সেই সময় সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না । সংবাদমাধ্যমও কম ছিল । আর যে গুটিকয়েক সংবাদপত্র ছিল সেগুলি ছিল শাসকদলের তাঁবেদার । তাই অনেক কিছু ঘটনাই তখন সাধারণ মানুষ জানতেই পারতেন না । আজ আপনাদের এমন কিছু গল্প বলবো যা পড়ে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন যে রাজীব গান্ধীর মতো মানুষও এত বড় দেশের প্রধানমন্ত্রী কি করে হন ? তার একমাত্র যোগ্যতা ছিল যে তিনি ফিরোজ খান-ইন্দিরা নেহেরুর ছেলে…নেহরুর নাতি । জানুন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর কিছু অজানা কাহিনী :-
রাজীব গান্ধী পড়াশোনায় ভালো ছিলেন না। ৫ তারকা দুন স্কুল থেকে পড়াশোনা করার পর, ১৯৬১ সালে তাকে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ কেমব্রিজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য পাঠানো হয়। এখানেই রাজীব এডভিজ আন্তোনিও আলবিনা মাইনোর সংস্পর্শে আসেন, যিনি সোনিয়া গান্ধী নামে বেশি পরিচিত, যিনি একটি ছোট রেস্তোরাঁয় ওয়েট্রেস হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত,রাজীব গান্ধী আনন্দ-উল্লাসে ডুবে ছিলেন, যেকারনে একটার পর একটা পরীক্ষায় ফেল করতে থাকেন এবং পাশ করতে পারেননি, যার পরে কলেজ রাজীবকে বহিষ্কার করে। তারপর রাজীব ১৯৬৬ সালে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন, কিন্তু সেখানেও ফেল করেন।
একই বছর, রাজীবের মা ইন্দিরা প্রধানমন্ত্রী হন এবং রাজীব ভারতে আসেন, ১৯৬৬ সালে দিল্লি ফ্লাইং ক্লাবে যোগ দেন এবং বিমান চালানো শেখেন…
১৯৭০ সালে, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সরকারি বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াতে রাজীবের জন্য বাণিজ্যিক পাইলট হিসেবে চাকরির ব্যবস্থা করেন। ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর লজিস্টিক সহায়তার জন্য পাইলটের প্রয়োজন ছিল এবং এয়ার ইন্ডিয়ার বাণিজ্যিক পাইলটদের বিমানে রসদ ও অস্ত্র নামানোর জন্য ডাকা হয়েছিল। সকল পাইলট তৎক্ষণাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করতে এসেছিলেন, কেবল একজন ছাড়া আর তিনি ছিলেন রাজীব গান্ধী। যিনি ভয়ে সোনিয়া গান্ধীর সাথে ইতালীয় দূতাবাসে গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন,পরবর্তী ৮ বছর ধরে, রাজীবের ভাই সঞ্জীব তাকে বিলাসবহুল জীবনের সকল উপকরণ সরবরাহ করেছিলেন এবং নিজে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং নিজের দখল মজবুত করে চলেছিলেন।
সঞ্জীবের আধিপত্য শেষ হওয়ার পর ১৯৮০ সালে রাজীব রাজনীতিতে প্রবেশ করেন । এরপর ১৯৮৪ সালে, ইন্দিরা গান্ধীকে তার দেহরক্ষীরা গুলি করে হত্যা করে। রাজীব গান্ধী আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে শোকে সময়েও এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে, একই দিনের সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এবং তিনি কংগ্রেসকে শিখদের গণহত্যা করার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ । কংগ্রেস স্কুলের রেজিস্টার এবং ভোটার তালিকা বের করে, শিখদের বাড়িঘর তল্লাশি করে এবং ঘরে ঘরে ঢুকে হাজার হাজার শিখকে হত্যা করে।
সেই হিংসায় অনেক নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছিল ।
