এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৭ মার্চ : হিন্দু ধর্মে শ্রীরামভক্ত ভগবান বজরংবলী শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হন । আর বজরংবলীর জীবিত স্বরূপ হিসাবে মনে করা হয় হনুমানকে । সেই কারনে হিন্দু সমাজে হনুমানকে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয় । সেই শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আজ শুক্রবার কাজে বেড়িয়েও পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম একটা হনুমানকে দেখে থমকে গিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার চণ্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দা অদ্বৈত সাট ও পার্শ্ববর্তী বামুনাড়া গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক মাজি ৷ কয়েক ঘন্টা ধরে তারা হনুমানটিকে সাথে নিয়ে ছুটে বেড়ালেন । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা হনুমানটিকে বাঁচাতে পারেননি । উপরন্তু খেটেখাওয়া সামান্য রংমিস্ত্রি দুই যুবকের আজ কাজেও যাওয়া হয়নি । তবে তাদের এই প্রকার মানবিকতায় মুগ্ধ এলাকার বাসিন্দারা ।
জানা গেছে,বর্ধমান শহরের একটা নবনির্মিত বাড়িতে রঙ করার কাজে চুক্তি করেছেন অদ্বৈত ও কার্তিক । কয়েকদিন ধরে তারা সকালে বাইকে চড়ে ভাতার রেলস্টেশনে এসে ট্রেনে চড়ে বর্ধমান যাচ্ছেন এবং সন্ধ্যায় ট্রেনে চড়ে ফিরে আসেন । অনান্য দিনের মত আজ সকালেও দুই বন্ধু বাইকে চড়ে ভাতার বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন ৷ কিন্তু চণ্ডীপুর গ্রাম থেকে বের হওয়ার সময় তারা দেখতে পান রাস্তার ধারে একটি খামারে শুয়ে কাতরাচ্ছে একটি পুর্নবয়স্ক হনুমান। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে বুঝতে পেরে বাইক থামিয়ে তারা হনুমানটিকে কোলে তুলে সোজা ভাতার বাজারে রাজ্য প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে ছোটেন । প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ তারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে যান৷ কিন্তু তখনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি খোলেনি৷ তাই বাধ্য হয়ে গেটের সামনে হনুমানটিকে নিয়ে বসে থাকেন এবং তার শুশ্রূষা করতে থাকেন । ইতিমধ্যে খবর পেয়ে চলে আসেন তাদের বন্ধু কাশীনাথ মাজিও । ইতিমধ্যে খবর পেয়ে তড়িঘড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে আসেন চিকিৎসক অমল কুমার দে৷ তিনি ও তিন যুবক মিলে ওই অবলা পশুটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন । কিন্তু ব্যর্থ হন ।
তবে এখানেই শেষ নয় । খবর দেওয়া হয়েছিল বনবিভাগেও । প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ বনবিভাগের কর্মীরা বর্ধমান থেকে ভাতারে আসেন । ততক্ষণ পর্যন্ত হনুমানের দেহটি আগলে রাখেন তিন বন্ধু । মৃতদেহটি বনবিভাগের কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়ার সময় কেঁদে ফেলেন অদ্বৈত এবং কার্তিক । চিকিৎসক অমল কুমার দে জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে পথ দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়েছিল হনুমানটি। আর মাথার অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে ।।