বিজেপি ছাড়া ভারতের বাকি রাজনৈতিক দলগুলির কথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি মাঝে মধ্যে দেশদ্রোহীদের জন্য সহায়ক হয়ে ওঠে৷ তারা নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক ভরাতে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের পর্যন্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে । সিএএ নিয়ে ওই সমস্ত দলের বিরোধিতার উদ্দেশ্য হল যে শুধু হিন্দু-শিখ-জৈন নয়, পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদেরও নাগরিকত্ব দিতে হবে৷ তাতে তাদের ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত থাকবে !
ওই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির এই প্রকার বিষাক্ত চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছিল দিল্লির ‘বাটলা হাউস এনকাউন্টার’-এর ঘটনায় । বাটলা হাউস এনকাউন্টার মামলাটি ছিল দিল্লি পুলিশের একটি সন্ত্রাস বিরোধী সশস্ত্র অভিযান, যেখানে ২০০৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ওখলার জামিয়া নগরের বাটলা হাউস এলাকার একটি ফ্ল্যাটে লুকিয়ে থাকা ‘ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ‘ (আইএম) নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই অভিযানে দুই সন্ত্রাসী খতম হয় এবং ইন্সপেক্টর মোহন চাঁদ শর্মার হত্যার দায়ে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ আরিজ খান ওরফে জুনাইদ নামে এক সন্ত্রাসীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা হল যে এনকাউন্টারে দুই সন্ত্রাসীর মৃত্যুতে সারা রাত অঝোরে কেঁদেছিলেন সোনিয়া গান্ধী । কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদ প্রকাশ করেছিলেন যে রাজীব গান্ধীর মৃত্যুতেও সোনিয়া গান্ধী এতটা কাঁদেননি, যতটা কেঁদেছিলেন ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের দুই সন্ত্রাসীর মৃত্যুতে । পাশাপাশি এনকাউন্টারটি ভুয়ো বলে চিৎকার করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি ও অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
সময়টা ছিল ২০০৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ।দিল্লির জামিয়া নগরের বাটলা হাউস এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশের একটি বিশেষ সেল। উদ্দেশ্য ছিল দিল্লির ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পেছনের সন্ত্রাসীদের ধরা। কিন্তু যে অভিযানে দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছিল, তার পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে -কারণ গুলিবিনিময়ে দুই সন্ত্রাসী খতম হয়েছে,মোহন চন্দ্র শর্মা নামে একজন ইন্সপেক্টরও শহীদ হন। আর এখান থেকেই গল্প শুরু হয়, যেখানে সন্ত্রাসীদের জন্য মোমবাতি জ্বালানো হয়, আর শহীদের আত্মত্যাগের উপর আঙুল তোলা হয়। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর চোখে “অশ্রু” ছিল। কিন্তু সেই কান্না শহীদ ইন্সপেক্টরের জন্য ছিল না। তখন একটা কথা শোনা যায় যে সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, “যদি এটা ভুয়া এনকাউন্টার হয় ?” সন্ত্রাসীদের প্রতি তার এই নমনীয়তা তৎকালীন নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয়।
শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সংসদে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন যে এই এনকাউন্টারটি ভুয়া। তাছাড়া, অরবিন্দ কেজরিওয়ালও এই পুরো অভিযানের উপর প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং তদন্তের দাবি করেছিলেন । এই নেতারা পুলিশের গুলি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন,কিন্তু সন্ত্রাসীদের একে-৪৭ -এর উপর নয়। ইন্সপেক্টর শর্মার শহীদ হওয়ার ব্যাপারে তাদের সন্দেহ ছিল কিন্তু ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ইমেল স্বীকারোক্তিতে তারা বিশ্বাস করেনি। এই সময়টা ছিল যখন সন্ত্রাসীদের জন্য ঘরে বাইরে মানবাধিকারের আবেদন করা হচ্ছিল এবং দেশের পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছিল। প্রশ্নটি ছিল না যে তদন্ত করা উচিত কিনা – প্রশ্নটি ছিল তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই কেন ফতোয়া জারি করা হয়েছিল? বাটলা হাউসের ফ্ল্যাট থেকে একজন শহীদ পুলিশ অফিসারের ছবি কেন উধাও হয়ে গেল, কিন্তু নিহত সন্ত্রাসীদের ‘শহীদ’ স্মরণে মোমবাতি জ্বালানো হল কেন?
পরে, সত্য বেরিয়ে আসে। আদালত স্বীকার করেছে যে এনকাউন্টারটি আসল ছিল। একের পর এক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটতে থাকে। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন নেটওয়ার্ক প্রকাশ্যে আসে। এই সংঘর্ষের সাথে অনেক বিস্ফোরণের যোগসূত্র ছিল। কিন্তু না সোনিয়া ক্ষমা চান, না মমতা তার বক্তব্য বদলান, না কেজরিওয়াল তার ভুল স্বীকার করেন।
সত্যটা হল, কিছু মানুষের কাছে তোষণ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে তারা সন্ত্রাসীদের মৃতদেহ নিয়েও রাজনীতি করে । তাদের কাছে দেশের নিরাপত্তার চেয়ে ভোট ব্যাংক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
বাটলা হাউস এনকাউন্টার কেবল একটি পুলিশ অভিযান ছিল না, এটি ছিল সেই সময়ের রাজনৈতিক চরিত্রের প্রতিফলন। এ থেকে বোঝা যায় যে, যখন দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন কিছু নেতা তাদের ধর্মনিরপেক্ষ চশমার দিয়ে দেখে শত্রুকেও ‘নির্দোষ’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন।
আজ, যখন আমরা এই ঘটনাগুলি স্মরণ করি, তখন ইন্সপেক্টর মোহন চন্দ্র শর্মার মুখটি সামনে ভেসে ওঠে – যিনি দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়েছিলেন।
আর তারপর আমরা সেই নেতাদের কথা মনে করি যারা প্রশ্ন তুলেছিলেন… কিন্তু কখনও নিজেদের জিজ্ঞাসা করেননি যে তারা সন্ত্রাসবাদের পক্ষে নাকি এর বিরুদ্ধে? কারণ যখন একজন ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের জন্য কাঁদে, আর শহীদদের জন্য নীরব থাকে – তখন বুঝতে হবে যে সে কেবল একজন নেতা নয়, সে দেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে।।