অনেক গর্ভবতী নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল বলে দাবি করা হয় । কংগ্রেস নেতাদের মালিকানাধীন পেট্রোল পাম্পগুলি শিখদের তাদের সন্তানদের এবং তাদের সম্পত্তি পোড়ানোর জন্য জ্বালানি সরবরাহ করত। রাস্তায় হাঁটতে থাকা শিখদের গলায় টায়ার বেঁধে পুড়িয়ে মারা হত।এমনকি রাষ্ট্রপতি জৈল সিংও রেহাই পাননি এবং গাড়িতে থাকাকালীন কংগ্রেস সদস্যরা তাঁর উপরও আক্রমণ চালায়,গাড়ির কাচ ভেঙে দেয় । কংগ্রেসের হিংসা দিল্লিতে শুরু হয়েছিল এবং শীঘ্রই তা দেশের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ে। আর রাজীব গান্ধী সারা দেশে প্রায় ৩৫,০০০ নিরীহ শিখকে হত্যা করে ইন্দিরার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেন।পরে রাজীব গান্ধী “যখন একটি বড় গাছ পড়ে যায়, তখন পৃথিবী কেঁপে ওঠে” বলে মন্তব্য করে এই হিংসার ন্যায্যতা দিয়েছিলেন।
পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং জনগণ রাজীবের দ্বারা পরিচালিত শিখ গণহত্যার কোনও গুরুত্ব না দিয়ে, ইন্দিরার প্রতি সহানুভূতির নামে ৪১১টি আসন দিয়ে রাজীবকে অপরিসীম ক্ষমতা দিয়েছিল। আর রাজীব সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে স্বৈরাচারীভাবে অপব্যবহার করেছেন ! ১৯৮৫ সালে, শাহ বানোকে ন্যায়বিচার প্রদানের মাধ্যমে, সুপ্রিম কোর্ট মুসলিম মহিলাদের জন্য তিন তালাক এড়াতে এবং ভরণপোষণ ভাতা পাওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল, কিন্তু রাজীব তার উপরেও কুঠারাঘাত করেন এবং অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার করে, মুসলিম তোষণের একটি নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছিল ৷ সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিল করে, মুসলিম মহিলাদের আবার দাসত্বে বন্দী করা হয়েছিল।
ইতিমধ্যে ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি ঘটে। রাজীব আমেরিকান সরকারের সাথে একটি চুক্তি করেন এবং ইউনিয়ন কার্বাইডের মালিক ওয়ারেন অ্যান্ডারসনকে, যিনি হাজার হাজার নিরীহ মানুষের হত্যাকারী ছিলেন, নিরাপদে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেন। বিনিময়ে রাজীবের মা ইন্দিরার প্রেমিক ইউনুস খানের ছেলে আদিল শাহরিয়াকে আমেরিকার কারাগার থেকে মুক্ত করে আনেন । রাজীব ৩০,০০০ নিরীহ ভারতীয়ের খুনি অ্যান্ডারসনকে আমেরিকায় ফেরত পাঠান। আর আদিল শাহরিয়ারকে মুক্ত করে ভারতে নিয়ে আসে ।
যদিও দাবি করা হয় যে সঞ্জীব গান্ধী ওরফে সঞ্জয় গান্ধী ছিলেন ইউনুস খানের ছেলে । তবে সত্যটা কি তা ভগবানই জানেন ।
রাজীবের বৈশ্বিক কূটনীতি বা সামরিক শক্তির যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা ছিল না, তাই রাজীব গান্ধী তার সীমিত বিচক্ষণতার কারণে শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই-এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভারতীয় বাহিনীকে জোরপূর্বক পাঠান এবং ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনীর ১৪০০ সৈন্য নিহত এবং ৩০০০ সৈন্য আহত হয়। যদিও পরে রাজীবকে থুতু ফেলতে হয়েছিল এবং নিজের থুতু চাটতে হয়েছিল৷ ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল সৈন্যদের ।তার বোকামির কারণে, শ্রীলঙ্কা সফরের সময় রাজীবকে শ্রীলঙ্কার সৈন্যরা তাকে প্রাণে মারার চেষ্টা করে। তিনিই প্রথম এবং একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যাকে বিদেশের মাটিতে একজন বিদেশী সৈন্য লাথি মেরেছিল ।
