ভিয়েতনামের মাইলাই গ্রামে মার্কিন সেনাদের একদিনে ৫০৪ জনকে হত্যার ইতিহাসকেও হার মানিয়েছিল হিন্দু অধ্যুষিত ঝালকাঠির গণহত্যা। ঝালকাঠির ভয়াবহ গণহত্যার খবর উঠে এসেছিল ১৯৭১ সালে ৯ নম্বর সেক্টর থেকে প্রকাশিত ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ পত্রিকায়। নুরুল আলম সম্পাদিত পত্রিকায় শিরোনাম ছিল ‘ঝালকাঠি না মাইলাই’।
ভিয়েতনামের মাইলাই গ্রামে মার্কিন সেনারা ১৯৬৮ সালের ১৬ মার্চ একদিনে যে ৫০৪ জন নারী-পুরুষকে হত্যা করেছিল তাকেও হার মানিয়েছিল তখনকার হিন্দু অধ্যুষিত ঝালকাঠির গণহত্যা। ২৭ এপ্রিল ঝালকাঠি শহরে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে অগাস্ট মাস পর্যন্ত ঝালকাঠি ও নলছিটির বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা চালানো হয়। সারিবদ্ধভাবে পেছনে হাত বেঁধে নদীর পাড়ে একদিনে ১৯৫ জন সনাতন ধর্মাবলম্বীকে হত্যা কিংবা মসজিদ থেকে বের করে এনে ৯ জনসহ ৩ দিনে ২২ জনকে হত্যা অথবা পার্শ্ববর্তী সব হিন্দু গ্রামের মাঝখানে মুসলিম অধ্যুষিত একমাত্র গ্রাম বেশাইনখানে ২৫ জন মুসলমানসহ ৩০ জনকে হত্যা- এই ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায়। তারা গণহত্যার সময় রক্তের নেশায় বাঙালি নিধনকেই মাথায় রাখত।
১৯৬ জনকে হত্যা, একমাত্র বেঁচে ফেরেন অমল :
ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া থেকে ১২৮ জন ও সাচিলাপুরের আশপাশ থেকে ৬৮ জনসহ মোট ১৯৬ জনকে একাত্তরের ৩০ মে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর পাড়ে (বর্তমান পৌর খেয়াঘাট) হত্যা করা হয়। গণহত্যার স্বীকার ১৯৬ জনের মধ্যে ১৯৫ জনই ছিল হিন্দু। একজন ছিলেন মুসলিম- আনসার আলী খান। তবে ১৯৬ জনের বাইরে শুধু ১৯৭তম ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে এসেছেন বরিশালের অমল কংশবণিক। তিনি এই গণহত্যার জীবন্ত সাক্ষী।
অমল কংশবণিক বলেন, আমাদের ১৯৭ জনকে ঝালকাঠি থানায় এক রাত রাখা হয়। ভোর থেকে চার-চারজন করে দীর্ঘ সারিতে সুগন্ধা নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। চারজন করে গুলি করে মারা হয়। শেষের দিকে এক পুলিশের দয়া হয় ১০ বছরের আমাকে দেখে। রশি খুলে দিয়ে তিনি আমাকে পালাতে বলেন। আমি নদীর সাঁতরে কোনোমতে ওই পারে উঠলে মাঝিরা আমাকে বাঁচায়।”
ঘটনার দিনটি যে ৩০ মে, এটি জানান ঝালকাঠির স্থানীয় চাঁদ মোহন কংশবণিক। তার দাদা সতীশ চন্দ্র কংশবণিক, ভাইয়ের দুই ছেলে সুধীর চন্দ্র কংশবণিক ও সুনীল চন্দ্র কংশবণিকসহ এই বংশের আরো অনেককে হত্যা করা হয়। যার মধ্যে আছেন অনিল কংশবণিক, সুবল চন্দ্র কংশবণিক ও রাখাল চন্দ্র কংশবণিক। এ ছাড়া মনোরঞ্জন সাহা, গোপাল সাহা, রামপ্রসাদ চক্রবর্তী, নিরুপদী চক্রবর্তী, গৌরঙ্গ দাস (ধোপা), পরান সাহা, যামিনী সাহা, গুপিনাথ সাহা ও মদন সাহাসহ অনেককে হত্যা করা হয় সেদিন।
অন্যদিকে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের পশ্চিম দিকে বেশাইনখান গ্রাম আর পূর্ব দিকের একটি গ্রাম রমানাথপুর। দুটি স্থানে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদাররা গণহত্যা চালিয়েছে। বিশেষত রমানাথপুরের শরীফবাড়ী জামে মসজিদ থেকে মুসল্লিদের বের করে এনে হাত বেঁধে কোলায় (ফসলের মাঠ) দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।রমানাথপুরের শরীফবাড়ী জামে মসজিদ থেকে মুসল্লিদের বের করে এনে হাত বেঁধে কোলায় (ফসলের মাঠ) দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
