এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ মার্চ : সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মন্দিরে হামলা এবং রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত জেলায় অশান্তির ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে ! কি সেই ঘটনা তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’মৌলবাদী শক্তিগুলো যে ভাষায় কথা বলছে, র্যাটিক্যাল গ্রুপ যে ভাষায় লিফলেট ছড়াচ্ছে, যে ভাষায় এসডিপিআই, সিমি, পিএফআইয়ের লোকেরা কথা বলছে, তাতে এ রাজ্যে যে কোন রাষ্ট্রবাদী লোক নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি ।’
প্রসঙ্গত,সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের একজন মৌলবী ইউটিউব চ্যানেল বঙ্গ টিভির রোজিনা রহমানকে ‘দেহ ব্যবসায়ী’ বলে মন্তব্য করেছিলেন । আরামবাগ টিভির প্রতিষ্ঠাতা শফিকুল রহমান জানিয়েছেন যে ওই মৌলবীর নাম কারী ইয়াসিন৷ একজন ইসলামিক বক্তা । নিজের চ্যানেলে মৌলবীর একটি মজলিসে দেওয়া বক্তব্য এবং গাড়িতে ভ্রমণের সময় ভিডিও রেকর্ডিং এ করা মন্তব্য নিজের চ্যানেলে শেয়ার করেছেন শফিকুল । মজলিসে ওই মৌলবী রোজিনাকে আক্রমণ করে বলেছিলেন,’বঙ্গ টিভি ঠোঁট পালিশ লাগিয়ে, মাথার চুল খুলে, ওই মেয়েটা ইন্টারভিউ লিচ্ছে ৷ ওদেরকে কেও চেনে না । গরু, গাধা এগুলো আমার কাছে ।’ অন্য ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে,’বঙ্গ টিভি, ওই চুল খোলা বেয়াদব মেয়েটা, বেহাড্ডা মেয়েটা, এদেরকে আমি দেহ ব্যবসায়ী ছাড়া ধরি না । এরা এত বড় মিথ্যাবাদী এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ায় ।’
একজন মহিলা ইউটিউবারকে এমন কদর্য ভাষায় আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী । সেই প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন,’যে ভাষায় ইউটিউবারদের আক্রমণ করা হচ্ছে, বঙ্গ টিভির রোজিনা বোন থেকে শফিকুল ভাই, কেউ ছাড় পাচ্ছেন না । খুব অ্যালার্মমিং, এই লড়াইটা কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে নয়, একদিকে রাষ্ট্রবাদী অন্যদিকে রাষ্ট্র বিরোধীদের লড়াই । যারা ভারতকে খন্ড খন্ড করতে চায় ৷ যারা ভারতকে বিভক্ত করতে চায় । যারা ভারতকে ভাঙতে চায় । সেই টুকরো টুকরো গ্যাং, যারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টার দেয় ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী’ । তাদের সঙ্গে ভারতীয়দের লড়াই ।’
আজ সোমবার দুপুরে বিধানসভা থেকে রাজভবন পর্যন্ত বিজেপি বিধায়কদের পদযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা । পদযাত্রাটি ছিল ‘রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মন্দিরে আক্রমণ ও হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ভাঙচুরের প্রতিবাদে’ । পদযাত্রা শুরুর আগে বিধানসভার গেটের সামনে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন । শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘বারুইপুরে মন্দির পোড়ানো হয়েছে, মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছে৷ বসিরহাটে করা হয়েছে । তমলুকের ময়না বিধানসভার শ্রীরামপুরে করা হয়েছে, আমাদের বিধায়ক অশোক দিন্দা সেখানে পরিদর্শন করেছেন৷ পাশাপাশি দুটো খারাপ ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে একটা মুর্শিদাবাদ জেলার নওদায়৷ সেখানে পাটকাবাড়ি বাজারে বেছে বেছে হিন্দু দোকান পোড়ানো ও ভাঙা হয়েছে । আর ভারত কাল জিতেছে, সেই আনন্দে উলুবেড়িয়ার একটি ক্লাব আতশবাজি ফাঠাচ্ছিল, সেখানেও তপশিলি পাড়া ও দলাইপাড়া আক্রমণ হয়েছে । সেখানকার আইসি আহত । ডিজিপপি যান সেখানে আইসিকে দেখতে । আমরা এর প্রতিবাদ করছি এবং মুখ্যমন্ত্রীকে বিধানসভায় এসে বিবৃতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি ।’
শুভেন্দু অধিকারীর মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন,’গোটা রাজ্যে কেন হিন্দু মন্দির হিন্দু দেবদেবী এবং দোকান আক্রান্ত হচ্ছে ? যদি কেউ কারোর আস্থায় আঘাত দেয় তাহলে তার জন্য আইন আছে। আর সেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা করুন । এই ধরনের আক্রমণ ওপারে বাংলাদেশে হচ্ছে এবং এপারে পশ্চিমবঙ্গতেও হচ্ছে । তার প্রতিবাদ আমরা করছি । বিধানসভায় যে কয়জন বিজেপি বিধায়ক আছেন তারা এনিয়ে অ্যাডজর্নমেন্ট মোশন আনছেন ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আমরা পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু এবং জনজাতিদের নিয়ে সরকার করব । বিজেপির তাকত কোন নেতার নয়, পশ্চিমবাংলার হিন্দু এবং জনজাতিদের তাকত । দিল্লির মতো এখান থেকেও তাড়াবো । আর দ্বিজেন্দ্র গুপ্তকে মার্শাল দিয়ে বের করেছিলেন যারা তাদের আজ যা অবস্থা হয়েছে, একই অবস্থা মমতা ব্যানার্জি আর বিমান ব্যানার্জির হবে ।’
বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জির ‘কীর্তিকলাপ, অগণতান্ত্রিক আচরণ, কণ্ঠরোধের চেষ্টা’র প্রতিবাদে উনিশে মার্চ বারুইপুরে বিজেপি বিধায়কররা হাতে কালো ব্যাচ লাগিয়ে রাস্তায় নামবে বলেও জানান শুভেন্দু অধিকারী । এদিন তৃণমূল নেতা মদন মিত্রর এটি মন্তব্য প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীকে প্রতিক্রিয়া দিতে বলা হলে তিনি বলেন,’আমি ওর কথায় কোনো উত্তর দেবো না । একটা মাতাল । আমি ভদ্র ঘরের ছেলে ।’।