১৯৮৯ সালে বোফর্স কেলেঙ্কারি উন্মোচিত হয়।যেখানে প্রকাশ পায় যে রাজীব গান্ধীর সোনিয়ার খুব “ঘনিষ্ঠ বন্ধু” ছিল, যাকে সোনিয়া ইতালি থেকে যৌতুক হিসেবে এনেছিলেন এবং যিনি সোনিয়া রাজীবের বাড়িতে থাকতেন। রাজীব বোফর্স চুক্তিতে কমিশন নিয়েছিলেন সেই ওটাভিও কোয়াত্রোচ্চির কাছ থেকে, রাজনৈতিক নাটক করার ক্ষেত্রে রাজীব কারোর চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন না।
টিভি সিরিয়াল রামায়ণে রামের ভূমিকায় অভিনয় করা অরুণ গোভিলকে নিয়ে রাজনৈতিক সফর শুরু হয়েছে। হিন্দুদের বোকা বানানো এবং তাদের ভোট পেতে তাদের বিশ্বাস ব্যবহার করতে বাধ্য করা,১৯৯১ সালে, সুইস ম্যাগাজিন “Schweizer Illustrierte” কালো টাকার মালিকদের নাম প্রকাশ করে যাদের অবৈধ অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা ছিল।আর রাজীব গান্ধীর নামও সেখানে ছিল… ম্যাগাজিনটি প্রকাশ করেছে যে রাজীব গান্ধীর একটি সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২.৫ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক লুকিয়ে রেখেছেন । ১৯৯২ সালে, টাইমস অফ ইন্ডিয়া এবং দ্য হিন্দু রিপোর্ট করেছিল যে রাজীব গান্ধী সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি থেকে ক্রমাগত অর্থায়ন পেতেন,আর রাশিয়াও এই খবর নিশ্চিত করেছে এবং স্পষ্ট করেছে যে এই অর্থ সোভিয়েত মতাদর্শের স্বার্থ রক্ষার জন্য দেওয়া হচ্ছে,১৯৯৪ সালে, ইয়েভজেনিয়া অ্যালবাটস এবং ক্যাথেরিন ফিটজপ্যাট্রিক কেজিবি প্রধান ভিক্টর চেব্রিকভের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি উপস্থাপন করেন, যেখানে প্রকাশ করা হয় যে রাজীবের মৃত্যুর পর কেজিবি রাজীবের পরিবার, সোনিয়া এবং রাহুলকে অর্থ সরবরাহ করেছিল, আর কেজিবি গান্ধী পরিবারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে ।
এখন যদি আপনারা সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে রাজীব ছিলেন একজন কম শিক্ষিত ব্যক্তি এবং তার বুদ্ধিমত্তাও ছিল নিহত ৩৫০০০ নিরীহ শিখদের গড় ব্যক্তির চেয়ে কম। ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় ৩০,০০০ নিরীহ মানুষের হত্যাকারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, মুসলিমরা নারীদের জীবনকে নরক বানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা চুক্তিতে কমিশন নিয়েছেন, নিজে কেজিবির মতো একটি সংস্থার এজেন্ট ছিলে এবং সেখান থেকে টাকা নিতেন বলে অভিযোগ ওঠে । কূটনীতি সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না। আর তার অদুরদর্শীতার জন্য শ্রীলঙ্কায় ১৪০০ ভারতীয় সৈন্যকে মৃত্যু বরন করতে হয়েছিল এবং দেশের নাম কলঙ্কিত করা হয়েছিল । এতকিছু নেতিবাচক দিক থাকার পরেও মায়ের মৃত্যুর পর সহানুভূতির বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আনা রাজীব গান্ধী দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কতটা যোগ্য ছিলেন সেটা জানার প্রয়োজনও বোধ করেনি ভারতীয়রা । কারন একটা নির্দিষ্ট পরিবারের প্রতি ভারতীয়দের কথিত “আবেগ” । আর যার বারে বারে সুবিধা নিয়েছে বিদেশী শক্তিগুলি ।।