এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ এপ্রিল : ওয়াকফ (সংশোধিত) আইন বাতিলের দাবিতে শুক্রবার দুপুর থেকে দফায় দফায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ৷ মুর্শিদাবাদের শাজুরমোড় ও ধুলিয়ান সংলগ্ন এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি, পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো, সাধারণ যানবাহন ও বাইক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে । ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ । পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে পাথর ছোড়া হয়। জখম হন ফারাক্কার এসডিপিও। বেছে বেছে হিন্দুদের ঘরবাড়ি,দোকান ও মন্দিরে হামলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী
রাজ্য বিজেপির যুব নেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারির জনৈক এক হিন্দু ব্যক্তির ভাঙচুর হওয়া হোটেলের ভিডিও পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর ওই ভিডিওতে দেখা গেছে ‘শ্রী হরি হিন্দু হোটেল এন্ড লজ’ লেখা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে । ব্যানারে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সেটি মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের নতুন ডাকবাংলো এলাকায় রয়েছে ওই হোটেলটি । তরুনজ্যোতি প্রশ্ন তুলেছেন,’অন্দোলন তো হচ্ছে ওয়াকফ আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে—তা হলে হিন্দুদের উপর হামলা কেন? কার জন্য আন্দোলন, আর কার উপর প্রতিশোধ? এই প্রশ্নের জবাব দেবে কে? আইন সংশোধনের বিরোধিতা করতে চাইলে তা হোক শান্তিপূর্ণভাবে, যুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু হিন্দুদের দোকান, মন্দির, ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে হামলা কেন? এটা কি আন্দোলন, না উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রতিশোধ?’ তিনি আরও লিখেছেন,’এখানেই আসল প্রশ্ন: সংবিধান অনুযায়ী প্রতিবাদ করার অধিকার সবার আছে—কিন্তু কারো উপর অন্যায় অত্যাচারের অধিকার কারও নেই। জবাবদিহি হোক, ন্যায়বিচার হোক।’
গতকাল শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছিলেন, ধুলিয়ান পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের একটি দুর্গা মন্দির এবং একটি রাধাকৃষ্ণ মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। ওই মন্দির দুটির পাশে থাকা হিন্দুদের বাড়ি ও দোকান তছনছ করে দেওয়া হয়েছে ।সামসেরগঞ্জ বিধানসভার কাঞ্চনতলা অঞ্চলের ডাকবাংলো মোড়ে ৩০ টা হিন্দুদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে । শামসেরগঞ্জ বিধানসভার প্রতাপপুর অঞ্চলের জয়কৃষ্ণপুরের ঘোষ পাড়াতে একটি কালী মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে ।
এদিকে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুজব ছড়ালে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে বিএসএফও। তবে পুলিশ যাই দাবি করুক না কেন ইন্দ্রজিৎ সিংহ (Indrajit Singha) নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর বর্ণনা অনুযায়ী ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে আসছে মুর্শিদাবাদ থেকে । তিনি ইংরাজিতে লিখেছেন,’ইন্টারনেট বন্ধ করে আপনি মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে ভয়াবহ পরিস্থিতি দমন করতে পারবেন না। নিরক্ষর গুণ্ডারা সমস্ত হিন্দুদের সম্পত্তি এবং পরিবারের উপর আক্রমণ, পুড়িয়ে ফেলছে, লুটপাট করছে। কোনও পুলিশ নেই, কোনও প্রশাসন নেই যে তাদের আটকাবে । স্থানীয় পুলিশের অনুমতি ছাড়া এত বড় জনতা কীভাবে জড়ো হতে পারে? কেন কোনও হস্তক্ষেপ নেই, আপনারা সবাই কি বধির বা অন্ধ? আমাদের সমস্ত আত্মীয়স্বজন, পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব ভীত, এখন কী করা উচিত তা জানি না! অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য মমতা ব্যানার্জি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ এবং অনুরোধ করছি!
‘