বাংলাদেশের বর্তমান ভারত বিদ্বেষী সরকারের উপর প্রথম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করল ভারত । তবে এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা হয়নি । ব্যবহার করা হয়নি কোনো অস্ত্রও । বরঞ্চ বুবুক্ষু বাংলাদেশকে ‘ভাতে মারার’ স্ট্রাটেজি নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার । এক কথায় বাংলাদেশকে এক কঠিন ধাক্কা দিল ভারত ।
বলা হয় যে, নিজের সাধ্যের বাইরে পা প্রসারিত করা উচিত নয়। আর যে ভুলটা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস সম্প্রতি করেছিলেন । তিনি চীনে গিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন যে ভারতের উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্য স্থলবেষ্টিত এবং বাংলাদেশ তাদের জন্য “সমুদ্রের অভিভাবক” হিসেবে ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ যা বলতে চেয়েছিল তা হল, তারা এই অঞ্চলের সর্বেসর্বা এবং সবকিছু তাদের ইচ্ছামতো হওয়া উচিত। কিন্তু গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের টনক নড়িয়ে দিয়েছে ভারত । ভারত তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশের সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট নীতি বাতিল করেছে। ট্রান্স-শিপমেন্ট নীতির অর্থ হল যদি কোনও দেশের কোনও বড় বন্দর না থাকে অথবা স্থলপথে পণ্য রপ্তানির প্রয়োজন হয় অথবা প্রতিবেশী কোনও দেশে পণ্য সরবরাহের প্রয়োজন হয়, তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলি তাদের সহায়তা করে।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ, যেমন ভুটান, নেপাল বা মায়ানমার, সরাসরি বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত নয় । এমনকি যদি কিছু স্থল যোগাযোগ থাকে (মায়ানমারের ক্ষেত্রে), তবে কোনও বন্দর নেই… এমন পরিস্থিতিতে, ভারত এই দেশগুলিকে বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য করার পথ করে দেয়। বাংলাদেশ যদি নেপালে কোন পণ্য পাঠায়, তাহলে তা কেবল ভারত হয়ে যাবে… একইভাবে, নেপাল যদি বাংলাদেশে কোন পণ্য পাঠায়, তাহলে তাও ভারত হয়ে যাবে। বিমানে ভ্রমণ খুবই ব্যয়বহুল হওয়ার কারণেই ভারত বাংলাদেশের সাথে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল যাতে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু ভারত সরকার ইতিমধ্যেই ইউনূসের দাম্ভিকতা এবং সেখানে হিন্দুদের উপর সংঘটিত অত্যাচারে বিরক্ত ছিল । যার প্রতিক্রিয়ায় ৮ এপ্রিল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই চুক্তি বাতিল করা করেছে। এখন বাংলাদেশের কি হবে?
এখন বাংলাদেশ হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাদের পণ্য এই দেশগুলিতে পৌঁছাবে না। এই দেশগুলির যা কিছু পণ্যের প্রয়োজন, ভারত তা সরবরাহ করবে । তবে দাম একটু সামঞ্জস্য পূর্ণ করতে হতে পারে । আর এইভাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে…বিচ্ছিন্ন হবে নয়,বরঞ্চ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন ইউনূস জরুরি সভা করছেন । ভারতকে আলোচনার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন । এরপর তিনি ডবলুটিও-তে যেতে পারেন… তিনি জাতিসংঘে যাবেন… এবং সেখানে কাঁদবেন… হায় মোদি তাকে মেরে ফেলেছেন । ইউনূস হয়ত ভেবেছিল বাংলাদেশের বিষয়ে ভারত পুরনো কংগ্রেস সরকারের নীতিতে চলবে । আসলে তিনি নরেন্দ্র মোদীর সঠিক মূল্যায়ন করতে ভুল করে ফেলেছেন।
ভারতের বন্দর ব্যবহার বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে কতটা প্রভাব পড়বে ? বিকল্প কী ?
এই শিরোনামে বাংলাদেশের মিডিয়া আউটলেট বিডি নিউজ ২৪ ডমের একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হল :
জরুরি প্রয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যসহ পশ্চিমের ক্রেতাদের কাছে দ্রুত রপ্তানি পণ্য পাঠাতে ভারতের বিমান ও স্থলবন্দরের বিকল্প ব্যবহারের পথ বন্ধ হল। প্রতিবেশী দেশটির হঠাৎ এ সিদ্ধান্তের প্রভাব খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে; অন্য উপায় কী হতে পারে তা নিয়েও ভাবছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। ভারতের এমন পদক্ষেপের কারণ কী হতে পারে তা নিয়েও সরকারি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা।
বুধবার বিকালে সিদ্ধান্তটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে রপ্তানিকারকরা বলেছেন, এতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে তেমন প্রভাব না পড়লেও ক্রেতা দেশের কাছে পণ্য সরবরাহের বিকল্প এক পথ কমে যাবে। রপ্তানি সক্ষমতা কিছুটা হলেও সংকুচিত হবে। তবে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ককে বহুমাত্রিক করার যে প্রচেষ্টা গত কয়েক দশক ধরে চলছিল এ ধরনের বাণিজ্য বাধা সেই উদ্যোগে ছেদ ফেলবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও কূটনীতিকরা।এমন প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অন্তর্বর্তী সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে মোবাইলে ফোন করে ও ইমেইল পাঠিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার সাড়া পাওয়া যায়নি।
ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) এক সার্কুলারে দেশটির স্থলসীমান্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে ভুটান, নেপাল, মিয়ানমারসহ তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত।
পরে বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন করে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করার যে সিদ্ধান্ত ভারত নিয়েছে, তা নেপাল বা ভুটানগামী পণ্য চালানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। অর্থাৎ, ভারতের কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা আর দেবে না ভারত।
প্রথমে ভারতের সংবাদপত্রে আসা খবরে হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের সংবাদমাধ্যমে তুমুল আলোচনার মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি স্পষ্ট করে বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়,’বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে উল্লেখযোগ্য পণ্যজট সৃষ্টি হচ্ছিল। এই কারণে আমাদের নিজস্ব রপ্তানিতে বিলম্ব, খরচ বৃদ্ধি এবং ব্যাকলগ তৈরি হচ্ছিল। ফলে, এই সুবিধা ৮ এপ্রিল ২০২৫ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্পষ্ট করে বলা যায়, এই সিদ্ধান্ত ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে নেপাল বা ভুটানে পণ্য পরিবহনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।”
কী আছে সার্কুলারে
সিবিআইসি মঙ্গলবার এক সার্কুলারে বাংলাদেশের পণ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায়। এতে ২০২০ সালের ২৯ জুনের একটি সার্কুলার ‘অবিলম্বে’ বাতিল করার কথা বলা হয়। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য কনটেইনার বা কভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতের স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে দেশটির অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল পুরনো ওই সার্কুলারে।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, বর্তমানে ট্রানজিটে থাকা বাংলাদেশি পণ্য বিদ্যমান প্রক্রিয়ার আওতায় ভারত ছাড়তে পারবে, তবে নতুনভাবে কোনো পণ্যের চালান ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পাবে না। ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক অন্য দেশে রপ্তানির বিষয়টিও বাধাগ্রস্ত হবে। ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্টার্স কাউন্সিল এই সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল, কারণ বাংলাদেশ ও ভারত তৈরি পোশাক খাতে প্রতিযোগিতা করছে ।।