এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৭ মার্চ : আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের একটা পোস্ট সকলের নজর কেড়েছে । একটি পোস্টারে নিজের ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন,’আমি পার্টির সঙ্গে আছি। আমার সাথে কারও ঝগড়া নেই, আমি কারো সাথে ঝগড়া করি না, আমার সবার সাথে বন্ধুত্ব আছে এবং বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করি।’ কিন্তু হঠাৎ কেন তিনি এই পোস্ট করতে গেলেন ? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে ।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির বিকল্প হিসেবে দেখে রাজ্যবাসী । অনেকেই মনে করেন যে, যেভাবে মমতার হাত ধরে সিপিএমকে সরিয়ে বাংলায় পরিবর্তন এসেছিল ২০১১ সালে । তেমনি শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে মমতা ব্যানার্জির শাসন ক্ষমতার অবসান ঘটানো সম্ভব । আর সেই কারণে দিলীপ ঘোষকে হাইলাইট করে শুভেন্দু অধিকারীকে চাপে ফেলার একটা প্রচেষ্টা তৃণমূল দীর্ঘদিন ধরে করছে বলে অভিযোগ ওঠে । তাই ২০২৬ সালের রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে এই কথিত বিরোধের জল্পনা দিলীপ ঘোষ জল ঢেলে দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে ।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন আইনজীবী প্রসূন মৈত্র একটি তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট করেছেন আজ । গত বছরের ২৭ শে মার্চ নিজের একটা পোস্টকে তিনি রিপোস্ট পোস্ট করেছেন । সেই পোস্টে প্রসূন মৈত্র তৃণমূলের “দিলীপ ঘোষ” রাজনীতি নিয়ে লিখেছিলেন, ‘প্রতিপক্ষ হিসাবে এখন তৃণমূলের কাছে শুভেন্দুর থেকে দিলীপ বেশী পছন্দের আর তাই তাকে প্রচারের আলোয় রাখতে তৃণমূল নেতৃত্ব বেশী আগ্রহী। এই কারণেই প্রথম তালিকায় দিলীপের নাম থাকলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অযাচিতভাবে টেনে আনেন দিলীপ ঘোষের ইকো পার্কে মর্নিং ওয়াক করার প্রসঙ্গ বা কখনও প্রশংসা করেন তার সাংগঠনিক দক্ষতার। মূল কারণ একটাই, দিলীপ’কে প্রচারে প্রাসঙ্গিক রাখা।
আর দিলীপও প্রচার পাওয়ার জন্যে যা খুশী করতে পারেন আর সেটাতে দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তিনি খুব একটা বিব্রত হন না। নিজের কাছে তিনি এতটাই বড় যে দল সেখানে গৌণ হয়ে যায়। এই কারণেই তিনি মা দুর্গার পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। একজন মহিলাকে বারমুডা পরে প্রচারের পরামর্শ দিতে পারেন। এমনকি নিজে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থেকে কর্মীদের “বিজেপি করলে মার খেতে হবে”- এমন নিদানও দিতে পারেন।
উল্টোদিকে শুভেন্দু অনেক বেশী পরিণত এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সম্পর্কে পরিচিত। নিজের লক্ষ যেনতেন প্রকারে – সেটা আদালতের নির্দেশের মাধ্যমে হোক বা কেন্দ্রীয় কমিশনগুলিকে ব্যবহার করে – পূরণ করতে তিনি বদ্ধপরিকর। মনে আছে নিশ্চয়ই যে প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে মহিলা পুলিশদের ব্যবহার করে তাকে শত প্ররোচনা দিলেও তিনি অধিকার ও শালীনতার সীমা অতিক্রম করেননি। সন্দেশখালি ও শেখ শাহজাহানকে নিয়ে তার নাছোড় মনোভাব তৃণমূলের মাথাব্যাথার কারণ হতে বাধ্য। নিজে একসময় তৃণমূলে থাকায় কোন কোন পুলিশ অফিসার পার্টির ‘গুডবুকে’ আছে সেটাও তার জানা।
এমতাবস্থায়, দিলীপ ঘোষ যে ভুলভাল বকে শুভেন্দু অধিকারীর গেমপ্ল্যান নষ্ট করতে চাইবেন এবং তার আমলেই রাজ্যে বিজেপি’র সবচেয়ে ভাল ফলাফল হয়েছিল (যদিও সেটা প্রত্যাশার তুলনায় নগন্য)- এই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখতে চাইবেন সেটা বলাই বাহুল্য। তাই এই নির্বাচনে ভাল ফল করতে হলে শুভেন্দুকে তৃণমূলের সাথে সাথে আরও একটা বিষয়ের সাথে লড়তে হবে আর সেটা হলো দিলীপ ঘোষের অপশব্দ।’
আজ প্রসূন মৈত্র লিখেছেন,’ঠিক এক বছর আগের লেখা কিন্তু এখনও সমান প্রাসঙ্গিক। যে নেতাকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বসে মহিলাদের গালি দিয়ে আর কাটারি কিনে খবরে আসতে হয় সেই খবরের পিছনে যে অন্য উদ্দেশ্য থাকে সেটা বুঝতে রকেট বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। সেদিন সমর্থনে ছিলেন অভিষেক আর এখন আছেন হুমায়ুন -তবে খেলাটা একই আছে।’।

