এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৮ এপ্রিল : কলকাতার কসবা ডিআই অফিস চত্বরে চাকরিহারাদের উপর নির্মমভাবে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ । কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলেও খবর । সেই লাঠিচার্জের দৃশ্য সাংবাদিকদের ক্যামেরায় রেকর্ডও হয় । যাকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকার ও পুলিশকে নিশানা করেছে বিজেপি । লাঠিচার্জের প্রতিবাদে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক বাতিল করা হল বলে জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলি ।
রাজ্য বিজেপির যুবমোর্চার নেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি চাকরিহারাদের উপর নির্মমভাবে লাঠিচার্জের তীব্র নিন্দা করছেন । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করে তিনি লিখেছেন,’চাকরি হারা শিক্ষকদের উপর পুলিশি বর্বরতা – গণতন্ত্রে আর কতটা নিচে নামবে তৃণমূল সরকার? যে পুলিশ দুধেল তৃণমূলের পোষ্য বাহিনীর কাছে টেবিলের তলায় মাথা লুকিয়ে পড়ে, যে পুলিশ আর জি কর হাসপাতালের মহিলা বাথরুমে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচায়, যে পুলিশ উমরপুরের পেট্রোল পাম্পে ঢুকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে— সেই একই পুলিশ আজ নিরস্ত্র, নিরীহ চাকরিহারা শিক্ষকদের উপর লাঠিচার্জ করে নিজেদের “শক্তিমান” প্রমাণ করতে চায়!’
তিনি লিখেছেন,’আজ যারা রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা কেউ জঙ্গি নয়। তারা হলেন সমাজ গঠনের কারিগর— শিক্ষক। তাদের একমাত্র অপরাধ, তারা বিচার চেয়েছেন। তারা তাদের হারানো চাকরি ফেরত চেয়েছেন। তাদের চাকরি গেছে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, অযোগ্যদের রক্ষা করার ষড়যন্ত্র এবং সম্পূর্ণ অমানবিক আচরণের কারণে।’ তিনি দাবি করেন ‘আজকের এই পুলিশি বর্বরতা সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সংঘটিত হয়েছে। নিজেদের গদিচ্যুতির ভয় এতটাই গ্রাস করেছে যে, প্রতিবাদকারীদের মুখ বন্ধ রাখতে নির্লজ্জভাবে লাঠি হাতে তুলে নিয়েছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন।এই নির্লজ্জ, অমানবিক ও দমনমূলক আচরণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।’
তিনি আরও লিখেছেন,’ চাকরি হারা শিক্ষকরা বিচার চান, দয়া নয়। তাদের আন্দোলন কোনও অপরাধ নয়, বরং তা ন্যায়বিচারের জন্য এক মর্যাদাপূর্ণ লড়াই। তৃণমূল সরকার আজ প্রমাণ করল— দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে ও সৎদের দমন করতেই তাদের সমস্ত প্রশাসনিক শক্তি ব্যয় হয়। এটাই কি গণতন্ত্র? এটাই কি শিক্ষকদের প্রতি সম্মান? আমরা সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের আহ্বান জানাই— এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। কারণ আজ শিক্ষক, কাল আপনি।’
প্রসঙ্গত,ওয়েব সাইটে ও.এম.আর শিটের ‘মিরর ইমেজ প্রকাশ’ ও ‘সম্মানের সঙ্গে চাকরিতে পূনর্বহালে’র দাবিতে আজ বুধবার রাজ্যজুড়ে ডিআই ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারা শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা৷ আজ কসবার ডিআই অফিসে তারা জড়ো হলে আচমকা উলটো দিকের ভবন থেকে সাদা পোশাকের কয়েকজন ষণ্ডামার্কা ব্যক্তি লাঠি নিয়ে চাকরিহারাদের উপর চড়াও হয়৷ শুরু হয় এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ । কারোর মাথায় মারা হয়েছে আবার কারোর পিঠে লাঠির বাড়ি মেরে রক্তাক্ত করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ।পুলিশের এই নিষ্ঠুর আচরণে রাজ্য জুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ।
যদিও কলকাতা পুলিশ পালটা একটা ভিডিও শেয়ার করে লিখেছে, ‘ আজ কসবা ডিআই অফিসের বাইরে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে যে, প্রথমে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা, বিনা উসকানিতে পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালায় এবং হিংসাত্মক আচরণ করে, যার মধ্যে মহিলা পুলিশ কর্মীরাও ছিলেন। চারজন পুরুষ পুলিশকর্মী এবং দুইজন মহিলা পুলিশকর্মী আহত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি ও আহতের ঘটনা রোধ করতে পুলিশ বাধ্য হয়ে হালকা বলপ্রয়োগ করে।এই ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে।’।