প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৫ মার্চ : একদা গরুর গাড়ি’ই ছিল গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় যান।কিন্তু গতিময় যুগের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে গরুর গাড়ি এখন বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছে।তবে ছোট বেলায় গরুর গাড়িতে চড়ার কথা মনে পড়লেই যুবক জীবনানন্দ দে নস্টালজিক হয়ে পড়তেন।তাই নস্টালজিয়ার প্রকাশ তিনি দেখালেন তাঁর বিয়েতে। সুসজ্জিত গরুর গাড়িতে চেপে তিনি বিয়ে করতে গেলেন। আবার বিয়ে সরে নববধূকে নিয়ে একই গরুর গাড়িতে চেপে তিনি ফিরলেন নিজের বাড়িতে।পথে থাকা মানুষজন বর ও নব বধূকে গরুর গাড়িতে চেপে যেতে দেখে মুচকি হাসেন বটে। তবে সাবেকি যানকে এমন মাধুর্যে স্থান করে দেওয়ার জন্য তারা নবদম্পতির প্রশংসাও করেন।
দাম্পত্য জীবনে পা রাখা জীবনানন্দ দে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের ভেদিয়ার বাসিন্দা ।তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। আর স্কুল শিক্ষকের মেয়ে নিবেদিতা পড়াশোনার পাশাপাশি এখন বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে এখন ভাইরাল জীবনানন্দ ও নিবেদিতা। ভাইরাল হওয়ার কারণ অবশ্য তাঁদের বিয়ে।দামি গাড়িতে না চেপে গরুর গাড়িতে চেপে বিয়ে করতে যাওয়া এবং নববধূকে নিয়ে গরুর গাড়িতে চেপ নিজের বাড়িতে ফেরার ভাবনাই তাঁদের ভাইরাল করেছে।এমনকি নেটিজেনদের কাছে চর্চারও বিষয় হয়ে উঠেছেন বর ও কনের বেশে জীবনানন্দ এবং নিবেদিতার গরুর গাড়িতে যাত্রা।
পালকি অতীত হয়ে যাওয়ায় পর একটা সময় গ্রামবাংলায় গরুর গাড়ি ছিল যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম।কিন্তু এখন সেই অর্থে গ্রামে গরুর গাড়ির দেখা আর তেমন পাওয়া যায় না। চাষাবাদের কাজে গরুর গাড়ি ব্যবহারের সংখ্যাও একেবারে কমে গিয়েছে।একবিংশ শতাব্দী গতিময় যুগে চারচাকা বিলাসবহুল গাড়ির হয়ে উঠেছে গতির পরিচায়ক।এমন এক যুগে সাবেকি যান গরুর গাড়িতে চেপে বিয়ে করতে যাওয়া ও নববধূকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফেরার স্পর্ধা দেখানোটাই বড় ব্যাপার।সেই স্পর্ধা দেখিয়েই আউসগ্রামের ভেদিয়ার বর জীবনানন্দ দে ও আউসগ্রামের গোবিন্দপুরের কনে নিবেদিতা মাঝি নেটিজেন মহলে পপুলার হয়ে গিয়েছেন
বিয়ে করতে যাওয়ার জন্য গরুর গাড়িকে বেছে নেওয়ায় সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জীবনানন্দ দে বলেন, ’শৈশবের দাদু-ঠাকুরমার মুখে শুনেছি, একসময় গরুর গাড়িতেই বর বিয়ে করতে যেত । বিয়ে করে কনেকে গরুর গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে তখন বর নিজের বাড়িতে ফিরতো। এখন যুগ বদলালেও গ্রাম তো আর হারিয়ে যায় নি।তাই গ্রামের সাবেকি ঐতিহ্য কে সম্মান জানাতেই আমি গরুর গাড়িতে চেপে বিয়ে করতে গিয়েছি। গরুর গাড়িতে চেপেই বউকে নিয়ে আমার বাড়িতে ফিরেছি’। নববধূ নিবেদিতা মাঝি বলেন,“সাবেকি যানে চড়ে শ্বশুর বাড়িতে ফেরাটা একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা। শুভ কাজে সাবেকি ঐতিহ্যকে সঙ্গী করেনিতে পেরে আমারও খুব ভালই লেগেছে।’।