এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৯ মার্চ : নবদ্বীপ থেকে বালুরঘাটগামী ‘বালুরঘাট এক্সপ্রেস’ ট্রেনে সফর করার সময় ফারাক্কার তোফাপুর গ্রামের বাসিন্দা মাফিকুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে শরীরের ছবি তোলার কারনে এক তরুনী সহযাত্রী তাকে কষিয়ে মুহুর্মুহু চড় কষিয়ে দেয় । সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি সাম্প্রদায়িক রূপ নেয় । পাশাপাশি শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস বৃদ্ধের পাশে দাঁড়ালে ঘটনাটি রাজনৈতিক রঙ নেয় । কারণ প্রথম থেকেই ওই তরুণীর পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি ৷ এদিকে মুর্শিদাবাদের ফারাক্কার জিম নওয়াজ নামে এক ব্যক্তি তরুনীর নাম ও ঠিকানা প্রকাশ্যে আনলে মেয়েটি চরম সমস্যায় পড়ে যান । এদিকে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তরুনী ও তার পরিবারকে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ফোনে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ । এমনকি এই হুমকির জন্য তিনি ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারছেন না বলে দাবি করা হচ্ছে । যদিও রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ফোনে তরুনীকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘আপনার কিছু হলে গোটা রাজ্যে আগুন জ্বলবে’ ।
তরুণীর সঙ্গে ফোনে কথপোকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিজেপির যুব নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি । সুকান্ত বাবু তরুণীকে জিজ্ঞেস করেন,’হ্যাঁ,কি সমস্যা হচ্ছে ? আপনি পরীক্ষা দিতে পারেননি না?’ উত্তরা তরুণী বলেন, ‘না, আমি আজ ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষা দিতে পারিনি। আর গাড়ি ভাড়া করেছে যাব তার নিরাপত্তা কে দেবে ?’ তরুণী বলেন, আমাকে তো ফারাক্কার উপর দিয়ে যেতে হবে । আমার নিরাপত্তা কে দেবে ? আমি আমাদের এলাকার পুলিশকে বিশ্বাস করতে পারছি না । যা অবস্থা হয়ে আছে, লোকে আমার উপর ক্ষেপে আছে,ভুল খবর প্রচারের জন্য ।’ তরুণী বলেন, ‘আমি ভাবছি সোমবার কলেজ যাব৷ কিন্তু তার জন্য যেন আমার ভালো নিরাপত্তা থাকে।’ তরুণী জানান যে শুধু তাকেই নয় তার গোটা পরিবারকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷
সুকান্ত মজুমদার তরুণীকে পরামর্শ দেন, আপনি একটা লিখিত দরখাস্ত করুন । আপনি জেলা পুলিশ সুপারকে একটা দরখাস্ত লিখুন যে আমি হুমকি মেসেজ পাচ্ছি । ভয় পাওয়ার কিছু নেই । আমরা বিষয়টা দেখছি । আপনার কিছু হলে পরে গোটা রাজ্যে আগুন জ্বলবে চিন্তা নাই । আমরা সেই ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীকে বলবো ।’
ভিডিওটি শেয়ার করে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, কয়েকদিন আগে নবদ্বীপ থেকে বালুরঘাটগামী ‘বালুরঘাট এক্সপ্রেস’ – এ এক হিন্দু বাঙালি ছাত্রীর সঙ্গে চূড়ান্ত অভব্যতার ঘটনা ঘটে। পাশে বসে থাকা এক ব্যক্তি তার অশ্লীল ছবি তোলার ঘটনা ঘটলে ওই ছাত্রী তীব্র প্রতিবাদ জানান। কিন্তু তারপর থেকেই স্থানীয়স্তরের দুষ্কৃতী এবং মৌলবাদীদের থেকে বিভিন্নভাবে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের। সামাজিক মাধ্যম থেকে সরাসরি টেলিফোনে একাধিক গুরুতর হুমকি পাওয়ার পর থেকেই প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কায় ভুগছেন ওই ছাত্রীর পরিবার। পাশাপাশি ওই ছাত্রী অভিযোগ জানান, হুমকির পর থেকেই আতঙ্কিত হয়ে তিনি একাধিকবার পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোনও রকম সহযোগিতাই করছে না প্রশাসন। প্রতিদিন হুমকির ঘটনায় যথেষ্ট উৎকণ্ঠের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে ওই পরিবারটিকে। আজ ওই আতঙ্কিত ছাত্রীটির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তার পাশে সর্বতোভাবে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছি। আগামী দিনে আমার এই ছোট্ট বোনটির উপর যদি কোনওরকম হামলার ঘটনা ঘটে, তার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী থাকবেন রাজ্যের তোষণসর্বস্ব, ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর পদলেহনকারী পুলিশ-প্রশাসন। বাংলাদেশের কায়দায় যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে প্রায়শই এই ধরনের চূড়ান্ত নিন্দনীয় ঘটনা ঘটছে, আমরা তার তীব্র ধিক্কার জানাই। আমরা বিশ্ব নারী দিবসে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি নারীকে অভয় দিতে চাই, আপনাদের পাশে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিটি কার্যকর্তা সবসময় রয়েছে। মহিলাদের উপর যেকোনও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে।’
রাজু সভাপতির একই ভিডিওটি শেয়ার করে তরুণজ্যোতি তিওয়ারি এক্স-এ লিখেছেন,’কয়েকদিন আগে নবদ্বীপ থেকে বালুরঘাটগামী ‘বালুরঘাট এক্সপ্রেস’-এ এক হিন্দু বাঙালি ছাত্রীর সঙ্গে চূড়ান্ত অভব্যতার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পর থেকেই তিনি ও তাঁর পরিবার এক শ্রেণির দুষ্কৃতী এবং মৌলবাদীদের হুমকির মুখে পড়েছেন। সামাজিক মাধ্যম থেকে সরাসরি টেলিফোনে একাধিক গুরুতর হুমকি পাওয়ায় বর্তমানে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন ওই ছাত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এই পরিস্থিতিতে, আজ ভারত সরকারের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন ও শিক্ষা মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী, রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ড. সুকান্ত মজুমদার মহাশয় আতঙ্কিত ছাত্রীটির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তাঁকে সর্বতোভাবে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এদিকে, ওই ছাত্রী অভিযোগ করেছেন যে, হুমকির শিকার হওয়ার পর একাধিকবার পুলিশ ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোনও সহযোগিতা পাননি। প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা তাঁকে আরও অসহায়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।’।