এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ এপ্রিল : আজ শুক্রবার ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে জমায়েত থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং এমনকি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে রাজ্যের হিন্দুদের বার্তা দেন, ‘পুলিশ কিছু করবে না, নিজেরা প্রতিরোধ করুন একজোট হন ।’ পাশাপাশি তিনি এও অভিযোগ করে যে ক্রমাগত যে হামলাগুলো ঘটছে তা সুপরিকল্পিত, হঠাৎ করে কিছু ঘটছে না ।
আজ শুক্রবার কলকাতার ৬ মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আজকে দুপুর আড়াইটার পর থেকে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে । আমার কাছে সমস্ত ভিডিও এবং তথ্য আছে । কলকাতার কড়েয়া থানায় এলাকায় তারকেশ্বরে পুজো দিতে যাওয়া পুণ্যার্থীদের উপর হামলা হয়েছে । একজন হাসপাতালে ভর্তি আছে। তারা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়, ধর্মীয় আস্থার উদ্দেশ্যে তারকেশ্বরে যাচ্ছিলেন । যেহেতু তাদের পোশাক বা পরিচয় এর মধ্যে হিন্দুত্ব ছিল সেই কারণে আক্রমণ করা হয়েছে ।’
তিনি বলেন,’এখান থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার আমতলাতে জঙ্গিপুরের কায়দায় পুলিশের গাড়িতে হামলা হয়েছে । পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের জেলা শাসকের অফিসে ডেপুটেশন দেওয়ার সময় বাসের উপর আক্রমণ হয়েছে । হুগলি জেলার চাপদানিতে, যেখানে ২০২৩ সালে রামনবমীতে আক্রমণের পরে এনআইএ হয়েছিল, সেখানে একইভাবে হিন্দুদের ধ্বজ নামানো হয়েছে,চাপদানি পুলিশ আউটপোস্টের কাছে যেখানে বিক্ষোভ হচ্ছিল সেখানে । সেই ভিডিও ফুটেজ আছে । যেখানে প্যানিকের সৃষ্টি করা হয়েছিল ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে । এখানে একটি দুর্গা মন্দির এবং একটি রাধাকৃষ্ণ মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে৷ ওই মন্দির দুটির পাশে থাকা হিন্দুদের বাড়ি ও দোকান তছনছ করে দেওয়া হয়েছে । এমনিতেই ওখানে হিন্দুরা সংখ্যালঘু । এরা বারে বারে আক্রান্ত হন । আজ সেখানে বাড়ি এবং দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ।’ তিনি বলেন,’কাঞ্চনতলা অঞ্চল, ধুলিয়ানের পার্শ্ববর্তী এলাকা, সামসেরগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত, ডাকবাংলো মোড়ে ৩০ টা হিন্দুদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে । ঠিক একইভাবে ২০১৯ সালে ঔরঙ্গাবাদ, ওমরপুর এবং নিমতিতাতে ৬৮ টা দোকান ভাঙ্গা হয়েছিল, লুট করা হয়েছিল । আজকে এই মুহূর্তে ডাক বাংলো মোড়ে ত্রিশটা হিন্দুর দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে । শামসেরগঞ্জ বিধানসভার প্রতাপপুর অঞ্চলের জয়কৃষ্ণপুরের ঘোষ পাড়াতে একটি কালী মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে । যেটা ধুলিয়ান শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে।’
শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য পুলিশকে নিশানা করে বলেন, ‘এগুলো জানার পরেও কোথাও পুলিশের প্রস্তুতি ছিল না । সামান্য কয়েকজন সিভিক ভলেন্টিয়ার এর হাতে লাঠি । আমরা বারে বারে মধ্যরাত পর্যন্ত রাজ্যপালকে বলেছি আপনি পরামর্শ দিন । কিন্তু তিনি পরামর্শ দেবেন না । মুখ্যসচিবকে, জেলাশাসককে বারে বারে বলেছি আপনারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহযোগিতা নিন । এইভাবে আপনারা বেছে বেছে নিরীহ লোকেদের যা করছেন আজ মোথাবাড়িতে গিয়ে আমি নিজে দেখে এসেছি । তারা সবাই নিরীহ মানুষ কোন দলের সঙ্গে যুক্ত নয় । সেখানে ৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছে । তেমনি আজকে একইভাবে সামসেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানের যা করেছে, বর্বরোচিত ঘটনা ।’
তিনি রাজ্য পুলিশের ডিজিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘রাজীব কুমারের ফর্মুলা রেডি আছে। প্রথমে যা হওয়ার হয়ে যাবে…ভেঙ্গেচুরে লুটপাট করে । তারপরে ইন্টারনেট সাসপেন্ড হয়ে যাবে । এখন ইন্টারনেট সাসপেন্ড হয়েছে । একটু পরে জঙ্গিপুরের এসডিও ১৬৩ ধারা লাগু করবে । ফর্মুলা রেডি । সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া বন্ধ হবে । আর আপনারা সাংবাদিকরা সেকুলার সাজার জন্য এগুলো দেখাবেন না৷ সেজন্য আমাকে এগুলো করতে হচ্ছে । যাতে আমার কথা দুই চার লাইনই যায় । না গেলেও ফেসবুক লাইভে যাচ্ছে গোটা বাংলার লোকেরা দেখছে ।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধেও তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন শুভেন্দু অধিকারী৷ তিনি বলেন,’এই মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বে একটা অসহনীয় অবস্থা তৈরি হয়েছে । এবং টার্গেট করা হচ্ছে হিন্দু ধ্বজকে, যেটা রাজনৈতিক পতাকা নয় । টার্গেট করা হচ্ছে হিন্দু মন্দিরকে । যাদের পোশাক এবং দেহে হিন্দুর পরিচয় রয়েছে তাদের টার্গেট করা হচ্ছে । এবং টার্গেট করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে । একটা প্যানিকের সিচুয়েশন তৈরি করা হয়েছে । এটা নতুন নয় । এবারে সমস্ত সীমা পেরিয়ে গিয়ে তারা এই কাজ করছে এবং দিকে দিকে হচ্ছে ।
