প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ এপ্রিল : তৃণমূল কংগ্রেসের জনপ্রতিনিধিদের হতে হবে ’নম্র,মানবিক এবং সহানুভূতিশীল’। খোদ তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়ে রেখেছেন এই বার্তা । তার পরেও তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার শেষ নেই । এবার পূর্ব বর্ধমানের রায়নার নাড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের বহরমপুর গ্রামের তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন এলাকার বাসিন্দারা ।তাঁরা ওই পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে বেলাগাম তোলাবাজি চালানো সহ নানা অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে দলের সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী সহ জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।আর তা জানাজানি হতেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে রায়নার রাজনৈতিক মহলে। নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন ও দলীয় নেতৃত্ব।
রায়না-১ ব্লকের নাড়ুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এক প্রত্যন্ত গ্রাম বহরমপুর।এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই পেশায় কৃষিজীবী। এমন এক গ্রামের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য হলেন খোন্দকার সফিকুল আলম ওরফে আনন্দ সরকার। এই পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রামের বেশকিছু বাসিন্দা যে সব অভিযোগ এনেছেন তা চমকে দেওয়ারই মতন।অভিযোগকারীরা গত ৪ এপ্রিল তাঁদের স্বাক্ষর সম্বলিত সেই অভিযোগপত্র জেলাশাসক ও জেলার পুলিশ সুপারের দফতরে দাখিল করেছেন।একই অভিযোগপত্র তাঁরা ডাক যোগে দলের সুপ্রিমো সহ দলীয় নানা মহলেও পাঠিয়েছেন ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ,’গ্রামে লাগাম ছাড়া তোলাবাজি চালাচ্ছেন পঞ্চায়েত সদস্য খোন্দকার সফিকুল আলম।গ্রামে উন্নয়ন কাজ করতে আসা ঠিকাদাররাও পঞ্চায়েত সদস্য খোন্দকার সফিকুল আলমের তোলাবাজির শিকার হচ্ছেন।তার কারণে ঠিকাদাররা গ্রামে যে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ গুলি করছে,সেগুলি অতীব নিম্নমানের হচ্ছে।নিম্ন মানের কাজ কেন হচ্ছে তা ঠিকাদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে ঠিকাদাররা পঞ্চায়েত সদস্যের দিকেই আঙুল তুলছেন। ঠিকাদাররা পরিস্কার জানিয়ে দিচ্ছে,“পঞ্চায়েত সদস্য জোরপূর্বক মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করলে কাজের গুনগত মান তো কমা হবেই ।’
গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ,’পঞ্চায়েত সদস্য শুধু ঠিকাদারের কাছ থেকেই মোটা টাকা তোলা আদায় করেন,এমনটা নয়।গ্রামের কোন গরিব বা সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় কারণে পঞ্চায়েত সদস্য খোন্দকার সফিকুল আলমের কাছে ’সহি’ করাতে গেলেও পঞ্চায়েত সদস্য ৫০০ -১০০০ টাকা দাবি করে।এই পঞ্চায়েত সদস্য বহরমপুর গ্রামের গরিব মানুষের জমি কেড়ে নিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দখল করিয়ে দেন,এমন অভিযোগও করেছেন গ্রামবাসীরা।সারাদিন মদ্যপান করে থাকা পঞ্চায়েত সদস্য খোন্দকার সফিকুল আলম সাধারন মানুষকে ভয় দেখিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা।
যদিও গ্রামবাসীদের আনা সব অভিযোগই মিথ্যা বলে দাবি করেছেন পঞ্চায়েত সদস্য খোন্দকার সফিকুল আলম।উল্টে তিনি বলেন,এলাকায় থাকা মূল্যবান গাছ কেটে পাচার নিয়ে তিনি সরব হয়েছিলেন বলেই তাঁর নামে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সফিকুল এও বলেন, “আমি একটা ভালো বাড়িও তৈরি করতে পারি নি। ত্রিপলের ছাউনির ঘরে পরিবার নিয়ে অতীব কষ্টে দিন যাপন করি। আমি যদি অবৈধ উপায়ে মোটা টাকা কামাতাম,তাহলে আমিতো বিলাশিতা করে দিন কাটাতে পারতাম।আমি কোনও অসৎ পথে পা বাড়াই নি বলেই বহরমপুর গ্রামের মানুষ এইনিয়ে দু’বার আমায় পঞ্চায়েত সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করেছে’। অভিযোগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে সফিকুল আলম দাবি করেছেন ।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রায়না-১ ব্লকের সভাপতি বামদেব মণ্ডল বলেন,’বহরমপুর গ্রামের বাসিন্দারা প্রশাসনের দফতরে যে অভিযোগ দাখিল করেছেন,তার কপি আমাকেও দিয়েছে। ওই অভিযোগ পত্র আমি দলের উচ্চ মহলে পাঠিয়ে দিয়েছি। দলের উচ্চ নেতৃত্র এ নিয়ে যা পদক্ষেপ নেওয়ার নেবে।“এদিকে গ্রামবাসীদের আনা এমন অভিযোগ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি নেতৃত্ব।জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“জল ছাড়া মাছ যেমন বাঁচতে পারে না তেমনই অবৈধ উপায়ে টাকা না কামিয়ে তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও থাকতে পারে না। তাই অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা একথা বুক ঠুকে বলতে পারবে না।অভিযোগের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া জরুরী বলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দাবি করেছেন।’।

