এইদিন ওয়েবডেস্ক,২৬ মার্চ : গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধ বন্ধ করতে বিক্ষোভ করেছে কয়েক শ ফিলিস্তিনি। এ সময় ফিলিস্তিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসকে বলা হয় চলে যেতে। ‘আউট, আউট, আউট, হামাস গেট আউট’ বলে স্লোগান দেন তারা। গত মঙ্গলবারই এই বিক্ষোভ হয়েছে, যাতে হামাসকে নাশকতা ছেড়ে গাজা ছেড়ে সরে যেতে বলা হয়। বিক্ষোভ হয়েছে আজ বৃহস্পতিবারও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর এমন ঘটনা এই প্রথম দেখা গেল। উত্তর গাজা গাজার সবচেয়ে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে একটি। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার বেশিরভাগ ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে বাসিন্দাদের বেশিরভাগ অংশ বেশ কয়েকবার স্থানান্তরিত হয়েছে। এই অবস্থায় নতুন করে সম্প্রতি হামলা চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। এরপর এবার হামাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা গেল।
এই বিক্ষোভের তথ্য ছড়িয়ে পড়তে না পড়তেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, এই বিক্ষোভ থেকে বোঝা যায় যে গাজায় ইসরায়েলের পুনরায় আক্রমণের সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন আবির্ভূত হওয়ার পর আবারও অদৃশ্য হয়ে গেছে হামাসের পুলিশ।
মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ‘আউট, আউট, আউট, হামাস গেট আউট’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন অনেকে। গত মঙ্গলবার গাজার বেইত লাহিয়া এলাকার দৃশ্য এটি। এতে দেখা যায়, চারপাশে ধ্বংসস্তূপ। এর মধ্যেই দলে দলে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনিরা।নাম ব্যবহার না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি যুদ্ধের বিরুদ্ধে একটি স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশ ছিল। কারণ মানুষ ক্লান্ত এবং তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। অনেকে হামাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘হামাসকে বের করে দাও’ বলে।তবে সবাই করেননি। মানুষ ক্লান্ত এবং কাউকেই দোষ দেওয়া উচিত নয়।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় বুধবার গাজা শহরের উপকণ্ঠ শেজাইয়ায় শত শত মানুষের বিক্ষোভের একটি ভিডিও প্রচার হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা হামাসকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এর ফলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, হামাসবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে। রয়টার্স ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। হামাসের বরিষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগের প্রতিবাদ করার অধিকার জনগণের রয়েছে। তবে তিনি পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সন্দেহজনক রাজনৈতিক এজেন্ডা তৈরির নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা কোথা থেকে এসেছে, পশ্চিম তীরে কী ঘটছে? কেন তারা সেখানে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে না বা এই আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে মানুষকে রাস্তায় নামতে দেয় না?’
প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ আন্দোলন হামাসকে গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি জনগণের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানানোর কয়েক ঘণ্টা পরেই গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উত্তেজনার প্রতিফলন ঘটল। ফাতাহ অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) নেতৃত্ব দেয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ২০০৭ সাল থেকে গাজায় হামাস এককভাবে শাসন করে আসছে। ওই বছর নির্বাচনে ফাতাহকে হারিয়ে তারা এককভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেখানে ফাতাহর রাজনীতিও অনেকটা শেষ হয়ে যায়।
গাজায় ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পর হামাসের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়তে থাকে। রাজপথ ও অনলাইনে সেই সমালোচনা চলছে। তবে এখনো গাজায় হামাসের পক্ষে প্রচুর সমর্থন রয়েছে। অবশ্য তাদের জনসমর্থন কতটা কমেছে, সেটা নিখুঁতভাবে জানার সুযোগ নেই। ইসরায়েলের নৃশংস হামলা শুরুর আগে হামাসের বিরোধী একটা পক্ষ ছিল। তবে প্রতিহিংসার ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতেন না। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ১৪৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৪ জন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিখোঁজ। নিখোঁজদের মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মিডিয়া অফিস।।

