষ্টা করেনি । মুম্বাই হামলার সময়, বিশ্বাসঘাতকতাদের নীরবতা সন্ত্রাসীদের বুলেটের চেয়েও বিপজ্জনক ছিল। পুলিশ কমিশনার হাসান গফুরের বক্তব্যে কোনও সাধারণ অভিযোগ ছিল না- ওই বরিষ্ঠ পদাধিকারী শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে এক স্বাক্ষী ছিলেন । কিন্তু সেই সাক্ষ্যের উপর সংবাদমাধ্যম কোনও শিরোনাম করেনি এবং কোনও আদালতও তা গুরুত্ব দেয়নি। কেন ?
এই কারণেই কি ? যে অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল, সেই পরমবীর সিং, দেবেন ভারতী, ভেঙ্কটেশ, তারা কি কোনও “বড় খেলার” মোহরা ছিলেন? এটা কি এই কারণে যে সেই আক্রমণের আসল সত্য পাকিস্তানের মাটি থেকে শুরু হয়ে ভারতের রাজনৈতিক করিডোরে ছড়িয়ে পড়েছিল ? হাসান গফুরের অভিযোগ যদি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হত, তাহলে হয়তো ২৬/১১-এর আসল ‘পরিচালক’ ধরা পড়ত এতদিন । কিন্তু কী হলো?
একই পরমবীর সিং পরবর্তীতে আম্বানির বাড়ির কাছে বোমা স্থাপনের মামলা, পালঘর গণহত্যা এবং সাংবাদিকদের উপর অত্যাচারের মুখ হিসেবে আবির্ভূত হন। আর যে এটিএস একসময় সাধ্বী প্রজ্ঞাকে নির্যাতন করেছিল, সেই একই সংস্থা কাসাভের মোবাইল উধাও হওয়ার সময় নীরবতা পালন করে!
তাহাভুর রানা —এখন এই নামটি আবার আলোচনায়। যদি আমেরিকায় অবস্থানরত এই ধূর্ত ব্যক্তি, যিনি লস্কর-ই-তৈবা এবং আইএসআই-এর সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন, তাকে ভারতে আনা হয়েছে, সম্ভবত এবার ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার ষড়যন্ত্র নিয়ে ১৭ বছরের নীরবতা ভাঙতে চলেছে । আর যদি তার সাক্ষ্যে সেইসব মুখের নাম থাকে যাদের দিকে হাসান গফুর ইতিমধ্যেই আঙুল তুলেছিল— তাই নিশ্চিত থাকুন যে এটি কেবল সন্ত্রাসবাদের কবরই খুলে দেবে না, বরং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক যোগসাজশেরও দ্বার উন্মোচন করবে।
এই প্রশ্নগুলো কাকতালীয় নয়। এই প্রশ্নগুলোই বছরের পর বছর ধরে চাপা ছিল, কারণ উত্তরগুলো জানা থাকলে অনেক মুখ উন্মোচিত হতো। আজ যখন জাতীয়তাবাদের উপর বক্তৃতা দিচ্ছেন নেতারা, চ্যানেলগুলিতে সাংবাদিকরা উচ্চস্বরে চিৎকার করছেন এবং তথাকথিত “সতর্ক নাগরিক”রা এই বিষয়ে নীরব – তখন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ২৬/১১ কি সন্ত্রাসী হামলা ছিল নাকি পাকিস্তানের বানানো কোন চিত্রনাট্য ছিল যার সাথে কিছু ভারতীয় চরিত্র জড়িত ছিল? বল এখন তাহাব্বুর রানার কোর্টে। দেশ অপেক্ষা করছে – ১৬৬টি চিতার আগুন এখনও ঠান্ডা হয়নি।।

