শ্যামসুন্দর ঘোষ,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৫ মার্চ : আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হল পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথ মেলা । প্রথম দিনেই ভগবান গোপীনাথের দর্শনে আসেন রাজ্য বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ । দুপুর নাগাদ প্রথমে তিনি ওঠেন ঘনিষ্ঠ নেতা বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণ ঘোষের বাড়িতে । কিছু পরে সেখান থেকে বের হয়ে কৃষ্ণবাবু ও অনান্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে আসেন গোপীনাথ মন্দিরে । দেবতাকে পুজো দেন দিলীপবাবু । মেলায় দলীয় শিবিরে কিছুক্ষণ বসে কর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলেন । আর ফেরার পথে লোহার বঁটি,হাতা,খুন্তি,শাঁড়াশি, দা, কুড়ুল প্রভৃতি সামগ্রীর একটা দোকান চোখে পড়তেই দাঁড়িয়ে পড়েন দিলীপ ঘোষ । তারপর দোকানদারের কাছে চেয়ে নেন একটা দা । হাতবুলিয়ে অস্ত্রটির ধার পরীক্ষা করে তার মূল্য চুকিয়ে ফের কৃষ্ণ ঘোষের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি ।
কিন্তু গোপীনাথ মেলায় বিভিন্ন সামগ্রীর অসংখ্য দোকান থাকতে ধারাল দা-এর দিকে নজর কেন ? কি করবেন দা-টি নিয়ে ? যদিও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলতে চাননি দিলীপবাবু । শুধু বলেন, ‘দা এর অনেক কাজ আছে । এক দা-এ অনেক কিছু কাজ হয়ে যাবে।’ কিন্তু কি কাজ তিনি আর খোলসা করেননি । কাটোয়া থেকে সোজা তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের ঠেকুয়া বাজারে মহাকুম্ভ পুণ্যার্থী সম্মেলনে যোগ দিতে চলে যান । এদিকে দিলীপবাবুর দা কেনা নিয়ে জোর চর্চা চলছে এলাকায় ৷ কেউ কেউ বলছেন, হয়তো বাড়ির ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার জন্য অগ্রদ্বীপের গোপীনাথ মেলায় তিনি দা কিনেছেন । কেউ কেউ মনে করছেন আসন্ন রামনবমীর শোভাযাত্রায় রীতি অনুযায়ী ওই দা দেখা যেতে পারে দিলীপ ঘোষের হাতে ।
প্রসঙ্গত,প্রাচীন জনপদ কাটোয়া থানার অগ্রদ্বীপ এলাকাটি এক সময়ে বৈষ্ণবদের সাধনস্থল ছিল । কার্যত তিন দিক দিয়ে বেষ্টিত করে রেখেছে ভাগিরথী নদী । গাছগাছালিতে ভরা শান্ত নির্জন এই পরিবেশে কৃষ্ণ সাধনায় মগ্ন থাকতেন সাধকরা । জনশ্রুতি আছে মহাপ্রভূ নীলাচলে যাত্রার সময় অগ্রদ্বীপে এসে বিশ্রাম করেছিলেন । গোবিন্দ ঘোষ নামে এক শিষ্যকে তিনি সেখানেই থেকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে অনান্য পার্ষদদের নিয়ে নীলাচলের উদ্দেশ্যে রওনা হন মহাপ্রভূ । পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে ভাগিরথীতে ভেসে আসা গোপীনাথদেবের মূর্তি উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেন সাধক গোবিন্দ ঘোষ । অকালে তার স্ত্রী ও শিশুসন্তান মারা যাওয়ার পর আরাধ্য গোপীনাথকেই নিজের সন্তান রুপে দেখতেন তিনি ৷ গোপীনাথ মন্দিরের পাশেই গোবিন্দ ঘোষের সমাধিস্থল। জনশ্রুতি আছে যে জীবদ্দশাতেই ভক্ত গোবিন্দকে স্বয়ং ভগবান কথা দিয়েছিলেন তার মৃত্যুর পর তিনি স্বয়ং যাবতীয় পারলৌকিক কাজ করবেন। সেই থেকে প্রতিবছর চৈত্র একাদশী তিথিতে গোবিন্দ ঘোষের প্রয়ানদিবসে গোপীনাথকে কাঁচা পড়ানো হয়। তারপর গোবিন্দ ঘোষের সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে এসে পিন্ডদান সহ যাবতীয় পারলৌকিক কাজকর্ম করানো হয় । গোবিন্দ ঘোষের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ঘিরেই প্রতিবছর মেলা বসে অগ্রদ্বীপে। এই মেলা চলে তিন চারদিন ধরে। লক্ষাধিক পুন্যার্থীর সমাগম হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি । কাতারে কাতারে পূণ্যার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন অগ্রদ্বীপে ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথ মেলায় ।।