হনুমান চালিশার রচনা কোনও কাল্পনিক ঘটনা নয়, বরং একটি সত্য কাহিনী, বেশিরভাগ মানুষ এই কাহিনীর সাথে পরিচিত নয় । প্রায় সকল সনাতনীই পবনপুত্র ভগবান হনুমানের পূজা করেন এবং হনুমান চালিশাও পাঠ করেন, কিন্তু খুব কম লোকই জানেন যে এটি কোথায় এবং কীভাবে রচিত হয়েছিল। জানুন সেই কাহিনী…
সালটা ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ, আকবর এবং তুলসীদাসের সময়কাল । একবার গোস্বামী তুলসীদাস মথুরা যাচ্ছিলেন, রাত নামার আগেই তিনি আগ্রায় শিবির স্থাপন করেছিলেন, লোকেরা জানতে পারে যে তুলসীদাসজী আগ্রায় এসেছেন। এই কথা শুনে তাকে দেখার জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় । সম্রাট আকবর যখন এই কথা জানতে পারলেন, তখন তিনি বীরবলকে জিজ্ঞাসা করলেন যে এই তুলসীদাসজি কে ? তখন বীরবল বললেন যে তিনিই শ্রী রামচরিতমানস রচনা করেছেন, ইনি হলেন রামভক্ত তুলসীদাস জি। আমিও তাকে দর্শনের পর এখানে এসেছি। আকবরও তাকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে বললেন যে আমিও তাকে দেখতে চাই। কিন্তু তিনি নিজে না গিয়ে তুলসীদাসকে শিকল বেঁধে লালকেল্লায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেন।
তুলসীদাসকে যখন শিকল বেঁধে লালকেল্লায় আনা হয়, তখন আকবর বলেন,’তুমি একজন অলৌকিক ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছে। আমাকে কিছু অলৌকিক ঘটনা দেখাও।’ তুলসীদাসজি বললেন, আমি কেবল ভগবান শ্রী রামের একজন ভক্ত, আমি কোন জাদুকর নই যে তোমাকে কোন অলৌকিক কাজ দেখাতে পারব। এই কথা শুনে আকবর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে কারাগার নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। আর ঠিক পরের দিনেই, লক্ষ লক্ষ বানর একসাথে আগ্রার লাল কেল্লা আক্রমণ করে, দুর্গটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়, দুর্গে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তারপর আকবর বীরবলকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কি হচ্ছে ?’
বীরবল বললেন – মহাশয়, যদি আপনি অলৌকিক ঘটনাটি দেখতে চান তবে তা দেখুন। আকবর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুলসীদাসকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন এবং শিকল খুলে দেওয়া হয়। তুলসীদাস বীরবলকে বলেছিলেন যে আমাকে কোনও অপরাধ ছাড়াই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কারাগারে ভগবান শ্রী রাম এবং হনুমানজির কথা মনে পড়ে গেল, আমি কাঁদছিলাম এবং আমার হাত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু লিখছিল, এই ৪০টি পংক্তি হনুমানজির অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যে ব্যক্তি খুব কষ্টে আছে এবং এই পাঠ করবে, তার সমস্ত ব্যথা এবং কষ্ট দূর হয়ে যাবে। এটি হনুমান চালিশা নামে পরিচিত হবে।
আকবর অত্যন্ত লজ্জিত বোধ করলেন এবং তুলসীদাসের কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং পূর্ণ সম্মান, সুরক্ষা এবং মহান পরিচারকদলের সাথে তাকে মথুরায় পাঠালেন। এজন্যই ভগবান বজরংবলীকে “সংকট মোচন”ও বলা হয়।।