স্থানীয় শহীদুল ইসলাম জানান, ওইদিন বারো চান্দের খুৎবা বইয়ের লেখক আলহাজ মাওলানা শরীফ আব্দুল কাদির সাহেব উপস্থিত থেকে পাকিস্তানি বাহিনীকে বাধা দিলেও তারা মসজিদ থেকে নামিয়ে মানুষজনকে হত্যা করে। অধিকাংশের মতে, ২১ মে মসজিদ থেকে বের করে নয়জনকে হত্যা করা হয়। এর আগে পাশের শশাঙ্ক হাওলাদার বাড়ির কাছারিঘর থেকে চারজনসহ আশপাশের আটজন এবং ২৩ মে রমানাথপুরের বিভিন্ন বাড়ি থেকে অজ্ঞাতসহ সাত থেকে আটজনকে হত্যা করা হয়।
ওই এলাকার স্থানীয় মোসলেম (মধু মাঝি) নিজের বাড়ির পেছনের একটি স্থানে দাঁড়িয়ে জানান, এইখানে বাবা ও ভাইকে কবর দিয়েছেন। প্রথমে ভাই লতিফ মাঝি ও খুড়তুতো ভাই হাশেম মাঝিকে মসজিদ থেকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। এরপর বাড়ির সামনেই বাবা আহমেদ মাঝি ও কাকা আব্দুল মাঝিকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, “এই হত্যা আমি নিজ চোখে দেখেছি। ওইদিনই পাশের গ্রামে আমার শ্বশুর এনাজুদ্দিন মিয়া, তার ছেলে নুরুল হক মিয়া ও ভাই আব্দুল হাকিম মিয়াকে গুলি করে মারা হয়। চোখের সামনে গুলি দিয়ে মেরেছে আমার ভাই, বাবা, কাকা ও খুড়তুতো ভাইকে। আমার ভাইয়ের হাতের আঙ্গুল উড়ে গেছে ভাইয়ের বুকটা ঝাঁঝরা করে ফেলছে। ভাইয়ের লাশ রক্তে চেনা যাচ্ছিল না। একটা টিনে করে লাশ এনে পুরনো একটি চাঁদরে মুড়িয়ে লাশ দাফন করেছি।”
স্থানীয় আমিনুল ইসলাম বলেন, “সেদিন মসজিদ থেকে নয়জনকে ধরে এনে আমাদের হাওলাদার বাড়ির দরজায় বেঁধে রেখেছিল পাকিস্তানি সেনারা। তখন মাঠের একটি উঁচু জায়গায় রাখে তাদেরকে। কতক্ষণ পর শুনি ফায়ার আর ফায়ার। আটজন ওখানেই মারা যায় এবং একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। বাড়ির দরজায় একজনকে ও পুকুরে একজনকে মৃত অবস্থায় দেখেছি। ওই পথেই আসছিল রমানাথপুরের স্থানীয় পোস্টমাস্টার শাহজাহান হাওলাদার। তাকে দেখামাত্রই হানাদাররা গুলি করলে সে পুকুরে পড়ে মারা যায়।”
পোস্টমাস্টার আর দুধের শিশুর মৃত্যু :
পোস্টমাস্টার শাহজাহান হাওলাদারের স্ত্রী জমিলা বেগম বলেন, “আমার স্বামীকে গুলি করে মারার দুদিন আগে ১৯ মে শুক্রবার একটি ছেলে হয়েছিল। ২১ মে রোববার তাকে মারার পাঁচ দিন পর ২৬ মে শুক্রবার সাত দিনের ছেলেটাও মারা যায়। ওর আব্বা নাম রেখেছিল এনায়েত।আড়াই বছরের আরেক ছেলেকে নিয়ে ৫৪ বছর আগে বিধবার জীবন বেছে নিয়েছিলেন তিনি। নামমাত্র কবরের চিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে যুদ্ধকালীন স্বামীর প্রশিক্ষণ নোটের কাগজ হাতে বলেন, “১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের পাঠানো দুই হাজার টাকার একটি চেক পেয়েছিলাম, এর বাইরে এখন পর্যন্ত স্বামীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বা কবরটাও বাঁধিয়ে দেয়নি কোনো সরকার।”
শরীফ বাড়ি মসজিদ থেকে ধরে আনা জেন্নাত আলী মৃধাকে অন্যদের সঙ্গে যখন হত্যা করা হয় তার স্ত্রী সকিনা বেগমের গর্ভে তখন একটি ছেলে আর তিন বছর ও দেড় বছরের দুটি মেয়ে ছিল। গর্ভের সেই ছেলে ৫৪ বছরের আব্দুল গনি এখন দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। বৃদ্ধা সকিনা বেগম আহাজারি করে বলেন, “এতো বছর যেহেতু অসহায়ভাবে কাটাইছি এখন আর সরকারের কাছে কিছু চাই না, কিন্তু যে এই দেশের জন্য মরলো তার কবরটা করে দিক।”
শরিফবাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে শহীদ আব্দুস সালামকে। হেঁটে পাঁচ মিনিটের পথ এগিয়ে আরেকটি গোরস্থানে শহীদ আবুল হোসেন মাঝির কবর পাওয়া যায়।
রমানাথপুর শরীফবাড়ি মসজিদের ঘটনায় ওইদিন একমাত্র বেঁচে যান পাশের শশাঙ্ক (আলীপুর) গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক খান।
তার ছেলে মিজানুর রহমান খান জানান, “একমাত্র আমার বাবা বেঁচে গেলেও আমার আপন বড় কাকা আবদুল জব্বার খান শহীদ হন। আব্বাও ২০১০ সালে মারা যান। ওই দিন মোট ১৭ জনকে গুলি দেওয়া হয়েছিল।”
শশাঙ্ক গ্রামের হাওলাদার বাড়ির নিজ কাছারি ঘরে একাত্তরের ২১ মে হানাদাররা গুলি করে মারে মেছেল উদ্দিন হাওলাদার, চান্দে আলী মোল্লা, শাহাজউদ্দিন হাওলাদার ও পাশের বাড়ির আবেদ আলি হাওলাদারকে। গোলাগুলি দেখে শাহাজ উদ্দিনের ছেলে সোবহান হাওলাদার দৌঁড় দিলে বাড়ির বেড়ের (নালা) পাশে গুলি করে হত্যা করা হয়। মেছেল উদ্দিন হাওলাদার শহীদ হওয়ার দুদিন পরেই পাশের রমানাথপুরে মসজিদ থেকে নিয়ে হত্যা করা হয় তার ছেলে আবদুল মন্নান হাওলাদারকে (বি.কম)।আব্দুর রব হাওলাদার জানান, তার ভাই সে সময় চামটা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পারিবারিক কবরস্থানে বাবা ও সন্তানের কবরের নামফলক একসঙ্গে। লেখা আছে, মৃত্যু তারিখ ২১ ও ২৩ মে।
আর এই তারিখটি থেকে বোঝা যায়, শরীফবাড়ি মসজিদের ঘটনাটি ২৩ মের। কিন্তু অধিকাংশের মতে ২১ মে মসজিদ থেকে বের করে নয়জনকে হত্যা করা হয়।
এর আগে হাওলাদার বাড়ির কাছারিঘর থেকে চারজনসহ আটজন এবং ২৩ মে রমানাথপুরের বিভিন্ন বাড়ি থেকে অজ্ঞাতসহ সাত থেকে আটজনকে হত্যা করা হয়। কাছারিঘরে হত্যার পরে পাশের বাড়ির আব্দুল কাদের এবং দৌঁড়ে যাওয়া নবম শ্রেণির ছাত্র দেলোয়ার হোসেনকে মারা হয়। শহীদ আবেদ আলীর ছেলে আবদুল ওয়াহেদ দেখান বাড়ির একই কবরস্থানে তার বাবা শহীদ আবেদ আলী ও শহীদ আব্দুল কাদেরের কবর। কাছারিঘর ও বাইরের কয়েকটি হত্যার সাক্ষী শহীদ শাহাজ উদ্দিনের ভাইয়ের মেয়ে পারুল বেগম চাচা শাহাজ উদ্দিন ও খুড়তুতো ভাই শহীদ সোবহানের কবর শশাঙ্ক এলাকার একটি গোরস্থানে চিহ্ন দিয়ে দেখান।
১৯৭১ সালের ২১ জুন ভোর হওয়ার আগেই ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের বেশাইনখানে পাক হানাদাররা আক্রমণ চালিয়ে অন্তত ৩০ জনকে হত্যা করে। এ তথ্য স্থানীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে খোদাই করা আছে। স্থানীয় গোলাম মোস্তফা বলেন, “ঘটনার দুদিন আগে আমিসহ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায় হানাদাররা। আমাদের কাছে শশাঙ্ক মানিকসহ কয়েকজনের সন্ধান চায় হানাদাররা। পরে আমাদের ছেড়ে দেয়। তখন বুঝিনি দুদিন পরেই ভোররাতে তারা ভয়াবহ আক্রমণ করবে। সেদিন আমার আপন বড়ভাই মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানকেও হত্যা করা হয়। আমার ভাই তখন ঢাকার নয়াপল্টনের একটি কলেজের ছাত্র।”
