এইদিন ওয়েবডেস্ক,বেলুচিস্তান,১২ মার্চ : স্বাধীনতাকামী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ৩০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করার দাবি করেছে। মঙ্গলবার(১১ মার্চ) বিএলএ জাফর এক্সপ্রেসকে হাইজ্যাক করে, যেখানে প্রায় ৫০০ জন যাত্রী পেশোয়ারে যাচ্ছিল। বালুচ বিদ্রোহীরা এই ২১৪ জনকে পনবন্দি করে। এই সময়,তারা প্রথমে ৬ জন সেনা সদস্যকে হত্যা করার দাবি করেন। সন্ধ্যায়, বিএলএ একটি বিবৃতি জারি করে বলে যে তারা ৩০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি গণমাধ্যমে ১৩ জন বিএলএ বিদ্রোহীর নিহত হওয়ার খবর রয়েছে। এই স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি পাকিস্তান সরকারকে বালুচ রাজনৈতিক বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার জন্য ৪৮ ঘন্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ।
বিএলএ মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচের মতে,’সম্পূর্ণ নিরাপত্তা এবং যুদ্ধের নিয়ম’ মেনে সামরিক, আধাসামরিক, পুলিশ এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ ২১৪ জন পাকিস্তানীকে বিএলএ পনবন্দি করে রেখেছে। জিয়ান্দ বলেছেন যে যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না করা হয়, অথবা এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তান যদি কোনও সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে সমস্ত বন্দীকে হত্যা করা হবে। ট্রেনটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হবে । তিনি বলেন যে এই পরিণতির জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সম্পূর্ণরূপে দায়ী থাকবে। বিএলএ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পশ্চাদপসরণেরও দাবি করেছে। বিবৃতি অনুসারে, আট ঘন্টার তীব্র সংঘর্ষের পর, বিএলএ বিদ্রোহীরা পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে।
উল্লেখ্য,মঙ্গলবার বিএলএ বিদ্রোহীরা মাশকাফ, ধাদর, বোলানে একটি ‘পরিকল্পিত অভিযান’ চালিয়ে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস যাত্রীবাহী ট্রেনকে হাইজ্যাক করেছিল। পাকিস্তানি সংবাদপত্র ডন বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শহীদ রিন্দের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে,কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসে পেহরো কুনরি এবং গাদলারের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। রেলওয়ে কন্ট্রোলার মুহাম্মদ কাশিফ জানিয়েছেন, নয়টি কোচবিশিষ্ট ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রী ভ্রমণ করছিলেন। নিয়ন্ত্রক বললেন,৮ নম্বর টানেলের মধ্যে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ট্রেনটি থামিয়ে দেয়। যাত্রী এবং কর্মীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানি পুলিশ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছে যে ট্রেন চালক সহ কমপক্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছে যে পনবন্দিদের উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনী এবং হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন যে কোয়েটা থেকে ট্রেনটিতে ১০০ জনেরও বেশি সামরিক কর্মী ভ্রমণ করছিলেন।
কোয়েটার একজন স্থানীয় রেলওয়ে কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন যে কমপক্ষে ৬০ জন যাত্রীর একটি দল ট্রেন থেকে নেমে নিকটতম রেলস্টেশন পানিরে পৌঁছেছে। কোয়েটার রেলওয়ে কর্মকর্তারা আধাসামরিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, মহিলা ও শিশুরা ট্রেন থেকে নেমে সিবি শহরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল। তাদের কাছে মৃতের সঠিক সংখ্যা নেই। কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন যে এলাকায় কোনও ইন্টারনেট এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক কভারেজ নেই। সরকারি বিবৃতি অনুসারে, ঘটনাস্থলের কাছে অবস্থিত সিবি হাসপাতালে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। যদিও অ্যাম্বুলেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছে। তবে, রিন্ড বলেন যে পাথুরে ভূখণ্ডের কারণে, কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।।