প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩১ জুলাই : কয়েক দিনের লাগাতার বর্ষণে জল বেড়েছে দামোদরে ।তার উপর ডিভিসির জলাধার থেকে জল ছাড়ায় দামোদর আরও ভয়াল রুপ নিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় দামোদর পারাপারে শনিবার লাগাম টানলো পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলার জামালপুর ব্লকের অমরপুর ,জ্যোৎদক্ষিন ও শম্ভুপুর ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষকে এদিন সন্ধ্যার পর ’খেয়া পারার’ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।দামোদরে জল কমলে তার পর আবার স্বাভাবিক নিয়মে চলবে খেয়া পারাপার । যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে ।
সেই বাম আমল থেকে দামোদরের উপর পাকা সেতু তৈরির দাবি করে আসছেন জামালপুরের
অমরপুর,শম্ভুপুর ও জ্যোৎদক্ষিণ এলাকার
বাসিন্দারা ।তাদের সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি । তাই বর্ষা আসলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এইসব এলাকার মানুষজনকে নৌকায় চড়েই ভরা দামোদর পারাপার করতে হয়। কোন অঘটন ঘটেগেলে শলিল সমাধি ঘটবে জেনেও বিকল্প পথ না থাকায় নৌকাতেই তারা দামোদর পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন । বাসিন্দারা চাইছেন ’অমরপুর’, ’শম্ভুপুর’ ’জ্যোৎদক্ষিণে’ দামোদরের উপরে পাকা সেতু নির্মাণের ব্যাপারে উদ্যোগী হোক রাজ্য সরকার ।
নিম্নচাপের জেরে বিগত কয়েকদিন নাগাড়ে বৃষ্টিপাত হয়ে চলেছে । তার উপর এদিন দফায় দফায় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকেও ছাড়া হয়ে জল । এর ফলে দামোদরে এখন জলস্তর অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে দামোদর ফুলে ফেঁপে ওঠায় প্লাবণের আশংকা তৈরি হয়।ডিভিসি জল ছাড়ায় দামোদরের জল বিপদ সীমা অতিক্রম করতে পারে এমনটা অাঁচ করে এদিন প্রশাসনের তরফে মাইকে প্রচার করা হয় । পরে বিকালে দামোদর তীরবর্তী গ্রামের মানুষজনের সার্বিক অবস্থা সরজোমিনে দেখতে জামালপুরে পৌছান মহকুমা শাসক ( বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল। ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার,বিধায়ক আলোক মাঝি ,পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খাঁন ও কর্মাধ্যক্ষ সঙ্গে নিয়ে তিনি দামোদর তীরবর্তী নিচু এলাকা ও ফেরিঘাট গুলি ঘুরে দেখেন। ভরা দামোদরে সন্ধ্যায় খেয়া পারাপারে বিপদের আশঙ্কা থাকায় মহকুমা শাসক এদিন সন্ধার পর নৌকায় যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ।
জামালপুরের অমরপুর ফেরিঘাট থেকে দামোদর পার হয়ে হুগলীর চাঁপাডাঙা পৌছানো যায় খুব সহজেই।এছাড়াও অমরপুর স্কুলের বহু ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা এবং দুই পাড়ের ১২-১৪ টি এলাকার বহু সাধারণ মানুষ সারাবছর অমরপুর ঘাট থেকে দামোদর পেরিয়ে গন্তব্যে যাতায়াত করেন।বর্ষাকাল বাদে অন্য সময়ে দামোদরের
উপরে থাকা অস্থায়ী কাঠের সেতু দিয়েই যাতায়াত করা যায় । সমস্যা বাাড়ে বর্ষায় কাঠের সেতু খুলে নেওয়া হলে। তখন নৌকাই একমাত্র ভরসা দামোদর পারাপারের । এই সময়ে চাপাডাঙা পৌছানোও খুব দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে । প্রায় ২০-২৫ কিমি পথ ঘুরে তবে চাপাডাঙা পৌছাতে হয় । কবে অনরপুরে দামোদরের বুকে পাকা সেতু তৈরি হবে তা কারুরই জানা নেই ।তাই অগত্যা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অমরপুর ফেরিঘাট থেকে নৌকায় চলছে যাত্রী পারাপার ।প্রশাসন সন্ধ্যায় খেয়া পারাপার বন্ধ রাখতে বলায় এখন বিপাকে পড়ে গিয়েছেন বাসিন্দারা ।
একই রকম ভাবে জামালপুরের শম্ভুপুর ও বর্ধমন ২ ব্লকের বড়শুল এলাকার মধ্যে সংযোগকারী দামোদরের উপরে পাকা সেতু তৈরির দাবিও দীর্ঘদিনের ।অমরপুর ঘাট থেকে শম্ভুপুর ফেরিঘাটের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিমি । শম্ভুপুর ঘাট পেরিয়ে রায়না, খণ্ডঘোষ সহ জামালপুরের সর্বত্র সহজেই পৌছানো যায় ।একই ভাবে এইসব এলাকার বাসিন্দারা শম্ভুপুর ঘাট পেরিয়ে বড়শুলে পৌছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠে শহর বর্ধমানে যেমন পৌছান, তেমনি দুর্গাপুর ও আসানসোলের পথেও যাতাযাত করতে পারেন ।বছরের অন্যান সময়ে এখানে বাঁশের মাচা দিয়ে তৈরি অস্থায়ী সেতু দিয়ে পারাপার চললেও সমস্যা তৈরি হয় বর্ষা কালে । তখন নৌকাই দামোদর পারাপারের একমাত্র ভরসা । দুর্ভোগ ও জলযন্ত্রণা বাড়ে তখনই।সেই দুর্ভোগ থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার জন্যে এতদ অঞ্চলের মানুষজনও দীর্ঘদিন ধরেই দামোদরের উপরে শম্ভুপুর ও বড়শুলের মধ্যে সংযোগকারী পাকা সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন । একই দাবি নিয়ে স্বোচ্চার রয়েছেন জ্যোৎদক্ষিণ এলাকার বাসিন্দারাও ।
জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহেমুদ খাঁন ও বিধায়ক অলোক মাঝি জানিয়েছেন, অমরপুর এলাকায় দামোদরের উপরে পাকা সেতু তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের । বিষয়টি রাজ্য সরকারের কাছেও জানানো রয়েছে । প্রত্যাশা রয়েছে সরকার এই বিষয়ে নিশ্চই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।তবে দামোদরে জল বাড়ছে বলে জনস্বারর্থে এদিন সন্ধ্যার পর অমরপুর,শম্ভুপুর ও জ্যোতদক্ষিণ ঘাট দিয়ে খেয়াপারাপার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে । বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানিয়েছেন, রবিবার দামোদরে জলের অবস্থা পর্যালোচনা করে খেয়া পারাপারের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।।