এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),৩১ মার্চ : পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার আড়া গ্রামের এক তৃণমূল নেতার দাদাগিরিতে চরম আতঙ্কে আছে জনৈক কৃষক পরিবার । অতিরিক্ত জায়গা ছাড়তে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে বাঁশের ব্যারিকেড করে বন্ধ করে দেওয়া হল কৃষকের খামাবাড়ি যাওয়ার রাস্তা । সেই ব্যারিকেড খুলতে যাওয়ার অপরাধে দলবল নিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে কৃষ্ণগোপাল মণ্ডল নামে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে । ঘটনার পর থেকে আক্রান্ত ভট্টাচার্য পরিবারের লোকজন চরম আতঙ্কে আছে । পরিবারটি ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে ঘটনার কথা জানিয়েছেন। এদিকে ওই তৃণমূল নেতার এই জুলুমবাজি মেনে নিতে পারছেন না দলেরই একাংশ। তবে নেতার এমনই দাপট যে কেউ প্রকাশ্যে এনিয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না ।
জানা গেছে, ভাতারের মাহাচান্দা গ্রামপঞ্চায়েতের আড়া গ্রামের বাসিন্দা ভট্টাচার্যদের খামারবাড়ির পিছনে সরকারি খাসজমি রয়েছে । বছর ছয়েক আগে সরকারি টাকায় আগে গ্রামের ৩২৯ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর তৈরি হয় । কিন্তু কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য রাস্তা ছিল না । ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকার স্বামী হলেন তৃণমূল নেতা কৃষ্ণগোপাল মণ্ডল। ভট্টাচার্য পরিবারটি সম্পন্ন বলে পরিচিত । পরিবারের দু’ভাই রথীন ভট্টাচার্য এবং রমেন ভট্টাচার্য পেশায় কৃষক । তাদের তিনটি ট্রাক্টর এবং দুটি হারভেষ্টর মেশিন রয়েছে। সেগুলি তারা ভাড়া খাটান । খামারবাড়িতেই সেগুলি থাকে।
রথীন ভট্টাচার্য বলেন,’অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য এবং পার্টিকর্মীরা আমাদের কাছে অনুরোধ করেন । সর্বসাধারণের স্বার্থে চার ফুট চওড়া জায়গা রাস্তা নির্মাণের জন্য ছেড়েও দিই । গতবছর ডিসেম্বর মাসে পঞ্চভদ্রের সামনে সাদা কাগজে লিখিতভাবে রাস্তা ছাড়ার চুক্তি করা হয় । কিন্তু চুক্তির পর কৃষ্ণগোপাল মণ্ডল সাত ফুট চওড়া রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়তে হবে বলে আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছিল । শুধু তাইই নয়, রাস্তার জন্য ২০ বস্তা সিমেন্ট কিনে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের দায়িত্ব নিয়ে রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে । আমরা এই অন্যায় দাবি মেনে না নেওয়ায় আমাদের খামারবাড়ির দুটি গেট বাঁশের ব্যারিগেট করে বিগত দুসপ্তাহ ধরে কৃষ্ণগোপাল বন্ধ করে রেখেছে । যেকারণে ট্রাক্টর এবং হারভেষ্টর মেশিনগুলি আর বের করতে পারছি না ৷’ তার অভিযোগ,বিষয়টি আমি শাসকদলের ব্লক নেতাদের জানালে তাদের পরামর্শে আমরা ব্যারিগেট খুলতে গিয়েছিলাম । কিন্তু ওই তৃণমূল নেতা ও তার বাড়ির লোকজন আমাদের তেড়ে আসে ।’
রথীন ভট্টাচার্যর অভিযোগ,’শনিবার রাতে কৃষ্ণগোপাল দলবল নিয়ে আমাদের বাড়িতে চড়াও হয় । বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করে । হুমকি দেয় । আমাকে আর আমার ভাই রমেনকে চুড়ান্ত হেনস্থা করে । তার জেরে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সায়নী অসুস্থ হয়ে পড়ে ।’ ঘটনার পর গোটা ভট্টাচার্য পরিবার চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে । যদিও অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা কৃষ্ণগোপাল মণ্ডল বাড়িতে ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ তবে ভট্টাচার্য পরিবারের খামারবাড়ির গেট বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে অবরূদ্ধ করে রাখার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘ওদের আলোচনায় বসার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু ওরা বসছে না । আলোচনায় বসে মিটিয়ে নিলেই বাঁশের ব্যারিগেট তুলে দিয়ে গেট খুলে দেওয়া হবে।’ কিন্তু গায়ের জোরে কাউকে জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা কতটা ন্যায়সঙ্গত ? এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার মানুষ । তারা ওই তৃণমূল নেতার জুলুমবাজির নিন্দা করেছে ।।