অন্যদিকে ওনার আর এক সাম্প্রদায়িক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ১৬ তারিখে ইমাম ও মুয়াজ্জেম, যারা আড়াই হাজার এবং ১ হাজার টাকা করে এই সরকারের উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করেন, তারা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে, যিনি হিন্দু ধর্মকে গন্দা ধর্ম বলেন ও মহাকুম্ভকে মৃত্যু কুম্ভ বলেন তিনি ভাষণ দেবেন । আর আবুল বাশারের মত দশ হাজার টাকায় ভাষণ দিতে যাওয়া বুদ্ধিজীবীরাও থাকবেন ।’
শুভেন্দু অধিকারী আক্রান্ত এলাকার হিন্দুদের বার্তা দেন, ‘তাই আমি আপনাদের মাধ্যমে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দাবি করছি । প্রয়োজন হলে সংঘবদ্ধ হন পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলুন । কারণ আপনাদের দেয়ালের পিঠ ঠেকে গেছে। বিচার ব্যবস্থাও চুপ করে বসে থাকতে পারেন না । শনি, রবি, সোম, মঙ্গল আদালত বন্ধ আছে বলে এসব চলতে পারে না । এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি ।’ তিনি বলেন,’আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা নেব৷’ তিনি হিন্দুদের পরামর্শ দেন,’পরিবার এবং জীবন নিয়ে সুরক্ষিত জায়গায় থাকুন । বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় যে অবস্থাতে হিন্দু সমাজ রয়েছে, বলব একত্রিত হয়ে নিরাপদ জায়গায় পরিবারকে নিয়ে থাকুন। বাড়ি ভেঙেছে, বাড়ি পুনরায় আমরা করে দেবো । মন্দির ভেঙেছে, সেই মন্দিরকে পুনরায় গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে পবিত্র করে আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনব । দোকান ভাঙচুর হয়েছে আমরা পাশে দাঁড়াবো । আগে আপনারা নিজেদের জীবনটাকে সুরক্ষিত রাখুন ।’ তিনি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার হিন্দুদের হিন্দু বহুল এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান ।
তিনি বলেন, প্রত্যেককে অনুরোধ করবো ইমেইল করে বিএনএস এর অন্তর্গত ধারায় থানাতে অভিযোগ করে রাখুন । কারণ একটা কথা খুব পরিষ্কার যে চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায় । ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গা হয়েছিল, হাজার হাজার শিখকে খুন করা হয়েছিল, কংগ্রেসের লোকেরা করেছিল আর কংগ্রেসের শাসক তাদের খালাস করে দিয়েছিল৷ সেই মামলা পুনরায় খুলে সঞ্জন কুমাররা জেলে গেছে । ভাববেন না চিরদিন মমতা ব্যানার্জি থাকবে, তার পুলিশ থাকবে, আর আপনাদের বাঁচিয়ে দেবে । এগুলো রেকর্ড করে রাখুন বিএনএস এর অন্তর্গত ধারায় এফআইআর করুন । যেমন মোথাবাড়ির লোকেরা মোথাবাড়ি এবং মালদা পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে গেছে তাদের নিষ্ক্রিয়তার জন্য ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,ধর্মান্ধরা ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে । এর আগেও সিএএ -কে এনআরসি বলে মিথ্যা প্রচার করেছিল । একইভাবে ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে জঙ্গিপুর থেকে যা শুরু হচ্ছে, একে তো আন্দোলন বলা যাবে না, এটা দুর্বৃত্তায়ন বলা যাবে । মুখ্যমন্ত্রী বা পুলিশমন্ত্রী ভোট ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশের থেকেও খারাপ অবস্থা করে দিয়েছে এই রাজ্যে ।’
বৃহস্পতিবার কলকাতায় জামায়েত উলেমা হিন্দের সভায় মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর হুমকি প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা বলেন,’কলকাতায় সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর হুংকার সভায় বলেছিলেন কলকাতাকে টাইট দেবেন । এই লোক মন্ত্রিসভায় থাকা উচিত ? উনি আবার গর্বের সঙ্গে দাবি করছেন মুখ্যমন্ত্রী তাকে এই বিরাট সমাবেশের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন । ঔধত্য, দম্ভ, অহংকার কোন জায়গায় গেছে !’।