পড়ুন হনুমান চালিশা :
জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর ।
জয় কপীশ তিহু লোক উজাগর ॥ ১ ॥
রামদূত অতুলিত বলধামা ।
অংজনি পুত্র পবনসুত নামা ॥ ২ ॥
মহাবীর বিক্রম বজরংগী ।
কুমতি নিবার সুমতি কে সংগী ॥ ৩ ॥
কংচন বরণ বিরাজ সুবেশা ।
কানন কুন্ডল কুঞ্চিত কেশা ॥ ৪ ॥
হাথবজ্র ঔ ধ্বজা বিরাজৈ ।
[ঔরু]কাংথে মূংজ জনেবূ সাজৈ ॥ ৫॥
শংকর সুবন কেসরী নন্দন ।
[শংকর স্বয়ং]তেজ প্রতাপ মহাজগ বন্দন ॥ ৬ ॥
বিদ্যাবান গুণী অতি চাতুর ।
রাম কাজ করিবে কো আতুর ॥ ৭ ॥
প্রভু চরিত্র সুনিবে কো রসিয়া ।
রামলখন সীতা মন বসিয়া ॥ ৮ ॥
সূক্ষ্ম রূপধরি সিযহি দিখাবা ।
বিকট রূপধরি লঙ্কা জলাবা ॥ ৯ ॥
ভীম রূপধরি অসুর সংহারে ।
রামচংদ্র কে কাজ সংবারে ॥ ১০ ॥
লায় সংজীবন লখন জিয়ায়ে ।
শ্রী রঘুবীর হরষি উরলায়ে ॥ ১১ ॥
রঘুপতি কীন্হী বহুত বড়ায়ী (ঈ) ।
তুম মম প্রিয় ভরত সম ভায়ী ॥ ১২ ॥
সহস্র বদন তুম্হরো যশগাবৈ ।
অস কহি শ্রীপতি কন্ঠ লগাবৈ ॥ ১৩ ॥
সনকাদিক ব্রহ্মাদি মুনীশা ।
নারদ শারদ সহিত অহীশা ॥ ১৪ ॥
যম কুবের দিগপাল জহাং তে ।
কবি কোবিদ কহি সকে কহাং তে ॥ ১৫ ॥
তুম উপকার সুগ্রীবহি কীন্হা ।
রাম মিলায় রাজপদ দীন্হা ॥ ১৬ ॥
তুম্হরো মংত্র বিভীষণ মানা।
লংকেশ্বর ভয়ে সব জগ জানা ॥ ১৭ ॥
যুগ সহস্র যোজন পর ভানূ ।
লীল্য়ো তাহি মধুর ফল জানূ ॥ ১৮ ॥
প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মাহী ।
জলধি লাংঘি গয়ে অচরজ নাহী ॥ ১৯ ॥
দুর্গম কাজ জগত কে জেতে ।
সুগম অনুগ্রহ তুম্হরে তেতে ॥ ২০ ॥
রাম দুআরে তুম রখবারে ।
হোত ন আজ্ঞা বিনু পৈসারে ॥ ২১ ॥
সব সুখ লহৈ তুম্হারী শরণা ।
তুম রক্ষক কাহূ কো ডর না ॥ ২২ ॥
আপন তেজ সম্হারো আপৈ ।
তীনোং লোক হাংক তে কাংপৈ ॥ ২৩ ॥
ভূত পিশাচ নিকট নহি আবৈ ।
মহবীর জব নাম সুনাবৈ ॥ ২৪ ॥
নাসৈ রোগ হরৈ সব পীরা ।
জপত নিরংতর হনুমত বীরা ॥ ২৫ ॥
সংকট সে হনুমান ছুডাবৈ ।
মন ক্রম বচন ধ্য়ান জো লাবৈ ॥ ২৬ ॥
সব পর রাম তপস্বী রাজা ।
তিনকে কাজ সকল তুম সাজা ॥ ২৭ ॥
ঔর মনোরথ জো কোয়ি লাবৈ ।
তাসু অমিত জীবন ফল পাবৈ ॥ ২৮ ॥
চারো যুগ প্রতাপ তুম্হারা ।
হৈ প্রসিদ্ধ জগত উজিয়ারা ॥ ২৯ ॥
সাধু সংত কে তুম রখবারে ।
অসুর নিকংদন রাম দুলারে ॥ ৩০ ॥
অষ্ঠসিদ্ধি নব নিধি কে দাতা ।
অস বর দীন্হ জানকী মাতা ॥ ৩১ ॥
রাম রসাযন তুম্হারে পাসা ।
সদা রহো রঘুপতি কে দাসা ॥ ৩২ ॥
তুম্হরে ভজন রামকো পাবৈ ।
জন্ম জন্ম কে দুখ বিসরাবৈ ॥ ৩৩ ॥
অংত কাল রঘুপতি পুরজায়ী ।
[রঘুবর]জহাং জন্ম হরিভক্ত কহায়ী ॥ ৩৪ ॥
ঔর দেবতা চিত্ত ন ধরয়ী ।
হনুমত সেয়ি সর্ব সুখ করয়ী ॥ ৩৫ ॥
সংকট ক(হ)টৈ মিটৈ সব পীরা।
জো সুমিরৈ হনুমত বল বীরা ॥ ৩৬ ॥
জৈ জৈ জৈ হনুমান গোসায়ী ।
কৃপা করহু গুরুদেব কী নায়ী ॥ ৩৭ ॥
যহ শত বার পাঠ কর কোয়ী ।
[জো]ছূটহি বংদি মহা সুখ হোয়ী ॥ ৩৮ ॥
জো যহ পডৈ হনুমান চালীসা ।
হোয় সিদ্ধি সাখী গৌরীশা ॥ ৩৯ ॥
তুলসীদাস সদা হরি চেরা ।
কীজৈ নাথ হৃদয় মহ ডেরা ॥ ৪০ ॥