নামফলকে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, শহীদরা হলেন-এ বি এম হাতেম আলী মোল্লার দুই ছেলে এ কে এম রেজাউল করিম মানিক, মোহাম্মদ সাইদুল করিম রতন; নূর মোহাম্মদ মোল্লার দুই ছেলে মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন, ফয়েজ উদ্দিন মোল্লার দুই ছেলে মো. জহুরুল হক মোল্লা, আব্দুল মালেক মোল্লা; ছবদার আলী মোল্লার ছেলে মোবাখখের আলী মোল্লা ও তার ছেলে মোহাম্মদ খলিলুর রহমান; আমজাদ হোসেন মোল্লার ছেলে এ কে এম সালাউদ্দিন মজনু, আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে আব্দুল মালেক মোল্লা, আজাহার আলী মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, আলিমুদ্দিন মোল্লার ছেলে আব্দুর রহিম মোল্লা, বুরজুগ আলী মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ ওয়াহাব আলী মোল্লা, হেলাল উদ্দিন মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ রাশেদ আলী মোল্লা, এমরান উদ্দিন মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ ফজলুল হক মোল্লা, মোজাহার আলী মোল্লার ছেলে আব্দুল মজিদ মোল্লা, আব্দুল গফুর মোল্লার ছেলে মো. ইসমাইল মোল্লা, আব্দুল মোল্লার ছেলে আব্দুল করিম মোল্লা, আফতাব আলী মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা, তোফাজ্জল হাওলাদারের ছেলে আব্দুল মান্নান হাওলাদার, গঞ্জে আলী হাওলাদারের ছেলে মোহাম্মদ জলিল উদ্দিন হাওলাদার, আজমত আলী হাওলাদারের ছেলে মোহাম্মদ মোক্তার আলী হাওলাদার, আজাহার সরদারের (গোবিন্দধবল) ছেলে আব্দুস সাত্তার সরদার রয়েছেন।
এ ছাড়া আবু বকর মাস্টার, শ্রীদেব কুমারসহ দুই অজ্ঞাত শহীদ রয়েছেন। সিংহপুরের পার্বতী চরণ হালদারের ছেলে শ্রী মহেন্দ্রনাথ হালদার, খাজুরার বসন্তকুমার বালার ছেলে শ্রী জুরানা বালা ও মিরাকাঠির শরৎ হালদারের ছেলে শ্রী রাজেন হালদার রয়েছেন ওই শহীদদের তালিকায়। এর মধ্যে সরজমিন ঘুরে, ওই এলাকার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে সরকারিভাবে বাঁধাই করা পাঁচ শহীদের কবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে এ কে এম রেজাউল করিম মানিক, এ কে এম সালাউদ্দিন মজনু, মো. হাবিবুর রহমান, আ. রহিম মোল্লা ও মো. ফজলুল হক মোল্লার কবর রয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ঘাঁটি এলাকা পেয়ারাবাগান থেকে বিপ্লবী কমরেড সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টি চলে যাওয়ার পরেই বেশাইনখানে এই গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পূর্ববাংলার জাতীয় মুক্তিবাহিনীর পলিটিক্যাল কমিশার কমরেড খুরশীদ আলম খসরু।
অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন কবির বলেন, “আমার আপন মামা আনসার আলী খানের লাশ পাওয়া যায়নি। তাকে ঝালকাঠি বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি করে শহীদ করা হয়। সাংবাদিক ফজলুল বারি পায়ে হেঁটে-হেঁটে ৬৪টি জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের অংশ হিসেবে যখন ঝালকাঠি আসেন তিনি সাত দিন আমার সঙ্গেই ছিলেন। তখন থেকে এই কীর্ত্তিপাশার রমানাথপুর, বেশাইনখানসহ অনৈক বধ্যভূমিতে পায়ে হেঁটে বহুবার ঘুরেছি। এখনও মুক্তিযুদ্ধ রক্তের মধ্যে বাজে বলে ঘুরেঘুরে দেখি কোথায় শহীদের কবর, কোথায় তাদের স্মৃতি?”
একাত্তরে ঝালকাঠি থানার সেকেন্ড অফিসার এবং বিজয়ের পর একই থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অবসরপ্রাপ্ত এআইজি শফিউল ইসলাম জানান, ১৯৭২ সালে তার তত্ত্বাবধানে ঝালকাঠি শহরের সুগন্ধা নদীর পারের একটি গণকবর থেকে প্রায় ২০০ মাথার খুলি তোলা হয়।।