এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২৬ মার্চ : ‘স্তন টেপা বা পাজামার দড়ি খোলা ধর্ষণের চেষ্টা নয়’- শুনানির সময় এলাহাবাদ হাইকোর্টের মন্তব্যকে অসংবেদনশীল এবং ঘৃণ্য বলে অভিহিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এর সাথে সাথে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করে এর উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ বিষয়টি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আমলে নিয়ে আজ বুধবার (২৬ মার্চ) শুনানি করেন। বিচারপতি বিআর গাভাই এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ হাইকোর্টের সাথে তীব্র দ্বিমত প্রকাশ করেছে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ তার আদেশে বলেছে, “আমরা এটা দেখে ব্যথিত যে (এলাহাবাদ হাইকোর্টের) বিতর্কিত আদেশে করা কিছু মন্তব্য রায় লেখা বিচারকের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সংবেদনশীলতার অভাবকে প্রতিফলিত করে।”
বেঞ্চ বলেছে যে রায়টি হঠাৎ করে দেওয়া হয়নি বরং প্রায় চার মাস ধরে সংরক্ষিত রাখার পর দেওয়া হয়েছে । এর অর্থ হল বিচারক যথাযথ বিবেচনা এবং চিন্তাভাবনার পরে রায় দিয়েছেন। বেঞ্চ বলেছে যে এই মন্তব্যগুলি আইনের নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং একটি অসংবেদনশীল এবং অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। তাই মন্তব্য নিষিদ্ধ করা জরুরি।
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ভারত ইউনিয়ন, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পাশাপাশি এলাহাবাদ হাইকোর্টের পক্ষগুলিকে নোটিশ জারি করেছে। একই সময়ে, ভারতের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও উপস্থিত হয়ে এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেন এবং এটিকে হতবাক করে দেওয়ার মত বলে অভিহিত করেন।
আসলে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি চিঠি লিখেছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট শোভা গুপ্তা। সর্বোচ্চ আদালত এটি গুরুত্ব সহকারে নেয় । এর আগে, বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী এবং প্রসন্ন বি. ভারালের বেঞ্চ এই বিষয়ে দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। আসলে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অঞ্জলি প্যাটেল হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে একটি আবেদন দাখিল করেছিলেন। এছাড়াও, হাইকোর্টের বিচারকদের অনুপযুক্ত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, বিচারকদের জন্যও নির্দেশিকা জারি করার দাবি জানানো হয়েছে।
২৪শে মার্চ, মামলার পক্ষে উপস্থিত আইনজীবী বিচারপতি বেলা এম. ত্রিবেদী এবং বিচারপতি পিবি ভারালের ডিভিশন বেঞ্চের সামনে তার যুক্তি শুরু করেন এবং বলেন,”কন্যাদের শিক্ষিত করুন, কন্যাদের বাঁচান”। এর পরপরই, বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী আইনজীবীকে আরও কিছু বলতে বাধা দেন। এর সাথে তিনি বলেন যে আদালতে ‘বক্তৃতা’ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এরপর বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী আবেদনটি খারিজ করে দেন।
উল্লেখ্য,গত ১৪ মার্চ কাসগঞ্জে এক নাবালিকা মেয়ের উপর যৌন নির্যাতনের মামলার শুনানি চলাকালীন এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রের একক বেঞ্চ এই বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। বিচারপতি মিশ্র বলেছিলেন যে,’কোনও মেয়ের স্তন ধরে টেপা, তার পায়জামার দড়ি খুলে ফেলা এবং কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়া… ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার অপরাধের আওতায় পড়ে না।’
বিচারপতি মিশ্র তার রায়ে এর পেছনের কারণ উল্লেখ করেছিলেন যে, অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড অপরাধ সংঘটনের প্রস্তুতির বাইরেও ছিল তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত বলেছিল যে ধর্ষণের চেষ্টা এবং অপরাধের প্রস্তুতির মধ্যে পার্থক্য সঠিকভাবে বোঝা উচিত। এর সাথে, আদালত ট্রায়াল কোর্ট কর্তৃক জারি করা সমন আদেশ সংশোধন করার নির্দেশও দিয়েছিল। এদিকে এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। এর পর, সুপ্রিম কোর্টের একটি নতুন বেঞ্চ একটি চিঠির ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনা করে।
এলাহবাদ হাইকোর্টের মামলাটি ১১ বছর বয়সী একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কিত। ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর, অভিযুক্ত পবন, আকাশ এবং অশোক তাকে কালভার্টের নীচে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় যৌন নির্যাতন করে। অভিযুক্তদের একজন মেয়েটির স্তন চেপে ধরেছিল। একই সময়ে, দ্বিতীয় অভিযুক্ত ভুক্তভোগী মেয়েটির পায়জামার দড়ি খুলে ফেলে। মেয়েটি চিৎকার শুরু করলে, পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজন সেখানে ছুটে আসে । এর পর অভিযুক্তরা চম্পট দেয় । পরে পকসো আইনের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। নিম্ন আদালত এই বিষয়ে সমন জারি করেছে। এর পর অভিযুক্ত পক্ষ এর বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। এখানে তাদের আইনজীবী যুক্তি দিয়েছিলেন যে তার মক্কেলরা ধর্ষণ করেননি।।